বীরভূম: জোর যার জমি তার। এটাই যেন অলিখিত সত্যি বীরভূমে। কখনও বৃদ্ধাশ্রম হয়ে যায় রিসর্ট, আবার কখনও লুঠ হয় আদিবাসীদের জমি। বেনিয়মের বীরভূমে এবার কি ছাড় পেল না ভারত সেবশ্রম সঙ্ঘও? এবারও একটাই নাম অনুব্রত মণ্ডল। আবারও সিবিআই র্যাডারে কোটি টাকার জমি।
গত কয়েক সপ্তাহে কী কী উঠে আসছে শান্তিনিকেতনকে অশান্ত করে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। দুর্নীতির স্রোতে নতুন সংযোজন ভারত সেবশ্রম সঙ্ঘের একটি জমি বিক্রি সংক্রান্ত বিষয়। অনুব্রত ছোঁয়া থেকে কি তবে ছাড় পেল না ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘও?
সুরুলের ১.৪ একরের একটি জমি এখন সিবিআই-এর স্ক্যানারে। ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের এই জমির কেনাবেচাকে কেন্দ্র করে সিবিআই-এর হাতে জোরাল তথ্য এসেছে। তাতে জড়িয়ে গেছে বীরভূমের বেতাজ বাদশা অনুব্রত মণ্ডলের নাম।
তথ্য বলছে, বাজার দরের চার ভাগের একভাগ টাকায় জমিটি হস্তগত করেছে অনুব্রতর মেয়ে সুকন্যার কোম্পানি। তথ্য তালাশে জানা গিয়েছে, এই ১.৪ একর জমির মালিক ছিলেন একজন অবসরপ্রাপ্ত মেরিন ইঞ্জিনিয়ার, নাম সুচিন্ত কুমার চট্টোপাধ্যায়। বাবা মায়ের স্মৃতিতে একটি প্রযুক্তিবিদ্যার প্রতিষ্ঠান বানানোর জন্য এই জমি তিনি দান করেছিলেন ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘকে।
সুরুলের এই জমি বিক্রি করে সেই টাকায় নাকি মুলুকে ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের ক্যাম্পাসে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি তৈরির সিদ্ধান্ত হয়। এখানেই প্রশ্ন। সিদ্ধান্ত নাকি কেষ্টর কারসাজি? কারণ সিবিআই ও ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ সূত্রে যে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে,
স্থানীয় কয়েকজন যুবক ও এক আইনজীবী এই জমি বিক্রি নিয়ে ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ কর্তৃপক্ষর সঙ্গে যোগাযোগ করে। অনুব্রতর মেয়েকে জমি বিক্রি করতে বলা হয়। ১ কোটি ৬০ লক্ষ টাকায় বিক্রি হয় জমি ২০২১ সালে। ১৫টি কিস্তিতে জমির দাম মেটায় অনুব্রত কন্যার কোম্পানি।
সেবাশ্রমের মহারাজ এড়িয়েছেন জমি বিক্রিতে ভয় দেখানো বা চাপের প্রসঙ্গ। শান্তি মহারাজ এই নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
কিন্তু একটা প্রশ্ন, চাপ না থাকলে বাজার দরের চারভাগের একভাগ দামে কেন বিক্রি করা হয়েছিল জমি? তথ্য বলছে জমি বিক্রির ডিডে অনুব্রত মণ্ডলের কন্যা সুকন্যার সই ছিল না। সই ছিল কোম্পানির আর এক ডিরেক্টর বিদ্যুত্বরণ গায়েনের।
গোটা প্রক্রিয়ায় প্রশ্নে উঠেছে। এত কম দামে কেন বিক্রি হল জমি? চাপের মুখে পড়েই জমি বিক্রি? কারা যুক্ত জমি কেনাবেচার লিঙ্কম্যান হিসেবে? কারা সুকন্যার কোম্পানিকে জমি বিক্রির সুপারিশ করতে গিয়েছিলেন? যারা সুপারিশ করতে গিয়েছিলেন তাদের সঙ্গে অনুব্রতর সম্পর্ক কি? জমি কেনার টাকা কোথা থেকে এল?
সরকারের প্রাপ্য স্ট্যাম্প ডিউটি ফাঁকি দেওয়া হয়েছে?
সূত্র বলছে, অনুব্রত নিজে কোনও দিনও এই আশ্রমে আসেননি। কীভাবে হস্তান্তরিত,সেটাই তথ্য তালাশে তদন্তকারীরা।