বোলপুর: দুবরাজপুরের তৃণমূল নেতা শিবঠাকুর মণ্ডলকে গলা টিপে খুনের চেষ্টার অভিযোগে বীরভূমের বেতাজ বাদশা অনুব্রত মণ্ডল আপাতত পুলিশ হেফাজতে। কিন্তু প্রশ্ন দুবরাজপুর কাণ্ডে কবে এফআইআর দায়ের হয়েছিল? কী বলছেন তৃণমূল নেতা তথা আইনজীবী মলয় মুখোপাধ্যায়? অভিযোগকারী শিবঠাকুর মণ্ডলই বা কী বলছেন? TV9 বাংলাকে এফআইআর-এর সময় নিয়েই ভিন্ন তথ্য দিলেন দু’জন। তৈরি হল ধোঁয়াশা।
(ধন্দ-১)
তৃণমূল নেতা তথা আইনজীবী মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, “ডেটটা বলতে পারছি না, খুব সম্ভবত সাত মাসের ঘটনা। খুব সম্ভবত সাত মাসে হয়েছিল। ধরুন এটা ১২ মাস, সাত মাসে হয়েছে।” তিনি স্পষ্ট করেও কোনও তারিখ উল্লেখ করেননি। দুবরাজপুর আদালতে পেশ করার সময় অনুব্রত মণ্ডলের আইনজীবী রাজেন্দ্র দেও এফআইআর তারিখ নিয়ে প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়েছেন।
অভিযোগকারী শিবঠাকুর মণ্ডল বলছেন, “আমি কালকে অভিযোগ করেছি। অনুব্রত মণ্ডলের নামে কেস করতে যাওয়া তো একটা কঠিন ব্যাপার। আমি সুযোগ পেলাম, এখন যেহেতু জেলে রয়েছে, তাই কেসটা করলাম। ” তিনি দাবি করেছেন সোমবার সকাল ১০টা নাগাদ অভিযোগ দায়ের করেছেন থানায়। TV9 বাংলার হাতে এফআইআর-এর যে কপি এসেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে ১৯.১২.২০২২ তারিখ সকাল ১১.৪০ মিনিটে তিনি এফআইআর করেছিলেন।
ওয়াকিবহালের একাংশের মতে, আইনজীবী ও অভিযোগকারীর বয়ানে ধন্দ তৈরি হয়েছে। অনুব্রতর বিরুদ্ধে এফআইআর কবে দায়ের হয়েছে, তার সময় নিয়েই ধোঁয়াশা। অথচ এই একটা এফআইআর-এর কাঁটায় কেষ্টকে দিল্লিতে নিয়ে যেতে পারলেন না ইডি আধিকারিকরা।
(ধন্দ ২)
ঘটনাটা দেড় বছর আগের, কিন্তু এতদিন পর কেন এফআইআর? শিবঠাকুরের বক্তব্য, “আমি তো নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এখনও ভয়ে আছি, এত বড় একজন লোক। আমার ঘরে দুটো বাচ্চা রয়েছে। এখন গ্রেফতার হয়েছে, তাই অভিযোগ করলাম।” প্রশ্ন তাতেও, অনুব্রত তো গ্রেফতার হয়েছেন ১১ অগস্ট, তাহলে এফআইআর দায়ের করতে এত সময় কেন?
(ধন্দ ৩)
শিবঠাকুরের কথা অনুযায়ী, দুবরাজপুরের দলীয় কার্যালয়ের ভিতর যেদিন অনুব্রত মণ্ডল তাঁর গলা টিপে ধরেছিলেন, সেদিন উপস্থিত ছিলেন একজন নিরাপত্তারক্ষী। কিন্তু এফআইআর নাম নেই তাঁর। কিন্তু কেন? শিবঠাকুরের কথায়, তিনি জানতেন না তাঁর নাম। এলাকার বেতাজ বাদশা, যাঁর নামে কিনা বীরভূমে একসময়ে বাঘ-গরুতে এক ঘাটে জল খায়, অন্তত সেখানকার মানুষ তাই বলে, তাঁরই নামে খুনের চেষ্টার অভিযোগ… অথচ এই ঘটনার একমাত্র সাক্ষী সেই নিরাপত্তারক্ষী। প্রশ্ন উঠছে, পুলিশের কাছে যখন অনুব্রতর বিরুদ্ধে এফআইআর করলেন, তখন প্রমাণ হিসাবে তাঁর নাম দেওয়াটা উচিত ছিল বলে ওয়াকিবহাল মহলের মত।
(ধন্দ ৪)
অনুব্রতর সঙ্গে সেদিন দলীয় কার্যালয়ে নিরাপত্তারক্ষী হিসাবে কে ছিলেন? রাজ্যের পুলিশ? এই প্রশ্নে শিবঠাকুর প্রথমে বলেন, “পুলিশের ড্রেস পরাই ছিল।” খানিক বাদেই বলেন, “এখন ড্রেসটা যে কার, সেটা কীভাবে বলব? পুলিশের মতো ড্রেসটা পরেছিল।” তাহলে প্রশ্ন, আদৌ সেদিন নিরাপত্তারক্ষী হিসাবে কে ছিলেন অনুব্রতর সঙ্গে? ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে শিবঠাকুরের কথায়।
(ধন্দ ৫)
ঘটনার দিন দলীয় কার্যালয়ের বাইরে বেশ কয়েকজন সমর্থক ছিলেন। তাঁর কথা মতো, অনুব্রত যখন গলা টিপে ধরেছিলেন, তখন সমর্থকরা বাইরে থেকে কিছুই টের পাননি। এমনকি তাঁদেরও কিছু বলেননি শিবঠাকুর। সোজা বাড়ি চলে এসেছিলেন। ঘটনার এতদিন পর থানায় গেলেন এফআইআর করতে।
(ধন্দ ৬)
অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে শিবঠাকুর যে খুনের চেষ্টার অভিযোগ তুলছেন কিন্তু তাঁর কাছে তথ্য প্রমাণ বলতে স্রেফ মুখের কথাই। আর তাঁর মুখের কথাতেই অনুব্রত মণ্ডলের মতো একজন হেভিওয়েট নেতার বিরুদ্ধে এফআইআর-ও নিয়ে নিল পুলিশ? শিবঠাকুর মণ্ডল অবশ্য নিজেই বলছেন, “পুলিশ প্রথমে অভিযোগ নিতে চায়নি। বুঝতেই পারছেন এত বড় মাপের একজন নেতা… তবে আমি পুলিশকে বলি এফআইআর না নিলে সাংবাদিক বৈঠক করে সবাইকে বলব, তারপরই এফআইআর নিয়ে নেয়।”প্রশ্ন হচ্ছে, শিবঠাকুরের মতো একজন সাধারণ তৃণমূল কর্মী, যার বর্তমানে কোনও পদ নেই দলে, (তাঁর কথায় দলে না থাকার মতোই আছি) তাঁর ‘সাংবাদিক বৈঠক’করার হুঁশিয়ারির পরই পুলিশ এফআইআর নিয়ে নিল? আবার গ্রেফতারও করে নিল? যে সাংবাদিক বৈঠকটা আগেও করা যেতে পারত। কাকতালীয় ভাবে অনুব্রতকে দিল্লি নিয়ে যাওয়ার দিনে শিবঠাকুর এত সাহস কীভাবে সঞ্চয় করলেন? এ সব প্রশ্নের উত্তরে শিবঠাকুর বলেন, “আমি এখন এখানেই শেষ করছি…অনেক ধন্যবাদ।”