বীরভূম: নিজেদের বাড়ি ফিরছেন বগটুইকাণ্ডের অন্যতম সাক্ষী মিহিলাল। ঘটনার পর আতঙ্কে গ্রাম ছেড়েছিলেন মিহিলাল ও শেখলাল। সঙ্গে ছিলেন তাঁর পরিবারের কয়েকজন সদস্য। বগটুইয়ের নারকীয় কাণ্ডে মৃত্যু হয়েছে মিহিলালের পরিবারের ৭ জন সদস্যের। মৃত্যু হয়েছে শেখলালের স্ত্রী নাজিমা বিবি ও মায়ের। বুধবার সকালেই মিহিলাল এবং খুড়তুতো ভাই বানিরুল শেখ ফিরলেন কুমুরদা গ্রামে। শেখলালের মেয়ের বাড়িতে আপাতত থাকবেন তাঁরা। এই বাড়িতে থেকে তাঁরা নিজেদের পোড়া বাড়ি মেরামতি করবেন। প্রশাসনের তরফে দেওয়া নিরাপত্তায় খুশি তাঁরা। সিবিআই তদন্তের অগ্রগতিতে খুশি। মঙ্গলবারই সিবিআই-এর জেরার মুখোমুখি হয়েছিলেন মিহিলাল। নিমরাজি থেকেও পরে সিবিআই-এর অস্থায়ী ক্যাম্পে যান তিনি। তারপর তাঁকে জেরা করা হয়। জেরা করা হয় শেখলালকেও।
সেই রাতের গোটা ঘটনার অন্যতম সাক্ষী মিহিলাল। তাঁর পরিবারের ৭ সদস্যের ওপর চলেছিল নির্মম অত্যাচার। সেদিন পরিবারকে ফেলে পালিয়েছিলেন তিনি। বাতাসপুরে আত্মগোপন করেছিলেন। ঘটনার পর দিনও প্রকাশ্যে আসেননি। এরপর গোটা বাংলার সংবাদমাধ্যম, জনপ্রতিনিধিরা যখন বগটুইয়ে ভিড় জমিয়েছেন, তখন প্রকাশ্যে আসার সাহস পেয়েছিলেন মিহিলাল। প্রকাশ্যে এসেই বিস্ফোরক অভিযোগ করেন তিনি। আনারুল শেখ, এলাকার ব্লক তৃণমূল সভাপতি, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে প্রথমে দেখা করতে চাননি তিনি। পরে নিমরাজি হয়েও দেখা করেন। আনারুলের নাম নেন মুখ্যমন্ত্রীর সামনে। অতঃপর আনারুলে গ্রেফতারি। এরপর সিবিআই ক্যাম্পে যাওয়া নিয়েও অনেক ধন্দ তৈরি করেন। পরে অবশ্য সেটাও যান। আনারুলকে নিরাপত্তা দিয়েছে প্রশাসন। ফের ঘরের ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি।
এদিকে, এই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত আনারুলের দুই প্রধান সাগরেদকে হন্যে হয়ে খোঁজ করছে সিবিআই। লালন ও জাহাঙ্গির নামে দুই অভিযুক্তের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে পড়শি জেলা ও রাজ্যে। সিটের তদন্তে উঠে এসেছে এই দুই জনের নাম। আনারুল তদন্তকারীদের কাছে এই দুজনের নাম করেছেন। পাশাপাশি অভিযুক্তদের বাড়িতেও তল্লাশি চালাচ্ছেন তদন্তকারীরা। এদিকে, বগটুইকাণ্ডে দমকলের দুই অফিসারকে সিবিআই ক্যাম্পে তলব করা হয়েছে। ঘটনার রাতে বগটুইয়ের সেই অভিশপ্ত বাড়িতে আগুন নেভাতে গিয়েছিলেন তাঁরা। অকুস্থলে পৌঁছেই ঠিক কী দেখেছিলেন? কখন পৌঁছেছিলেন? আগুন নেভাতে কেউ বাধা দিয়েছিল কিনা? সে সবই তথ্য পেতে চাইছেন তদন্তকারীরা। তাঁদের বয়ান রেকর্ড করা হবে বলে জানা গিয়েছে।
বগটুই কাণ্ডে মঙ্গলবারই রামপুরহাট থানার আইসিকে সিবিআই তদন্তকারীরা তলব করেন। তাঁর ভূমিকা নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠেছে। ঘটনা যে ঘটতে পারে, তা নাকি আগেই আঁচ করেছিলেন তিনি। তবুও কেন কোনও পদক্ষেপ করেননি? তিনি কি কারোর নির্দেশে কাজ করেছিলেন? জানতে চান তদন্তকারীরা। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বগটুই গিয়ে তাঁর ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন খোদ এসডিপিও-র ভূমিকা নিয়েও। তাঁকেও বদলি করে দেওয়া হয়েছে।