বীরভূম: মাথাটা তখনও ঝিমঝিম করছিল। চোখ ঘোলাটে। একটা ঘুম ঘুম ভাব। বছর সতেরোর মেয়েটা যখন চোখ খুলেছে, তখন কিছুই বুঝতে পারছিল না সে। কোথায় আছে, কীভাবে এসেছে, শুধু দূরে হাওড়া ব্রিজটা দেখতে পেয়েছিল। তখনই বিপদ আঁচ করে। কোনওমতে রাস্তা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে দৌড়তে থাকে সে। ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড়। সামনে পায় এক ‘পুলিশকাকুকে’। ভাঙা ভাঙা ভাবে সবটা খুলে বলে সে। কী হয়েছিল তার সঙ্গে। সেই ‘পুলিশকাকু’র সৌজন্যেই বীরভূমের মেয়ে ফিরল হাওড়া থেকে। বাঁচল ‘অপহরণকারী’দের হাত থেকে। মঙ্গলবার গোলাবাড়ি থানার পুলিশ এক কিশোরীকে উদ্ধার করে। তার বয়ানেই উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
কিশোরী পুলিশকে জানিয়েছে, তার বাড়ি বীরভূমের বোলপুরের পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের কালীমোহনপল্লি এলাকায়। সোমবার ওই কিশোরী তার বান্ধবীর বাড়ি নতুনপুকুর থেকে নিজের বাড়ি ফিরছিল। সেই সময় একটি গলিতে কয়েকজন তাকে একটি কাগজ দেখিয়ে ঠিকানা জানতে চান। সে কাগজ দেখতেই আচমকাই অচৈতন্য হয়ে পড়ে সে। ছাত্রীর বক্তব্য, হয়তো মাদক জাতীয় কিছুর গন্ধ শুকানো হয়েছিল তাকে। এরপর তার আর কিছুই মনে নেই।
কিশোরীর বক্তব্য, তার যখন হুঁশ ফেরে, তখন সে দেখতে পায় হাওড়া ব্রিজ লাগোয়া কোনও জায়গায় রয়েছে সে। একটি বসার জায়গায় বসে ছিল। দূর থেকে হাওড়া ব্রিজটিও দেখতে পায় কিশোরী। এরপরেই সে বুঝতে পারে অপহরণ চক্রের পাল্লায় পড়েছে।
কিশোরীর বক্তব্য, ওই এলাকা থেকে কোনওমতে উঠে দৌড়তে শুরু করে সে। আশপাশে কাউকে দেখতে পায়নি। এরপর এক ট্র্যাফিক পুলিশ আধিকারিককে গোটা বিষয়টি বলে। বাড়ির ঠিকানা জানায়। এরপরেই ওই পুলিশ কর্মী তাকে গোলাবাড়ি থানায় নিয়ে যায়। গোলাবাড়ি থানা থেকে ফোন আসে কিশোরীর পরিবারের কাছে। তারপর বাড়ির লোক এলে তাঁদের হাতে মেয়েকে তুলে দেওয়া হয়।
কিশোরীর পরিবারের বক্তব্য, “আমরা তো কিছুই বুঝতে পারছি না, কে নিয়ে গেল ওকে। কোনও ফোনও আসেনি মুক্তিপণ চেয়ে। কেইবা ওকে অপহরণ করবে? ঘরের মেয়ে যে ঘরে ফিরেছে এটাই অনেক।” কিশোরীর প্রাথমিক চিকিৎসা করানো হয়। তবে পরিবারের সদস্যরা বলছেন, তাঁদের মেয়ে এখনও ঘোরের মধ্যেই রয়েছে। সুস্থ হলে পরিবার থানার দ্বারস্থ হবে বলে জানিয়েছে।
স্থানীয় কাউন্সিলর তাপসী বাউড়ি বলেন, “আমরা বিষয়টি শুনেছি। বোলপুরের মতো এমন জায়গায় এই ঘটনা অবিশ্বাসযোগ্য। এই ঘটনা উদ্বেগজনক।” এই প্রসঙ্গে বীরভূম জেলা পুলিশ সুপার নগেন্দ্র ত্রিপাঠী বলেন, “বিষয়টি অভিযোগ জানানো হলে আমরা নিশ্চয়ই খতিয়ে দেখবো।”
অন্যদিকে, সহকারী কমিশনার অফ পুলিশ (উত্তর এক ) আব্দুল গফফর বলেন, “গোলাবাড়ি থানা ওই কিশোরীকে উদ্ধার করে বোলপুরের পরিবারকে জানায়। এরপর মেয়েটিকে বাবা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা থানায় এসে তাকে নিয়ে যায়।”