সিউড়ি: বীরভূমের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা অনুব্রত মণ্ডল (Anubrata Mondal)। সাংগঠনিক দক্ষতা তাঁর প্রশ্নাতীত। কিন্তু সেই অনুব্রত মণ্ডল এখন গরু পাচার মামলায় গ্রেফতার। জামিন এখনও মেলেনি। কেষ্টর গ্রেফতারির পর কীভাবে বীরভূমে সংগঠনকে মজবুত রাখা যায়, তা নিয়ে নীলনকশা তৈরি করেছে তৃণমূল। দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে। কিন্তু তারপরও এককাট্টা রাখা যাচ্ছে না দলীয় নেতা-কর্মীদের। এবার গন্ডগোল সিউড়ি পুরসভায় (Suri Municipality)। সেখানে তৃণমূল শাসিত পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান বিদ্যাসাগর সাউয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলছেন দলেরই অন্যান্য কাউন্সিলররা। অভিযোগ, ভাইস চেয়ারম্যান নাকি অবৈধভাবে প্ল্যান বানিয়ে সরকারি জায়গায় দোকান বানিয়ে বিক্রির চেষ্টা করছেন। এই নিয়ে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেও চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অভিযোগকারী কাউন্সিলররা।
বীরভূমের সিউড়ির ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের রবীন্দ্রপল্লী এলাকায় ডিস্ট্রিক্ট স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশনের মাঠে একটি মার্কেট কমপ্লেক্স তৈরি করা হচ্ছে। ৪২টি দোকানঘর তৈরি হচ্ছে। অভিষেকের কাছে পাঠানো চিঠিতে কাউন্সিলরদের অভিযোগ, প্রচুর টাকার বিনিময়ে সেই দোকানগুলি অগ্রিম বুকিং হয়ে গিয়েছে। কাউন্সিলরদের বক্তব্য, তাঁদের না জানিয়েই এই প্ল্যান পাস করানো হয়েছে। সেই সঙ্গে তাঁরা চিঠিতে এও লিখেছেন, ওই মাঠের সামনে এলাকার ৬০-৭০জন মানুষ ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করেন। এমন অবস্থায় কাউন্সিলরদের কথা হল, সেখানে যে গরিব মানুষরা ব্যবসা করেন, তাঁদের সঠিক পুনর্বাসন ব্যবস্থা না করেই উচ্ছেদের পক্ষপাতী তাঁরা নন। এই মর্মে অভিষেকের কাছে চিঠি লিখেছেন কাউন্সিলররা এবং বিষয়টি নিয়ে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। যদিও এই অভিযোগের বিষয় নিয়ে কাউন্সিলরদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁদের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, এই ডিস্ট্রিক্ট স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হলেন সিউড়ি পুরসভার বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান বিদ্যাসাগর সাউ।
কাউন্সিলরদের এই অভিযোগের বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হয়েছিল পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান বিদ্যাসাগর সাউয়ের সঙ্গেও। তিনি অবশ্য এখানে অবৈধ কিছু নেই বলেই দাবি করছেন। বলেন, “যেখানে প্ল্যান স্যাংশন হয়, সেটি অবৈধ কীভাবে হয়? এখন পুরসভার প্ল্যান স্যাংশন বোর্ড মিটিংয়ে হয় না। অনলাইনে হয় না। কেউ যদি অনলাইনে আবেদন করে, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পুরসভা তা ছাড়তে বাধ্য। নাহলে পুরসভাকে শোকজ় খেতে হবে। এটি অনলাইনে পাশ হয়েছে। তাহলে অবৈধ কীভাবে? তাঁদের বলতে হবে কোথায় ভুল হয়েছে। এটা নোংরামি হচ্ছে। তাঁদের স্বার্থসিদ্ধি হয়নি বলে অভিযোগ করছেন। আর ডিস্ট্রিক্ট স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশন একটি স্বশাসিত সংস্থা। এখানে কাউন্সিলরদের মতামতের দুই পয়সা দাম নেই। দলের কাউন্সিলর তো কী হয়েছে? তাঁরা হয়ত পড়াশুনো একটু কম জানেন।”
এদিকে পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে তৃণমূলেরই কাউন্সিলরদের এমন অভিযোগের ঘটনায় খোঁচা দিতে ছাড়ছে না বিজেপি শিবির। ঘটনাটি নিয়ে ইতিমধ্যেই সুর চড়াতে শুরু করেছে স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব। পদ্ম শিবিরের জেলার নেতা দীপক দাস জানাচ্ছেন, “যে কমার্শিয়াল কমপ্লেক্স তৈরি হচ্ছে সেটি সম্পূর্ণ অবৈধ। স্বশাসিত বোর্ড মানে যা খুশি তাই করা যায় না।”