বীরভূম: হাইকোর্টের (Calcutta High Court) নির্দেশে ১২ বছর পর ঘরে ফিরলেন লাভপুরের গৃহছাড়ারা। মঙ্গলবার গ্রামে ফেরেন শতাধিক মানুষ। সকাল থেকেই ছিল কড়া পুলিশি নিরাপত্তা। লাভপুর- বুনিডাঙা গ্রামে সকালেই এসে পৌঁছয় লাভপুর থানার ওসির নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী। দীর্ঘ ১২ বছর ধরে গ্রামছাড়া গ্রামের মানুষদের হাইকোর্টের নির্দেশে গ্রামে ফেরানো হয় এদিন। ২০১০ সালে গ্রাম্য বিবাদ নিয়ে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে নবগ্রাম এলাকা। সেই ঘটনার রেশ ধরে তিনজনকে পিটিয়ে মারা হয় বলেও অভিযোগ। একাধিক ব্যক্তির নামে দায়ের হয় মামলা। সেই সময় লাভপুরে যথেষ্ট দাপট ছিল মণিরুল ইসলামের। এই ঘটনায় অভিযোগ ওঠে, মণিরুলের ভয়েই গ্রাম থেকে পালান প্রায় ১০০ জন বাসিন্দা। জেলার এদিক ওদিক ঘুরে বেড়ান তাঁরা। কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের হয়। সেখানেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল ১৬ মে’র মধ্যে গ্রামে ফেরাতে হবে গ্রামছাড়াদের।
পুরুষ মহিলা মিলে প্রায় ১০০ জনের বেশি মানুষ এদিন গ্রামে ফেরেন। ঘরে ফিরে তাঁরা জানান, হাইকোর্টের হস্তক্ষেপে এতদিন পর নিজেদের ভিটেয় ফিরে দারুণ খুশি তাঁরা। একইসঙ্গে কিছুটা উষ্মা গলায়। তাঁদের অভিযোগ, আদালত নির্দেশ দেওয়ার পর সেই পুলিশই গ্রামে ফেরাল। অথচ এর আগে একাধিকবার পুলিশকে এ নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে বলা হলে কেউ এগিয়ে আসেনি।
কেউ কেউ অবশ্য পুরোপুরি আশঙ্কামুক্ত নন। ভয় পাচ্ছেন, আবার যদি হামলা হয়। তবে পুলিশ পাশে থাকলে যে তাঁরাও নির্বিঘ্নে ঘরে থাকতে পারবেন, সে কথাও মানছেন। এতদিন পর গ্রামে ফিরে এক বাসিন্দা জানান, “আমাদের ঘরের লোক মার্ডার। আমরাই গ্রামছাড়া। পুলিশ ঢোকায়নি। আজ ফিরলাম। খুব খুশি। আদালতের নির্দেশে পুলিশের ভরসাতেই ঘরে ফিরলাম।”
এদিন পুলিশের হাতে ছিল তালিকা। একে একে নাম ডাকে সুজল শেখ, আনাসা বিবি, ছোট্টু শেখ, মুসুর শেখ, জালিম শেখ, মালু বিবিদের। সাড়া আসতেই কাগজে টিক মার্ক। পুলিশকে ঘিরে উৎসুক মুখগুলো দাঁড়িয়ে। কখন নাম ডাকবে, কখন ‘আছি স্যর’ বলে ঘরে ঢুকবে তারা। এতগুলো বছর পর আজ আবার নিজের ভিটেমাটিতে ফেরা। কারও কারও চোখ ছলছল।