পূর্ব বর্ধমান: বেসরকারি হাসপাতালে ডিপ্লোমা ইন মেডিক্যাল ল্যাবরেটরি টেকনোলজি বা ডিএমএলটি (DMLT) কোর্স করছিলেন ১৯ বছরের এক ছাত্রী। অভিযোগ, কর্তৃপক্ষের অতিরিক্ত মানসিক চাপ ও ডিউটি ম্যানেজমেন্ট ইনচার্জের কুপ্রস্তাবে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছিল তাঁর জীবন। এরইমধ্যে শনিবার তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয় শক্তিগড়ের বাম এলাকায়। এখানেই বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকছিলেন বৃষ্টি বেরা নামে ওই ছাত্রী। তবে পরিবার এই ঘটনায় আত্মহত্যার তত্ত্ব নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছে। পরিবারের দাবি, বিকাল ৫টা সাড়ে ৫টা নাগাদ দেহটি উদ্ধার হয়। অথচ সে সময় মেয়ের ঘরের দরজা খোলা ছিল। তাঁদের সন্দেহ, এই সময়ে কেউ গলায় দড়ি দিলে, দরজা খুলে তা করবে কেন?
বাঁকুড়ার জয়রামবাটি এলাকায় বৃষ্টিদের বাড়ি। খবর পেয়ে ছুটে আসেন তাঁর বাবা। তিনি জানান, অত দূর থেকে যাতায়াত করা সম্ভব নয়। তাই মেয়ে বর্ধমানেই ঘর ভাড়া নিয়ে থাকত। আরও মেয়েরা থাকত সেখানে। বৃষ্টির বাবা শুভেন্দু বেরার কথায়, “আমার মেয়ে এই মাল্টি স্পেশালিটি হাসপাতালে ১ বছর ৪ মাস হল ডিএমএলটি কোর্স করছে। এরইমধ্যে শনিবার ওদের বাড়ির মালিক ও একজন রুমমেট ফোন করে আমাকে বলল কাকু তাড়াতাড়ি এসো, ও গলায় দড়ি দিয়েছে। এসে দেখি পুলিশ দেহ নিয়ে চলেও গিয়েছে।”
শুভেন্দুবাবুর কথায়, এর আগে বৃষ্টি বাড়িতে বেশ কয়েকবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মানসিক চাপের কথা জানিয়েছিলেন। কিন্তু তার পরিণতি যে এতটা মারাত্মক হতে পারে, তা ভাবেননি। বৃষ্টির বাবা জানান, বৃষ্টির ঝুলন্ত দেহ যে ঘর থেকে উদ্ধার হয়, সেই ঘরের দরজার ছিটকানি খোলা ছিল। এখানে রহস্যের গন্ধ পাচ্ছে পরিবার।
সন্দীপ সামন্ত নামে তাঁদের এক আত্মীয় বলেন, “দেড় বছর ধরে এই হাসপাতালে নার্সিং ট্রেনিং নিচ্ছিল মেয়েটা। গতকাল শুনতে পাই আত্মহত্যা করেছে। বাবার মুখে শুনলাম ডাক্তাররা নাকি এখানে কুইঙ্গিত করতেন। সেটা কারণ হতে পারে। আবার কারও সঙ্গে ওর কোনও সম্পর্ক ছিল কি না সেটাও দেখা দরকার। আরও একটা বিষয় আছে। ও বিকালের দিকে আত্মহত্যা করেছে বলা হচ্ছে। কিন্তু ওই সময়ে কেউ যদি আত্মঘাতী হয় তাহলে দরজা খুলে কি নিজেকে মারবে? কেউ মেরে ঝুলিয়ে দিল কি না সেটাও দেখা দরকার।”
তবে ওই বেসরকারি হাসপাতালের অপারেশন ম্যানেজার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “মেয়েটাকে যতদূর দেখেছি, খুবই ভাল, শান্তশিষ্ট। যা ঘটেছে খুবই দুঃখজনক। পুলিশ তদন্ত করছে, দেখা যাক। এখানে স্টুডেন্ট ছিলেন উনি। তবে অন্য কোনও ঘটনার কথা এভাবে বলা সম্ভব নয়। কারণ, সব মেয়েরাই তো একসঙ্গে কাজ করেন।”
ইতিমধ্যেই সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, ডিউটি ম্যানেজমেন্ট ইনচার্জের বিরুদ্ধে শক্তিগড় থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন শুভেন্দু বেরা। পাশাপাশি, সিআইডি, মহিলা কমিশন-সহ একাধিক জায়গায় অভিযোগও জানিয়েছে পরিবার। মৃত্যুর কারণ জানতে চায় তারা। শক্তিগড় থানার পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।