Mamata Banerjee: নিজের প্রশাসনের বেনিয়মের হাঁড়ি হাটে ভাঙলেন মমতা, বেজায় অস্বস্তিতে সরকারি আধিকারিকরা

Purulia District Administrative Meeting: ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের বিরুদ্ধে ভূরি ভূরি অভিযোগ পেয়ে বিস্মিত হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বৈঠক থেকে যে সব অভিযোগ তুলেছেন মমতা, সংশ্লিষ্ট ঘটনার সাক্ষীদেরও বৈঠকে হাজির করিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।

Mamata Banerjee: নিজের প্রশাসনের বেনিয়মের হাঁড়ি হাটে ভাঙলেন মমতা, বেজায় অস্বস্তিতে সরকারি আধিকারিকরা
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: May 30, 2022 | 5:35 PM

পুরুলিয়া: পুরুলিয়ায় সোমবার প্রশাসনিক বৈঠক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই বৈঠকে বিভিন্ন সরকারি দফতরের কাজে ঢিলেমি, দফতরের দুর্নীতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রীর বলার ধরনেই বুঝিয়ে দিয়েছেন, জেলার বিভিন্ন কাজকর্মের ব্যাপারে খোঁজ খবর নিয়েই বৈঠক করতে এসেছেন তিনি। একের পর বিষয়ে কী ভাবে কাজ করতে সাধারণ মানুষের হেনস্থা হচ্ছে, তার বর্ণনা পুঙ্খানুপুঙ্খ শোনা গিয়েছে মমতার গলায়। বৈঠকের শুরুতেই জেলার একাধিক প্রকল্প রূপায়নে দেরি নিয়ে আধিকারিকদের তোপ দাগেন তিনি। তার পরই মুখ্যমন্ত্রীর নজর দেন পুরুলিয়ার ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের কাজকর্মে। সেই কাজে একাধিক অসঙ্গতির হচ্ছে, সে কথা স্বীকার করে নিয়েছেন মমতা। জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের সেই সমস্যার সমাধান করতেও নির্দেশ দিয়েছেন। ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে মিউটেশন করাতে এসে লেখাপড়া না জানা আদিবাসী মানুষরা কী ভাবে হেনস্থার শিকার হচ্ছেন, তার বিবরণ নিজেরই দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। যাঁরা এই অন্যায়ের সঙ্গে যুক্ত তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

অশান্ত জঙ্গলমহলে শান্তি ফিরিয়ে উন্নয়নের কাজ তাঁর সরকার শুরু করেছে বলে সোমবার দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সবার বিরুদ্ধে অভিযোগ নেই, এ কথা স্মরণ করিয়ে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরকে কাঠগড়ায় বসান। ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের বিরুদ্ধে ভূরি ভূরি অভিযোগ পেয়ে বিস্মিত হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বৈঠক থেকে যে সব অভিযোগ তুলেছেন মমতা, সংশ্লিষ্ট ঘটনার সাক্ষীদেরও বৈঠকে হাজির করিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর অভিযোগ, ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে সাধারণ মানুষ গেলে তাঁদের হেনস্থা করা হচ্ছে। ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের  বলরামপুর অফিসে গিয়ে ‘লেখাপড়া না জানা গরিব’ মানুষরা কী ভাবে অসহযোগিতার শিকার হয়েছেন, বৈঠকে তাঁর বিস্তারিক বর্ণনা দিয়েছেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান।

এ নিয়ে মমতা বলেছেন, “বলরামপুরে বিএলআরও (ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর) অফিসের সামনে ২ টি দোকান আছে। সেখান থেকেই বিএলআরও অফিস চলে। জমি সংক্রান্ত কোনও কাজে গেলে তাঁদের পাঠিয়ে দেওয়া হয়, ওই ২টি দোকানে। অফিসের লোকেরা বলে দিচ্ছেন, ওই দোকানে গিয়ে জেনে আসতে গবে। সেখানে আদিবাসী গরিবদের জানানো হয় জমির মিউটেশন ও অন্যান্য কাজ করতে কত টাকা লাগবে।“ জমির মাপ অনুসারে টাকা নেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন মমতা।  বলরামপুরের আইসি-কে গোটা ঘটনার তদন্ত করে দ্রুত রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ প্রশাসনিক বৈঠক থেকেই দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

সাধারণ মানুষকে সরকারি পরিষেবা দেওয়ার প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, “যারা লেখাপড়া জানেন তাঁদের নিয়ে সমস্যা নেই। তাঁরা নিজেদের কাজ নিজেরা করে নিতে পারে। কিন্তু লেখাপড়া জানে না, গরিব মানুষরা কী করবে। তাঁদের সাহায্য না করলে কী করে চলবে।“  ভূমি সংস্কার দফতরে কাজ করাতে গিয়ে, কয়েক জন গরিব আদিসাবী কী ভাবে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলেন, সেই বর্ণনা তুলে ধরেন মমতা। একের পর এক নাম করে বেশি কয়েকটি অভিযোগের কথা বলেন। অভিযোগকারীদের সোমবারের প্রশাসনিক বৈঠকে হাজিরও করিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বৈঠকের পর অভিযোগকারীদের কেউ ‘ধমক-চমক’ দিলে, তাঁদেরকে গ্রেফতারির হুঁশিয়ারিও দিয়ে রেখেছেন মমতা।

আগামী তিনমাসের মধ্যে সমস্ত আদিবাসীর জমির মিউটেশন করার জন্য জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রয়োজনে দুয়ারে সরকার ক্যাম্প করতেও বলেছেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর এই নির্দেশের পিছনেও পঞ্চায়েত ভোটের গন্ধ পাচ্ছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ। তাঁদের মতে, ভোটের আগেই সরকারি সুযোগ সুবিধা জঙ্গলমহলের প্রত্যন্ত গ্রামবাসীদের কাছে পৌঁছে দিতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী।