কোচবিহার: তাঁকে নিয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় শোরগোল শুরু হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। তিনি কোচবিহারের রাজবংশী নেতা। বাংলা থেকে বিজেপির প্রথম রাজ্যসভার সাংসদও। ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে বিজেপি নেতারা যখন লাগাতার রাজ্যের শাসকদলকে নিশানা করছেন, তখন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ ঘিরে জল্পনা বাড়ছে। তিনি অবশ্য বলছেন, মমতা তাঁর বাড়িতে এসেছিলেন। ফলে গৃহস্থের কর্ম তিনি পালন করেছেন। তাতে জল্পনা অবশ্য থামছে না। এই পরিস্থিতিতে দেখে নেওয়া যাক নগেন্দ্র রায়ের সম্পর্কে কিছু তথ্য। তিনি অবশ্য কোচবিহারে অনন্ত মহারাজ বলেই পরিচিত।
কোচবিহার সদরের অদূরে চকচকায় অনন্ত মহারাজের ‘প্রাসাদ’। মঙ্গলবার এখানেই এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতাকে রাজবংশীয় উত্তরীয় পরিয়ে স্বাগত জানিয়েছিলেন অনন্ত মহারাজ। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের পর অনন্ত মহারাজ বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর পরিবার সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন। নিজের পরিবার সম্পর্কে অনন্ত মহারাজ বলেন, “মহারাজ নরকের বংশধর আমরা। অসমের কামাখ্যা মন্দির আমাদের পূর্বপুরুষদের প্যালেস ছিল।” অনন্ত মহারাজের বাবার নাম দেবকান্ত গগেন্দ্র রায়। ১৯৯৪ সালে কোচবিহারের গোঁসাইবাড়ির প্রাসাদে অনন্ত মহারাজের ‘রাজ্যাভিষেক’ হয়।
গ্রেটার কোচবিহার আন্দোলনের হাত ধরে অনন্তের উত্থান-
গ্রেটার কোচবিহার পৃথক রাজ্যের দাবিতে অনেকদিন ধরেই আন্দোলন করছে গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশন(GCPA)। প্রথম GCPA-র প্রধান নেতা ছিলেন বংশীবদন বর্মণ । ২০০৫ সালে আন্দোলন শুরু হয়। উত্তাল হয়ে ওঠে কোচবিহার। চলে গুলি। অভিযোগ, পুলিশের গুলিতে কয়েকজন গ্রেটার সমর্থকের মৃত্যু হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে বাইরে থেকে আসে পুলিশ ফোর্স। এমনকি একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মারা যান আন্দোলনকে কেন্দ্র করে।
সেসময় দিনহাটার ভেটাগুড়িতে দীর্ঘদিন রাস্তা অবরোধ করে বসেছিলেন গ্রেটার কোচবিহারের সমর্থকরা। নেতা তখন বংশীবদন। এরপর গ্রেফতার হন তিনি। এর মাঝে হঠাৎ আবির্ভাব হয় অনন্তের। অসমের একটি শোধনাগারে কাজ করতেন। বাড়ি ছিল সিতাইয়ে।
বংশীবদন গ্রেফতার হওয়ার পর ধীরে ধীরে আন্দোলনের রাশ নিজের হাতে নেন অনন্ত মহারাজ। ধীরে ধীরে তাঁর পক্ষে সমর্থন বাড়ে। বাম জমানার শেষ দিকে কোচবিহার রাজবাড়ির পেছনে গ্রেটার সমর্থকরা জড়ো হয় অবস্থান শুরু করেন। মূলত সেখান থেকেই তাঁর উত্থান শুরু। নিজেকে মহারাজের বংশধর হিসেবে তুলে ধরেন। এরপর চকচকার কালজানি গ্রামে তৈরি করেন প্রাসাদোপম একটি বাড়ি। রাজবংশীরা তাঁকে কার্যত রাজা মানতে শুরু করেন। গতবছরের ১৯ অগস্ট বিজেপির টিকিটে বাংলা থেকে রাজ্যসভার সাংসদ হন তিনি।