কোচবিহার: মহারাষ্ট্রের টালমাটাল পরিস্থিতি নিয়ে বিগত কয়েকদিন ধরেই উত্তাল দেশের রাজ্য-রাজনীতি। উদ্ধব ঠাকরে নাকি একনাথ শিন্ডে কে আসল শিবসেনা? এই প্রশ্নেই সরগরম মারাঠাভূমি। উদ্ধবের সরকার থাকবে না যাবে, এটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন জাতীয় রাজনীতির আঙিনায়। এবার সেই মহারাষ্ট্রের রাজনৈতিক সঙ্কটের (Maharashtra Political Crisis) ছাপ শীঘ্রই দেখা যেতে পারে বাংলার মাটিতে? পড়তে পারে সরকার? কোচবিহারে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুর অধিকারী (Suvendu Adhikari) ভাষণে সেই জল্পনাই তীব্রতর হয়েছে। এদিন কোচবিহারের সভা থেকে বাংলার সরকারের বিরুদ্ধে চাঁচাছোলা আক্রমণ শানিয়ে শুভেন্দু বলেন, ”২০২৬ অবধি যেতে হবে না, চব্বিশেই বিসর্জন দিয়ে দেব। মহারাষ্ট্র হয়েছে, এরপর ঝাড়খণ্ড হবে, তারপর রাজস্থান হবে, তারপর বাংলায় পৌঁছে যাব আমরা। এ সরকারকে রাখা যাবে না।”
অন্যদিকে মহারাষ্ট্রের রাজনৈতিক সঙ্কট নিয়ে মমতা এদিন বলেন, ‘যে সত্যি কথা বলবে, তাঁর বিরুদ্ধে হয় সিবিআই না হলে ইডি। আজ দেখলাম, মহারাষ্ট্রেও শিবসেনার একজন নেতার নামে সমস্ত সম্পত্তি অ্যাটাচ করে দিয়েছে ইডি। এইভাবে দেশ চলে না জীবন চলে। কেন ভয় দেখাবেন?’ অন্য়দিকে সুুদীপ্ত সেনের (Sudipta Sen) বিস্ফোরক দাবির পর থেকে রাজ্যের নানা প্রান্তে শুভেন্দুকে গ্রেফতারির দাবিতে পথে নেমেছে তৃণমূল কংগ্রেস। কোচবিহারে শুভেন্দু পৌঁছতেই লাগাতার বিক্ষোভ প্রদর্শনে নামে ঘাসফুল শিবির। বিক্ষোভের আঁছ ছড়ায় কোচবিহারের মূল শহর, খাগড়াবাড়ি সহ বেশ কিছু এলাকায়। শুভেন্দু অধিকারী যখন কোচবিহারে ঢুকছেন ঠিক সেই সময় ওঠে ‘শুভেন্দু গো ব্যাক’ স্লোগান। কিন্তু সে সবে পাত্তা না দিয়েই হিন্দু জাগরণেই এদিন নতুন করে শান দিতে দেখা যায় পদ্ম নেতাকে।
এদিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে শিবসেনার প্রতিষ্ঠাতা বালাসাহেব ঠাকরের উদাহরণ টেনে হিন্দু জাগরণের কথা বলতে শোনা যায় শুভেন্দুকে। শুভেন্দু বলেন, ”আপনাকে কেউ জিজ্ঞেস করলে আপনি বলেন আপনি ব্রাহ্মণ, আমি কায়স্থ, আমি রাজবংশী, আমি জনজাতি, আমি মতুয়া। আমি বলব বাংলার মানুষকে, ফালাকাটার মানুষকে, আলিপুরদুয়ারের মানুষকে উত্তরপ্রদেশে দেখে শিখুন। ভোটের সময় উত্তরপ্রদেশে গিয়ে যদি কাউকে জিজ্ঞেস করেন আপনি কে তাহলে তিনি বলেন আমি ভারতীয়। আমি সনাতনী। এটা যতদিন না আমরা বলতে পারব ততদিন এই তোষণাবাজ মুখ্যমন্ত্রী আমাদেরকে এই অত্যাচারের মধ্যে রাখবে।” একইসঙ্গে শিবসেনা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে বাংলার প্রসঙ্গ টানেন শুভেন্দু। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে শুভেন্দু বলেন, ”বালাসাহেব ঠাকরে দেশপ্রেম, রাষ্ট্রবাদ, সনাতন সংস্কৃতি, হিন্দুত্বের উপরে গেরুয়া ধ্বজা নিয়ে শিবসেনা তৈরি করেছিলেন। আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়েছেন ওনার অরাজনৈতিক পুত্র বালাসাহেব ঠাকরে। তাই আদর্শবান শিব সৈনিকরা এটা মেনে নিতে পারেন না। তাই রাষ্ট্রবাদী শিব সৈনিকরা এখন বিজেপির কাছে এসেছে। এটা হওয়ারই ছিল। ওখানে আগামীদিনে রাষ্ট্রবাদী সরকার তৈরি হবে। পশ্চিমবঙ্গে ৩৮.১৩ শতাংশ হিন্দু এক হয়েছে। আর আমরা বলব ৭-৮ শতাংশ হিন্দু আপনারা এক হন। তাহলেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ২ ঘণ্টার বেশি থাকবে না।” শুভেন্দুর এ মন্তব্য নিয়েই বর্তমানে বঙ্গ রাজনীতির আঙিনায় শুরু হয়ে গিয়েছে জোরদার চর্চা।