কোচবিহার: নিজে জটিল রোগে আক্রান্ত। শরীরে ঢুকেছে বোতল বোতল রক্ত। ইতিমধ্যেই ১৮০০ বোতল রক্ত নিতে হয়েছে তাঁকে। কিন্তু থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত বছর তেত্রিশের এই যুবতীর মনে রয়েছে এক অদম্য জেদ আর সাহস। সেটাই তাঁর পুঁজি। এই পুঁজিতেই ভরসা করে নিজে জটিল রোগে আক্রান্ত হয়েও অন্যান্য মরণাপন্ন রোগীদের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়তে দু’বার ভাবেন না তিনি। কথা হচ্ছে কোচবিহারের দেবপ্রিয়াকে নিয়ে। জীবন যুদ্ধে এক অসম লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন প্রতিদিন। যুঝে যাচ্ছেন কঠিন রোগের সঙ্গে। সঙ্গে লড়াইয়ের সাহস যোগাচ্ছেন, তাঁর মতো বাকিদেরও। আজও নিজের ওষুধের থেকে কিছুটা কুরিয়ার করে পাঠালেন গুজরাটের এক থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগীর জন্য।
শুধু আজ বলে নয়, যখনই কোনও রোগীর রক্তের প্রয়োজন হয়, খবর আসে তাঁর কাছে। সঙ্গে সঙ্গে বেরিয়ে পড়েন, সেই রোগীর জন্য রক্ত জোগাড় করতে। কখনও পিছ পা হন না দেবপ্রিয়া। যখনই কারও কোনও সাহায্যের দরকার হয়, ছুটে যান। দেবপ্রিয়ার কথায়, তিনি বেচে আছেন মানুষের রক্ত নিয়ে , তাই মানুষের জন্যে কাজ করতে চান।
থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত দেবপ্রিয়া আজ নিজের বাড়িতে থাকতে পারেন না। বিভিন্ন কারণে তাঁকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। এখন তিনি থাকেন কোচবিহার শহরের এক ভাড়া বাড়িতে। বাবা-মা দু’জনেই অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী। মেয়েকে মাসে মাসে কিছু টাকা পাঠান। সেই টাকা দিয়েই বাড়ি ভাড়া থেকে শুরু করে ওষুধের খরচ সামলান। প্রতি মাসে তাঁর একবার করে রক্তের প্রয়োজন হয়। নিজেই বেরিয়ে পড়েন রক্তের খোঁজে। অনেক কষ্ট-সাধ্য করে রক্ত জোগাড় করে, ছোটেন কোনও হাসপাতালে বা নার্সিংহোমে। রক্ত নিয়ে ফেরেন বাড়িতে। আর দেবপ্রিয়ার এই লড়াইয়ের তিনি পাশে পেয়েছেন বেশ কয়েকজনকে। তালিকায় আছেন কয়েকজন স্বাস্থ্যকর্মী, আবার কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। তাঁদের সাহায্য নিয়েই এই জীবন যুদ্ধে এখনও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন দেবপ্রিয়া।