কোচবিহার: কয়েকদিন আগে তৃণমূলে যোগদান করেন আলিপুরদুয়ারের বিজেপি বিধায়ক সুমন কাঞ্জিলাল (suman kanjilal )। তারপর থেকেই তোলপাড় উত্তরবঙ্গের রাজ্য-রাজনীতি। তৈরি হচ্ছে একাধিক জল্পনা। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বিজেপিতে দিনদিন বাড়ছে রাজবংশীদের প্রভাব। এই জল্পনা যখন চলছে ঠিক তখনই শনিবার উত্তরবঙ্গে গিয়ে বিএসএফ-এর গুলিতে প্রাণ হারানো রাজবংশী যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় সরব হলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজবংশী ইস্যুতে বিজেপি অবস্থান স্পষ্ট ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের জবাবদিহি দাবি করেছেন তিনি। ‘শেষ দেখে ছাড়ার’ হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তৃণমূলের সেনাপতি।
আজ কোচবিহারে সভা ছিল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সেই সভায় আমন্ত্রণ জানানো হয় বিএফএর-এর গুলিতে প্রাণ হারানো প্রেম কুমার বর্মণের মা-বাবাকে। সভামঞ্চে তাঁদের ডেকে অভিষেক বলেন, “আমি চ্যালেঞ্জ করে বলছি এই রাজবংশী তরতাজা যুবককে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করে যার প্রাণ নিল বিএফএফ, রাজবংশীদের হত্যা করে যাঁরা রাজবংশীদের দরদ দেখায় আমি সেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও এখানকার ডেপুটিকে প্রশ্ন করতে চাই প্রেম কুমার কে ছিলেন? জঙ্গি? ওর অপরাধ কী? সে রাজবংশী? তিনি যখন সকালে মাঠে ঘুরতে গিয়েছিলেন তার কাছ থেকে কি বোমা-বন্দুক উদ্ধার হয়েছিল? তার থেকে গরু পাওয়া গিয়েছিল? ৪৮ ঘণ্টা সময় দিলাম। তোমাদের অবস্থান স্পষ্ট করো। ক্ষমা চাও।”
এরপর প্রেমের মায়ের চোখের জল মোছান অভিষেক। তারপর প্রশ্ন করেন, “এনাকে দেখে কি মনে হয় ? এনার গর্ভে জঙ্গি জন্মাবে? প্রেম মারা যাওয়ার পর একবারও গিয়ে বিজেপির কেউ অথবা বিএসএফ-এর পক্ষ থেকে জিজ্ঞাসা করেছে ওর পরিবারকে আপনারা কেমন আছেন? এর শেষ আমি দেখে থাকব।” এরপর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “যে এই কাজ করেছে তার মাথায় যদি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর হাত থাকে তাও আমি শেষ দেখে ছাড়ব। এক থেকে দুমাসের মধ্যে এর শেষ দেখে ছাড়ব।”
প্রসঙ্গত, আজ তৃণমূলের এই মাথাভাঙার সভা ছিল বঙ্গভঙ্গের দাবির বিরুদ্ধে। বাংলা ভাগের দাবিদার কারা? উত্তরবঙ্গে রাজবংশী মানুষ, গোর্খা, আদিবাসী তাঁদের দাবি উত্তরবঙ্গকে আলাদা রাজ্য করা হোক। ফলে তাঁদের বিরুদ্ধে বার্তা দেওয়ার জন্যই ছিল আজকে এই সভা। কিন্তু বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে কথা বললে যেই সম্প্রদায় সবথেকে বেশি আহত হবে তারা রাজবংশী। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন সুকৌশলে এই রাজবংশী পরিবারকে মঞ্চে এনে অভিষেক বক্তব্য রাখলেন সঙ্গে রাজবংশীদের পাশে থাকার বার্তাও দিলেন। এ দিন অভিষেক একদিকে যেমন বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে বার্তা দিলেন অপরদিকে রাজবংশী আবেগকেও তুলে ধরলেন বলে মনে করছে ওয়াকিবহালমহল।
আজকের সভামঞ্চ থেকে মৃত প্রেম কুমারের বাবা বলেন, “ওর কাছ থেকে কিছুই উদ্ধার হয়নি। কেন মেরে ফেলা হল? ওকে বেঁধে রাখতে পারত। প্রয়োজনে শাস্তি দিত।”
এই বিষয়ে বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ বলেন, “উত্তরবঙ্গ থেকে পা উঠে গেছে। জঙ্গলমহলে ঢুকতে পারছে না। বারবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যাচ্ছেন। এই জায়গাগুলো আগেও বঞ্চিত হয়েছে। তৃণমূল ক্ষমতায় থাকার পরও কোনও উন্নয়ন করেনি। সেখানকার মানুষকে অন্য রাজ্যে কাজের জন্য যেতে হয়। ওইখানে একজন মারা গিয়েছে। সরকার দেখছে। ওনারা কি করেছে ওদের জন্য? এখন কোনও ইস্যু নেই তাই।”