কোচবিহার: ভোট পরবর্তী অশান্তিতে (Post Poll Violence) ঘর ছেড়েছিলেন বিজেপি নেতা। প্রায় ২ বছর পর ফিরলেন বাড়িতে। দুই বিজেপি বিধায়ককে সঙ্গে নিয়ে রবিবার বিকেলে ঘরে ফিরলেন বিজেপি নেতা বিপিন বর্মন এবং তাঁর স্ত্রী। ঘটনাটি মাথাভাঙা-১ ব্লকের নয়ারহাট গ্রামপঞ্চায়েতের পানিগ্রাম এলাকার। ২০২১ সালে এ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন হয়। এই ভোটে বিপুল আসনে জয় পেয়ে তৃতীয়বারের জন্য সরকার গঠন করে তৃণমূল। তাদের এই জয় হিংসা-সন্ত্রাসের ফসল বলে অভিযোগ তোলে বিজেপি। সেই সময় থেকে রাজ্য রাজনীতির অন্দরে ঘুরপাক খাচ্ছে ‘ভোট পরবর্তী হিংসা’ শব্দবন্ধ। বিজেপির অভিযোগ, এই ভোটের ফল প্রকাশের পর থেকে শ’য়ে শ’য়ে বিজেপি কর্মী ঘরছাড়া। এখনও অনেকে ঘরে ফিরতে পারেননি। শাসকদলের দিকেই অভিযোগের আঙুল ছিল তাদের।
এরকমই একজন মাথাভাঙার বিপিন বর্মন। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে বিপিনের ঘরে ফিরে আসায় স্বভাবতই খুশি স্থানীয় বিজেপি নেতা কর্মীরা। শীতলকুচির বিধায়ক বরেণচন্দ্র বর্মন জানান, ভোট পরবর্তী অশান্তির শিকার হয়েছিলেন বিপিন। তৃণমূলের লোকজন বিপিন বর্মনের বাড়ি ভাঙচুর করে বলেও অভিযোগ বিজেপির। সেই থেকে প্রায় ২ বছর ধরে ভিন রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করে সংসার চালাচ্ছিলেন বিপিন। অবশেষে ফিরলেন নিজের এলাকায়। এদিন তাঁকে বাড়িতে রাখতে আসা বিজেপি নেতারা জানান, ভবিষ্যতে বিপিন কিংবা তাঁর পরিবারের উপর কোনও হামলা হলে প্রশাসনিকস্তরে অভিযোগ জানানো হবে।
বিজেপি বিধায়ক বরেণ বর্মন বলেন, “দল সবসময়ই বিপিনদার পাশে আছে এবং থাকবে। ভোট পরবর্তী হিংসার পর ২ বছর বাড়িছাড়া ছিলেন। আজ ফিরলেন। তৃণমূলের অত্যাচার, শোষণ কতদূর তা বোঝা যাচ্ছে। এই বাড়িটা তছনছ করেছে। আমরা আজ দেখলাম সবটা। এই ঘর তৈরির জন্য আমাদের সাংসদ নিশীথদা আর্থিক সাহায্য করেছেন। আমার সঙ্গে মাথাভাঙার বিধায়ক সুশীলদাও আছেন। বাংলা এখন বোমা বারুদের রাজ্য। সর্বত্র হিংসা।” দল এর মোকাবিলা করবে বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, একুশের ভোটের পর বিপিন বর্মনকে মারধর এবং বাড়ি ভাঙচুর করার অভিযোগ ওঠে স্থানীয় তৃণমূল কর্মীদের বিরুদ্ধে। যদিও সেই সময় তৃণমূল অভিযোগ করেছিল, ওই বিজেপি নেতাই এক তৃণমূল কর্মীকে মারধর করে। তাতেই সাধারণ মানুষের প্রতিরোধের মুখে পড়তে হয়। ঘরে ফিরে ওই বিজেপি কর্মী বলেন, ভোটের পর ওড়িশা চলে গিয়েছিলেন। এরপর সেখান থেকে রাজস্থান যান। বিপিন জানান, এক সময় রাজস্থানে কাজ করতেন তিনি। পুরনো সংস্থায় যোগাযোগ করে আবারও কাজ শুরু করেন। তবে এর মাঝে বেশ কয়েকবার বাড়ি ফিরতে চেয়েছিলেন। পারেননি বলেই জানান। অবশেষে ফিরলেন বাড়িতে।
এদিকে বাড়ি ফিরেই কান্নায় ভেঙে পড়েন বিপিনের স্ত্রী। বলেন, “সকলকে দেখে খুব ভাল লাগছে। তবে বাড়িঘর দেখে একেবারে ভাল লাগছে না। আমার বর বরেণদার কাউন্টিং এজেন্ট ছিলেন। তাই আমাদের এমন পরিণতি করে তৃণমূলের লোকেরা।” এদিনের ঘটনা প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্লকের তৃণমূল সভাপতি মহেন্দ্র বর্মন জানান, এর সঙ্গে তৃণমূলের যোগ নেই। আসলে বিজেপি বিধায়ক এলাকার উন্নয়ন না করে বিজেপিআশ্রিত গুন্ডাদের বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছেন। কারণ ওই বিজেপি নেতার নামে অনেক জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রয়েছে। তাই তৃণমূলের নামে বদনাম করছে।