দক্ষিণ দিনাজপুর: রক্তেও দালালচক্র। এক ইউনিট রক্তের দাম ৭০০ টাকা। এই দাম সরকারি হাসপাতালেরই। বালুরঘাট জেলা হাসপাতালের (Balurghat Hospital) ব্লাড ব্যাঙ্কে দালালচক্রের রমরমা। তার মাশুল গুনতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। যেন ফেলো কড়ি মাখো তেল! হাসপাতালেই রক্ত পেতে দিতে হচ্ছে টাকা। সক্রিয় দালালচক্র, এমনই অভিযোগ বালুরঘাট জেলা হাসপাতালে। অভিযোগ, হাসপাতালের বেতনভুক কর্মীরাই নাকি দালালদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে টাকার বিনিময়ে বিক্রি করছেন রক্ত। এক ইউনিট রক্তের দাম ৭০০ টাকা। দক্ষিণ দিনাজপুর চিকিৎসা ব্যবস্থার সবথেকে বড় ভরসা বালুরঘাট জেলা হাসপাতাল। এই হাসপাতালে ভর্তি থাকা কোনও রোগীর রক্তের প্রয়োজন হলে, ভরসা ব্লাড ব্যাঙ্ক। কিন্তু এখানে এসে অন্য অভিজ্ঞতাই হচ্ছে রোগীর পরিবারের। এক রোগীর আত্মীয় বলেন, “আমাকে ফোন করে বলেন, একটা কার্ড লাগবে। তারপর বলছে এই কার্ড তো নিচ্ছে না, বলছে রক্ত দেবে না। ৭০০ টাকা দিয়ে রক্ত নিতে হবে।” আরেক জন বলেন, “ডোনার না দিলে, কাটমানি লাগবে। বাইরে ডেকে নিয়ে বলে পয়সা দিলে ব্যবস্থা করে দেব। পয়সা নিয়ে একজন ডোনারের ব্যবস্থা করে দেয়।”
এবার প্রশ্ন কার্ড কী? উল্লেখ্য, সরকারি হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীর যদি রক্তের প্রয়োজন হয়, তাহলে তাঁর জন্য কোনও কার্ড লাগে না। এক্ষেত্রে হাসপাতাল কর্মীরা যে কার্ডের কথা বলছেন, তা হল পাড়াতে বা ক্লাবে যেখানে রক্তদান শিবির করা হয়, সেখানে রক্তদাতাদের একটি কার্ড দেওয়া হয়। সেই কার্ড যাঁর হাতে থাকে, তাঁকে ভবিষ্যতে সাম্মানিকভাবে এক ইউনিট রক্ত দেওয়া হয়। সেই কারণেই জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে সাধারণ মানুষ এই কার্ড নিয়ে সাধারণত যান। কিন্তু সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, হাসপাতালে যে রোগী ভর্তি রয়েছেন, তাঁর রক্তের প্রয়োজন করে ডিপার্টমেন্টই একটি রিক্যুইজেশন ফর্ম তৈরি করে দেবে। সেটা নিয়ে সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কে যেতে হবে। সেই ফর্ম জমা করলেই স্টক থেকে রক্ত দেওয়া হবে। অভিযোগ উঠছে, হাসপাতালের ভিতরের কর্মীরাই দালালচক্রের সঙ্গে যুক্ত। সেটা ব্যতিক্রম নয় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ, এসএসকেএম, আরজিকর, সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্কও। রোগীর পরিবারকে বলা হচ্ছে, রক্ত নেই। পরিবারের সদস্যরা দিশেহারা হয়ে যান। দালালরা তাঁদের ওপরেই নজর রাখেন। দালালরা আশ্বাস দেন, রক্ত জোগাড় করে দেওয়া যাবে। সেক্ষেত্রে একটি কার্ড দিতে হবে। তার রিক্যুইজেশন ফর্ম থেকে বিনা পয়সাতেই রক্ত উঠছে সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে। তাঁর থেকে যে ডোনার্স কার্ড নেওয়া হল, সেটাও ফাঁকি যাচ্ছে না। সেই কার্ড দেখিয়ে অন্য কোনও বেসরকারি হাসপাতাল, নার্সিংহোম থেকে রক্ত তুলে নেওয়া হয়। রোগীকে রক্ত দেওয়া হচ্ছে ৭০০ থেকে হাজার টাকার দরেও।
এই নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজাও। বিজেপি নেতার বক্তব্য, “বাংলার অবস্থা অত্যন্ত ভয়ঙ্কর। রক্ততেও কাটমানি লাগছে। এখানে পয়সা ছাড়া কিচ্ছু হয় না।” বালুরঘাট জেলা হাসপাতাল সুপার কৃষ্ণেন্দুবিকাশ বাগের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, কোনও লিখিত অভিযোগ জমা পড়েনি। অভিযোগ পেলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হাসপাতাল সুপার আশ্বাস দিচ্ছেন, সমস্যা কবে বদলায়, সেটাই দেখার।