বালুরঘাট: নির্বাচনের আগে অস্তিত্ব এড়াতে সরানো হল তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের জেলা সহ সভাপতিকে। বালুরঘাট সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের অবৈধ কাজকর্মে নাম জড়ানো এবং অবৈধ নির্মাণকাজের অভিযোগ উঠতেই বিতর্কিত তৃণমূল নেতা তথা আইএনটিটিইউসির জেলা সহ সভাপতি রাকেশ শীলকে দলীয় পদ থেকে সরাল তৃণমূল কংগ্রেস। এর আগে রাকেশ শীল জেলা সভাপতির পদে ছিলেন। এমনকি নির্বাচনে নামতে না করা হয়েছে ওই নেতাকে। সম্প্রতি তাঁর বিরুদ্ধে বালুরঘাট শহরে নানা ধরনের অবৈধ কাজের অভিযোগ উঠেছিল। এমনকি দলের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছিল না। দলীয় প্রার্থীর সমর্থনেও কোন কর্মসূচিতে অংশ নেননি রাকেশ। যা নিয়ে অস্বস্তিতে পড়েছে দল। এবারে সরাসরি রাকেশ শীলকে দলীয় পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হল। আরও জানা গিয়েছে, দলীয় বিপ্লব মিত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্প্রতি নানা বিষয় নিয়ে রাকেশ শীলের কোন্দল হয়। ফলে তড়িঘড়ি রাকেশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হল।
প্রসঙ্গত, রাকেশ শীল বালুরঘাটের দাপুটে নেতা বলেই পরিচিত। তিনি তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের জেলা সভাপতির পদ সামনে এসেছেন। বালুরঘাট সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে বেসরকারি কোম্পানির কর্মীদের নিজের নিয়ন্ত্রণেই রেখেছিল। যদিও বা তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতেন না। সম্প্রতি ওই হাসপাতালে অরাজকতা থেকে শুরু করে নানা অবৈধ কাজের ক্ষেত্রেও অভিযোগ এসেছিল রাকেশ শীলের নামেই।
এছাড়াও তাঁর প্রভাব খাটিয়ে বেশকিছু কর্মকাণ্ড যেমন হাসপাতালে ‘বিউটিপার্লার’ সহ নানা অভিযোগ ওঠে। এদিকে সম্প্রতি বালুরঘাটের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের একটি অবৈধ নির্মাণের ক্ষেত্রেও অভিযোগ উঠেছিল তাঁর নামেই। যদিও বা পুরসভার তরফে ওই নির্মাণ বন্ধ করা হয়েছে। এদিকে সামনেই লোকসভা নির্বাচন। তার আগে দলীয় প্রার্থী বিপ্লব মিত্রের গোষ্ঠীর সঙ্গে তার দূরত্ব বাড়ে। এমন নানা অভিযোগে তাঁকে দলীয় পদ থেকে সরানো হল।
এবিষয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি সুভাষ ভাওয়াল বলেন, “রাকেশ শীলের বিরুদ্ধে পর পর দুটি অভিযোগ এসেছিল। এমনকি দলের সঙ্গেও দূরত্ব বাড়ছিল। দুই অভিযোগেই তদন্ত চলছিল। সামনেই নির্বাচন। তাই এত অভিযোগ শোনার সময় নেই। এই বিতর্কিত অভিযোগগুলিতে আমরা বিব্রত। তাই আপাতত তাকে দলীয় পদ থেকে সরানো হল। নির্বাচনের পরে দেখা হবে, দল তার অপরাধ নিয়ে চিন্তাভাবনা করবে।”
তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসির জেলা সভাপতি নামিজুর রহমান বলেন, “গণগর্জন সভা থেকেই আমাদের রাজ্য সভাপতি নির্দেশ দিয়েছিল। দলীয় নেতৃত্বদের প্রার্থীর প্রচারে ও দলের কাজে যোগ দিতে হবে৷ কিন্তু রাকেশ শীল ওই দিন থেকে দলের সঙ্গে যোগাযোগ তেমন রাখেনি। কর্মসূচিতেও যোগ দেয়নি। তাই নির্বাচনের আগে রাজ্যের নির্দেশেই দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হল।”
এবিষয়ে ওই তৃণমূল নেতা রাকেশ শীলকে একাধিকবার ফোন ও মেসেজ করলেও তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে দুই দিন আগেই তিনি এই ব্যাপারে মুখ খুলেছিলেন। এই ব্যাপারে তিনি তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দলের শিকার বলেই তিনি জানিয়েছিলেন।
এদিকে এই দলীয় পদ থেকে সরানো নিয়ে খোঁচা দিয়েছে বিজেপি। বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক বাপি সরকার বলেন, “হাসপাতালের ঘটনা দীর্ঘদিন ধরে ঘটছে৷ সংবাদ মাধ্যমে দেখানো হয়েছে। সাধারণ মানুষ এর প্রতিবাদ করেছে। এমনিতে তৃণমূল তাঁদের নেতাদের বিরুদ্ধে কোনও রকম ব্যবস্থা নেয়নি। এখানেও মানুষ এর প্রতিবাদে রুখে দাঁড়াতে এটা করেছে তৃণমূল।”