কুমারগঞ্জ : ক্লাসরুম ভর্তি পড়ুয়া। কেউ নিজের মতো পড়ছে। আবার কয়েকজন গল্পে মেতে। কিন্তু, শিক্ষক কোথায়? শিক্ষকের খোঁজে পাশের ক্লাসে উঁকি মারতে গিয়েই দেখা গেল, সেখানেও একই ছবি। পরপর কয়েকটি ক্লাসে একই দৃশ্য দেখা গেল। অবশেষে একটি ক্লাসে গিয়ে দেখা গেল শিক্ষক রয়েছেন। অন্য ক্লাসগুলিতে শিক্ষক নেই কেন? সেই উত্তর খুঁজতে গিয়েই বেরিয়ে এল স্কুলের নিদারুণ চিত্র। স্কুলে রয়েছেন মাত্র ২ জন শিক্ষক। আর ছাত্র সংখ্যা? তা প্রায় পাঁচশো। আর ওই ২ শিক্ষক নিয়ে চলছে দক্ষিণ দিনাজপুরের কুমারগঞ্জ ব্লকের জাখিরপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের তুলট হাইস্কুল।
স্কুলে মাত্র ২ জন শিক্ষক কেন?
তুলট হাইস্কুল কয়েক বছর আগে পর্যন্ত জুনিয়র হাইস্কুল ছিল। ক্লাস এইট পর্যন্ত পড়াশোনা হত। বছর দুয়েক আগে স্কুলটিকে মাধ্যমিক পর্যন্ত করা হয়। জুনিয়র হাইস্কুল থাকাকালীন সব মিলিয়ে শিক্ষক সংখ্যা ছিল ছয়। এরপর স্কুলটি মাধ্যমিক পর্যন্ত উন্নীত করা হলেও এখানে নতুন করে আর শিক্ষক নিয়োগ হয়নি। বরং প্রত্যন্ত এলাকার এই স্কুল থেকে চার শিক্ষক বদলি নিয়ে অন্যত্র চলে যান। যার ফলে বর্তমানে দু’জন শিক্ষক রয়েছেন স্কুলে। সঙ্গে একজন অস্থায়ী কম্পিউটার শিক্ষক। আর একজন গ্রুপ ডি কর্মী।
শিক্ষক ২ জন হলেও পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম, নবম ও দশম এই ছয়টি ক্লাস মিলিয়ে স্কুলে মোট পড়ুয়া রয়েছে ৪৮০ জন। স্কুলের অবস্থা বর্তমানে এমন জায়গায় দাঁড়িয়েছে যেখানে প্রত্যেকদিন প্রত্যেকে ক্লাসে নাম প্রেজেন্ট পর্যন্ত করা সম্ভব হয় না। অনেক সময় শিক্ষকদের নির্দেশে উঁচু ক্লাসের পড়ুয়ারা নিচু ক্লাসের পড়ুয়াদের ক্লাস নেয়। দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক সমস্যা থাকায় পড়ুয়াদের পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে বলে অভিভাবকরা সরব হয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, অন্য স্কুলের পড়ুয়ারা পড়াশোনায় এগিয়ে যাচ্ছে। আগামী দিনে এমন সমস্যা থাকলে তাঁরাও সন্তানদের অন্য স্কুলে পড়াশোনার জন্য পাঠাবেন। পড়ুয়াদের বক্তব্য, মাত্র ২ জন স্যারের পক্ষে সব ক্লাস নেওয়া সম্ভব হয় না। তাই, অনেকসময় ক্লাস ফাঁকা থাকে। তাদের পড়াশোনার ক্ষতি হয়।
স্কুলের গ্রুপ-ডি কর্মী কনক রায়ের বক্তব্য, শিক্ষক কম থাকায় তাঁদেরও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। আজ তিনি ছুটি নিয়েছিলেন। কিন্তু, স্কুলের গেট খোলার জন্য আসতে হয়েছে। এই সমস্যার কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি বলে তাঁর অভিযোগ।
স্কুলের সমস্যা নিয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কৃষ্ণজ্যোতি সরকার বলেন, বর্তমানে তাঁরা দু’জন শিক্ষক রয়েছেন। এবং একজন গ্রুপ ডি কর্মী ও একজন অস্থায়ী কম্পিউটার টিচার রয়েছেন। তা নিয়েই চলছে স্কুল। দীর্ঘদিন ধরে এই সমস্যা চলছে। চার শিক্ষক অন্যত্র বদলি নিয়ে চলে গিয়েছেন। বর্তমানে সব মিলিয়ে প্রায় ৪৮০ জন পড়ুয়া রয়েছে। প্রত্যেকদিন সকলের ক্লাস নেওয়া সম্ভব হয় না। নতুন করে শিক্ষক স্কুলে এলে তাঁদের সুবিধা হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তুলট হাইস্কুলের সমস্যা নিয়ে জেলা স্কুল পরিদর্শক মৃন্ময় ঘোষ (মাধ্যমিক) বলেন, বিষয়টি শুনেছেন। পুরো ঘটনা খতিয়ে দেখবেন।
আরও পড়ুন : Saugata Roy : সতর্ক করেও ‘কাজ হয়নি’, সৌগতকে ডাকতে পারে তৃণমূলের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি