বালুরঘাট: শুধুমাত্র সমন্বয়নের অভাবে গত অর্থ বছরে পুরো টাকা খরচ করতে পারেনি গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি। নানা মহল থেকে উঠেছে এমনই অভিযোগ। তাই এবারে ত্রিস্তরীয় জনপ্রতিনিধিদের সকলের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করার নির্দেশ দিলেন মন্ত্রী বিপ্লব মিত্র। একইসঙ্গে ভাল কাজের জন্য প্রয়োজনে বিরোধীদলের বিধায়কদের সঙ্গে পরামর্শের পরামর্শও দিতে দেখা গেল তাঁকে। সাফ বললেন, মানুষের উন্নয়ন জন্য কোন ভাল পরামর্শ যদি বিরোধী বিধায়করা দেন তাহলে তা অবশ্যই মানুষের কথা ভেবে গ্রহণ করা উচিত। শনিবার ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত নির্বাচনের জনপ্রতিনিধি নিয়ে জেলা প্রশাসনের কড়া কর্মশালায় এমনই মন্তব্য করলেন রাজ্যের ক্রেতা সুরক্ষা দপ্তরের মন্ত্রী বিপ্লব মিত্র। গত অর্থবর্ষে খরচ হয়নি প্রায় ৬০ কোটি টাকা। এবারের টাকা আর ফান্ডে ফেলে রাখা যাবে না। অ্যাকশন প্ল্যানে নেওয়া কাজ সময়ের মধ্যেই শেষ করতে হবে৷ উন্নয়নের কাজের জন্য সমন্বয় বজায় রেখেই করতে হবে কাজ। এমনকি শুধু উন্নয়নের কাজ করেই দায়িত্ব শেষ নয়, পঞ্চায়েত প্রধানদের জনমুখী দৃষ্টান্তমূলক ও ব্যাতিক্রমী কাজ করার নির্দেশও দিয়েছেন জেলাশাসক। এদিকে মন্ত্রীর এমন বক্তব্যকে কটাক্ষ করেছে বিজেপি৷ মিডিয়ার ফোকাসে আসার জন্য মন্ত্রী এমনটা বলেছেন বলে কটাক্ষ বিজেপির জেলা সভাপতি স্বরূপ চৌধুরীর।
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় মোট ৬৪ টি গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে৷ এছাড়াও ৮ পঞ্চায়েত সমিতি রয়েছে৷ গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদে বোর্ড গঠন হয়ে গিয়েছে। এমনকি বেশির ভাগ গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতিতে স্থায়ী সমিতি গঠন হয়ে দিয়েছে। জেলা পরিষদেও স্থায়ী সমিতি ও কর্মাধ্যক্ষ গঠন হয়েছে৷ এদিকে চলতি অর্থ বর্ষে জেলা পরিষদ, পঞ্চায়েত সমিতি এবং গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রায় ১১৪ কোটির বেশি টাকা বরাদ্দ হয়। সব ধরনের সরকারি ফান্ড মিলিয়ে সেই অর্থের প্রায় ৪৬ শতাংশ এখনও পর্যন্ত অর্থ খরচ হয়েছে বলে খবর৷ এখনও বাকি প্রায় ৬০ কোটি টাকা৷ সেই টাকা পড়ে রয়েছে। যা এখনও খরচ হয়নি। পড়ে থাকা টাকা খরচের জন্য আগেই একাধিক গ্রাম পঞ্চায়েতের নির্মাণ সহায়কদের নিয়ে বৈঠক করেন জেলা প্রশাসন। দ্রুত সেই ফান্ডের টাকা খরচের নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর এদিন রবীন্দ্র ভবনে এদিন জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে বিশেষ কর্মশালার আয়োজন করা হয়।
বালুরঘাটের রবীন্দ্র ভবনে সদ্য হয়ে যাওয়া ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত নির্বাচনের জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে শনিবার একদিনের এক কর্মশালার আয়োজন করা হয়। এই কর্মশালা মূলত গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান, উপপ্রধান, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, সহকারি সভাপতি, জেলা পরিষদের সভাধিপতি ও সহকারী সভাধিপতিদের নিয়ে করা হয়েছিল। কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের ক্রেতা সুরক্ষা দপ্তরেত মন্ত্রী বিপ্লব মিত্র, জেলা শাসক বিজিন কৃষ্ণা, অতিরিক্ত জেলা শাসকরা, জেলা পরিষদের সভাধিপতি চিন্তামণি বিহা, সহকারি সভাধিপতি অম্বরিশ সরকার সহ অন্যান্য প্রশাসনিক আধিকারিকরা৷ মূলত ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত পরিষেবা যাতে জনপ্রতিনিধিরা ভাল ভাবে দিতে পারেন তার জন্যই এদের এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়। পাশাপাশি কি ভাবে কাজ করতে হবে সেই বিষয়ে পাঠ দেন মন্ত্রী সহ জেলা শাসক এবং অন্যান্য আধিকারিকরা।
মন্ত্রী বিপ্লব মিত্র বলেন, “সকল জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় বজায় রেখেই সকলকে কাজ করতে হবে। সমন্বয় বজায় রেখে না কাজ করলে গতবারের মত অবস্থা হবে৷ বিভিন্ন ফান্ডের টাকা এসে পড়ে থাকবে। প্রয়োজনে বিরোধী বিধায়কদের কোন ভাল পরামর্শ হলে পরে সেটিও বিবেচনা করে দেখতে হবে। শুধু নিজেরা নয় বিরোধীদের নিয়েই একসঙ্গে কাজ করতে হবে। জেলা পরিষদ, পঞ্চায়েত সমিতি ও গ্রাম পঞ্চায়েত সকলকেই মিলেই কাজ করতে হবে৷ কেউ কাউকে ডিঙিয়ে কাজ করবে ভাবলে তা হবে না।”
পাল্টা কটাক্ষ করে বিজেপির জেলা সভাপতি স্বরূপ চৌধুরী বলেন, “তৃণমূল মুখে বলে এক। কাজে করে আরেক। মন্ত্রী মিডিয়ার ফোকাসে আসার জন্য এমনটা বলেছে। যেসব গ্রাম পঞ্চায়েতে আমাদের দখলে রয়েছে তাদের সঙ্গে জেলা প্রশাসন কোনো রকম সহযোগিতা করছে না। আমাদেরকে জনপ্রতিনিধিদের বিভিন্ন কাজেও ডাকা হয় না। তাই আমারা ঠিক করছি প্রশাসন সহযোগিতা না করলেও আমরা মানুষের জন্য কাজ করব।”