হিলি: স্বাধীন ভারতে থেকেও ওঁরা পরাধীন। স্বাধীনতার স্বাদ কেমন তা তাঁদের কাছে এখনও অজানা। কারণ ছোট থেকেই তারা নিয়মের বেড়াজালে বড় হয়েছেন এবং স্বাধীনতা ঠিক কী তা তাঁরা জানেন না। এক দু’জন নয় এমন প্রায় ১০ হাজার জন মানুষ রয়েছেন যাঁরা স্বাধীন দেশে থেকেও পরাধীনতার মত বসবাস করতে হয়। এঁদের সকলের বাড়ি ভারতীয় ভূখণ্ড হলেও এঁরা বসবাস করেন দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার হিলি থানার তারকাঁটার ওপারে।
হিলি থানার অন্তর্গত এমন ১৪টি গ্রাম রয়েছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হাড়িপুকুর, উচ্চা গোবিন্দপুর, উজ্জাল, শ্রীকৃষ্ণপুর। এই ১৪ টি গ্রামে প্রায় ১০ হাজার মানুষের বসবাস। এই গ্রামের মানুষরা ভারতীয় এবং তারা ভারতীয় ভূখণ্ডেই বসবাস করে। তাদের ভোটার কার্ড থেকে আধারকার্ড, নাগরিক পরিচয়পত্রের সব কিছুই রয়েছে। কিন্তু আর পাঁচজনের থেকে এদের জীবনযাত্রা সম্পূর্ণ আলাদা। আর পাঁচজন ভারতীয় থেকে আলাদা তাঁরা। তারকাঁটার ওপারে বাস করেন এঁরা। আর তারকাঁটায় প্রহরায় থাকে বিএসএফ। যেখানে ওপারের ভারতীয়দের যাওয়া আসার জন্য অনুমতি নিতে হয়। এছাড়াও পরিচয়পত্র দেখাতে হয়। যেকোনও জিনিস আনতে বা নিতে যেতেও নানা রকম হয়রানির মুখে পড়তে হয় বাসিন্দাদের। এমনকি নিজের জমির ফসল বিক্রি করতে গেলেও আগে থেকে অনুমতি নিতে হয় বিএসএফেরষ অনুমতি না পেলে তা বিক্রি করা একপ্রকার অসম্ভব।
অন্যদিকে এঁদের বহু আত্মীয় স্বজন রয়েছেন যারা যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছেন তারকাঁটার ওপারের ভারতীয় আত্মীয়দের সঙ্গে। এদিকে দেশ ১৯৪৭ সালে ১৫ আগস্ট স্বাধীন হয়েছে। এবার ৭৫ তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করবে ভারতবর্ষ। কিন্তু তাঁদের কাছে আজও মনে হয়, তাঁরা কোথাও যেন পরাধীন রয়েছেন।
প্রতিদিন সকাল ৬ টা থেকে সন্ধ্যে ৬ টা পর্যন্ত তারকাঁটার গেট খোলা থাকে। সেই সময়ের মধ্যে দিয়ে কেউ আসতে বা যেতে পারেন। সবচেয়ে সমস্যার মুখোমুখি হন পড়ুয়ারা। আবার রাতবিরেতে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে সেটাও বিএসএফকে জানাতে হয়। তারা অবশ্য নিজেদের অ্যাম্বুল্যান্স বা গাড়ি এই ক্ষেত্রে গ্রামবাসীদের দিয়ে সাহায্য করেন। তবু অনুমতি ছাড়া কোন এখানে যেন কোন পাতাও নড়তে পারে না। সবাই অনুমতির অপেক্ষায়!
তাই তারকাঁটার ওপারে স্থানীয়দের দাবি, তারকাঁটা রেফারে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হোক। যার ফলে তাঁরা স্বাধীন ভাবে বসবাস করতে পারবেন। ভারত সরকার ও রাজ্য সরকারের কাছে ৭৫তম স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে এমনই আবেদন স্থানীয়দের। আরও পড়ুন: হায় স্বাধীনতা! গান্ধীজির সহযোদ্ধা তথা এলাকার প্রথম বিধায়কের পরিবারও ‘কাটমানি’র শিকার!