TMC Councillor: সংসার টানতে টোটো চালাচ্ছেন তৃণমূল কাউন্সিলর

TV9 Bangla Digital | Edited By: অবন্তিকা প্রামাণিক

Jan 22, 2023 | 11:04 AM

Balurghat: বালুরঘাট শহরের ছয় নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শ্যামল কুমার সাহা। তিনি ওই ওয়ার্ডেরই গৌড়ীয় মঠ এলাকায় নিজের বাড়িতে স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন।

TMC Councillor: সংসার টানতে টোটো চালাচ্ছেন তৃণমূল কাউন্সিলর
টোটো চালাচ্ছেন তৃণমূল কাউন্সিলর (নিজস্ব চিত্র)

Follow Us

বালুরঘাট: শাসক দলের কাউন্সিলর (councillor)।  চালান টোটোও। দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট পুরসভার (Balurghat Municipality) ৬ নম্বর ওয়ার্ডের এমনই চিত্র দেখা গেল। বিগত একমাস ধরে কাউন্সিলর শ্যামল কুমার সাহা টোটো চালাচ্ছেন সংসার চালাতে। একদিকে যখন বিভিন্ন দুর্নীতিতে শাসকদলের বিভিন্ন নেতা কর্মীদের নাম জড়িয়েছে, জনসাধারণের টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ তুলেছে বিরোধীরা। তখনই শ্যামলবাবুর এই চিত্র অবিশ্বাস্য মনে হয়েছে এলাকাবাসীর।

বালুরঘাট শহরের ছয় নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শ্যামল কুমার সাহা। তিনি ওই ওয়ার্ডেরই গৌড়ীয় মঠ এলাকায় নিজের বাড়িতে স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন। একমাত্র মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। তিনি পেশায় ইলেকট্রিক মিস্ত্রি। তৃণমূল বোর্ড আসার পরে শ্যামলবাবুকে পুরসভায় দৈনিক মজুরিতে কাজ দেওয়া হয়েছিল। তিনি পুরসভার হয়েই ওই ইলেকট্রিকের কাজ করতেন। এ দিকে, দলের কাজ সামলে, পেশা টিকিয়ে রাখা চাপ হচ্ছিল। তাই বাইরে ব্যক্তিগতভাবে যে কাজগুলি তিনি করতেন, সেগুলিকে ধীরে ধীরে বন্ধ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু বিপর্যয় আসে ২০২২ সালে। আচমকা দল ও দলের কর্মীরা তাঁকে তৃণমূলের প্রার্থী হতে জোরাজুরি শুরু করে। তিনি প্রার্থী হন এবং ওই ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। আর এই কাউন্সিলর হতেই তার পুরসভার দৈনিক মজুরিতে যে কাজ করতেন সেই কাজটি বাদ হয়ে যায়। কাউন্সিলরের সান্মানিক ভাতা তিনি পেতে শুরু করলেও, ওই টাকায় সংসার চালানো দুষ্কর হয়ে যাচ্ছিল।

কীভাবে সংসার চালানোর টাকা আসবে সেই ভাবনা তাঁকে গ্রাস করে ফেলেছিল। অবশেষে তিনি কয়েক মাস আগে টোটো কেনেন। এবং তা চালানোর সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু ওয়ার্ড এর বাসিন্দাদের সমস্যা মেটানো, পুরসভার অফিসে গিয়ে কাজ আদায় করা সহ বিভিন্ন দৈনন্দিন কাজগুলি করতে গিয়ে টোটো কখন চালাবেন, সেই ভাবনাও আসে। শেষ পর্যন্ত তিনি সকাল ও রাতের বেলাকে বেছে নেন টোটো চালানোর জন্য। খুব ভোরে উঠে সকাল দশটা পর্যন্ত তিনি টোটো চালান শহর ও শহরতলিতে। আবার দলের কাজ শেষ করে রাতে টোটো চালান। দিনে প্রায় ২০০ – ২৫০ টাকা উপার্জন হয়৷ যা দিয়ে বাড়ির বাজার করে দিয়েই, ফের নেমে পড়েন জনসেবার কাজে। যার ফলে গত এক মাস থেকে একরকম স্বচ্ছল ভাবেই সংসার চলছে শ্যামলবাবুর।

এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা মন্টুলাল চক্রবর্তী ও জগদ্বন্ধু সাহা জানিয়েছেন, তাঁদের কাউন্সিলর সঠিকভাবে নাগরিক পরিষেবা দেন। এরপর নিজের সংসার চালাতে টোটো চালান। শ্যামলবাবু স্বচ্ছ ভাবমূর্তির লোক বলেই পরিচিত। সেই জায়গা থেকে তার জনপ্রিয়তা অনেক বেশি এলাকায়।

এ বিষয়ে তৃণমূলের জেলা সভাপতি মৃণাল সরকার বলেন, “শ্যামলবাবু যেমন স্বচ্ছ ভাবমূর্তির, এটাই হল নতুন তৃণমূল। আপনারা বিভিন্ন সময় দেখেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা ও বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নতুন তৃণমূলের কথা বলছেন, এটাই হল নতুন তৃণমূল। এমন একজন স্বছ ভাবমূর্তির কাউন্সিলর স্যালুট জানাই আমরা।” এ বিষয়ে বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক বাপি সরকার বলেন, “এমন ঘটনা এর আগেও দেখেছেন। তবে এইসব তৃণমূল নেতারা কত দিন নিজের জায়গায় ঠিক থাকতে পারবেন তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।”

এ বিষয়ে ছয় নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শ্যামল কুমার সাহা বলেন, “কাউন্সিলর হিসেবে যা ভাতা পায়, তাতেই খুশি। তবে এই ভাতায় সংসার চলে না। তাই টোটোই ভরসা। মাস খানেক আগে টোটো কিনেছি। প্রতিদিন সকাল ও রাতে টোটো চালান। কোনও দিন ২০০, আবার কোনও দিন ২৫০ টাকা রোজগার হয়। তাতেই সংসার চলে। এই কাজে লজ্জা নয়, বরং গর্ববোধ করি। চুরি চামারি করে নয়, খেটেই তো খাচ্ছি। আগামী দিনে এমনই থাকতে চাই।”

Next Article