Balurghat Dandi: রকেটের মতো উত্থান চক্রবর্তী পরিবারের বধূর, দণ্ডিকাণ্ডে নাম জড়াতেই কেন ‘না ঘরকা না ঘাটকা’ তৃণমূলের প্রদীপ্তা

Rupak Sarkar | Edited By: অবন্তিকা প্রামাণিক

May 07, 2023 | 6:28 PM

pradipta chakraborty: ২০২৩-এর এপ্রিল মাসে আদিবাসী তিন মহিলাকে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর রাস্তায় দণ্ডি কাটানো হয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে। সেই ঘটনায় নাম জড়ায় তৃণমূল নেত্রী প্রদীপ্তার।

Balurghat Dandi: রকেটের মতো উত্থান চক্রবর্তী পরিবারের বধূর, দণ্ডিকাণ্ডে নাম জড়াতেই কেন ‘না ঘরকা না ঘাটকা’ তৃণমূলের প্রদীপ্তা
প্রদীপ্তা চক্রবর্তী (নিজস্ব চিত্র)

Follow Us

বালুরঘাট: সালটা ২০২১। ভরা সময়। রাজনীতিতে তরতর করে উপরে উঠছেন তৃণমূল নেত্রী প্রদীপ্তা চক্রবর্তী। দলও তাঁর কাজে এক প্রকার সন্তুষ্টই ছিল বলা চলে। যার জেরে তৃণমূল মহিলা জেলা সভাপতির পদ, বালুরঘাট পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যানের পদ-সহ নানা পদে বাসানো হয় তাঁকে। তবে সেই সুখ বোধহয় খুব বেশীদিন স্থায়ী হল না। ২০২৩-এর এপ্রিল মাসে আদিবাসী তিন মহিলাকে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর রাস্তায় দণ্ডি কাটানো হয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে। পরে প্রদীপ্তাদেবীর হাত ধরে ফের তৃণমূলে যোগদান করেন ওই তিনজন। এই ঘটনায় নাম জড়ায় তৃণমূল নেত্রী প্রদীপ্তার। জল গড়ায় থানা পর্যন্ত। তাঁকে আইনি নোটিসও পাঠায় পুলিশ। আর পঞ্চায়েত ভোটের মুখে এই হেন ঘটনায় অস্বস্তিতেও পড়ে শাসক শিবির। এরপরই একের পর এক পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় প্রদীপ্তাকে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে প্রদীপ্তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কার্যত অন্ধকারময় হয়ে গিয়েছে। ওই অন্ধকার থেকে তার ফেরা অসম্ভব হয়ে পড়েছে বলে মনে করছে জেলার রাজনৈতিক মহলের একাংশ। আর দণ্ডিকাণ্ডে প্রদীপ্তার গ্রেফতারের আশঙ্কা দেখছেন অনেকেই।

এক নজরে প্রদীপ্তার বায়ো-বৃত্তান্ত…

তৃণমূল নেত্রীর শ্বশুর ছিলেন প্রাক্তন পূর্তমন্ত্রী। স্বামী বর্তমানে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার সরকারি আইনজীবী। চক্রবর্তী পরিবারের প্রভাব ও প্রতিপত্তি যথেষ্ট রয়েছে। ২০২১ সালে শঙ্কর চক্রবর্তী-সহ চক্রবর্তী পরিবারের কেউ গত বিধানসভায় টিকিট পাননি। তারপরই রাজনীতির আঙিনায় সম্পূর্ণ ভাবে প্রবেশ প্রদীপ্তা চক্রবর্তীর। রাজনীতিতে নেমেই একের পর এক ছক্কা হাঁকিয়েছেন নেত্রী। বরাবরই রাজনীতির আঙিনায় চমক দিতে পছন্দ করতেন প্রদীপ্তা চক্রবর্তী। পাশাপাশি থাকত যে কোনও কর্মসূচিকে ঘিরে নতুনত্ব। গত দু’বছরে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় নিজের প্রভাব যথেষ্ট বিস্তার করেছেন তিনি। যার ফল স্বরূপ ২০২২ সালে বালুরঘাট পুরসভা নির্বাচনে টিকিটও পান প্রদীপ্তা চক্রবর্তী।

বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের ওয়ার্ড থেকে লড়েন প্রদীপ্তা। পরবর্তীতে ভোটে জয়ী হয়ে হন পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান। এমনকী মহিলা তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভানেত্রী পদও তিনি পান। ভাল কাজ করার জন্য দ্বিতীয় বারের জন্য এই পদে পুনর্বহাল রাখে দল। জেলার রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তিনি বালুরঘাটের চক্রবর্তী পরিবারের উত্তরসূরি হয়ে রাজনীতিতে নামেন। তবে এই দণ্ডিকাণ্ডে নাম জড়ানোয় এখন তাঁর পূর্বসূরিরাও বিপাকে পড়ছেন।

প্রদীপ্তার রাজনৈতিক উত্থান

২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের পর বালুরঘাটের রাজনীতিতে দু’জনের দ্রুত গতিতে উত্থান হয়েছে। তার মধ্যে একজন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। অন্যজন হলেন দণ্ডিকাণ্ডে অভিযুক্ত প্রদীপ্তা চক্রবর্তী। ষাটের দশকে জেলা কংগ্রেসের সভাপতি ব্যোমকেশ চক্রবর্তীর পরিবারের বধূ তিনি। শ্বশুর মশাই শঙ্কর চক্রবর্তী ছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন পূর্তমন্ত্রী। সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ বলেও পরিচিত।

২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে শঙ্করবাবু হেরে গেলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিন্তু তাঁকে একজন সৎ ব্যক্তিত্ব হিসেবেই মনে রেখেছেন। সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ পদ সামলেছেন তিনি। তবে জেলার অন্দরে কান পাতলে শোনা যায়, শঙ্করবাবুকে কেন্দ্র করে অনুগামী মহল ততটা গড়ে ওঠেনি। সেই কারণেই হয়ত ২০২১ সালে তাঁকে আর নির্বাচনে দাঁড় করানো হয়নি। সে বার বালুরঘাট থেকে তৃণমূলের প্রার্থী করা হয় শেখর দাসগুপ্তকে। প্রার্থী করার আগে শেখর দাসগুপ্তকে তৃণমূলে যোগদান করানো হয়। তবে যোগদানের দিন জেলা কার্যালয়ে ঢুকতে পারেননি মন্ত্রী বিপ্লব মিত্র সহ অন্যান্য জেলা নেতৃত্বরা।

রাস্তাতেই শেখর দাসগুপ্তকে তৃণমূলে যোগদান করানো হয়। অভিযোগ, শেখর দাসগুপ্ত যাতে প্রার্থী না হয় তার জন্য সব রকম চেষ্টা করা হয়েছিল চক্রবর্তী পরিবার। তবে পরে তৃণমূলে যোগদান শুধু নয় বালুরঘাট থেকে লড়েছিলেন শেখর দাসগুপ্ত। যদিও তিনি হেরে যান বিজেপি প্রার্থী অশোক কুমার লাহিড়ীর কাছে।

এরপরই সরাসরি রাজনীতিতে নেমে পড়েন চক্রবর্তী পরিবারের পুত্রবধূ প্রদীপ্তা চক্রবর্তী । তবে কিন্তু সেবার বিধানসভার টিকিট না পেলেও, বলা হয় প্রদীপ্তা কলকাতা ঘরানার রাজনীতি জেলায় আমদানি করতে চেয়েছিলেন। ক্রমেই উত্থান হতে থাকে প্রদীপ্তার। একের পর এক তৃণমূল মহিলা জেলা সভাপতির পদ, বালুরঘাট পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যানের পদ সহ নানা পদে উত্থান হতে থাকে তাঁর। এমনকী জেলা কোর কমিটিতেও ঠাঁই পান তিনি।

এ দিকে জেলায় মন্ত্রী গোষ্ঠী বিপ্লব মিত্রের বিরুদ্ধ শিবিরের অন্যতম মুখও হয়ে উঠেছিলেন প্রদীপ্তা চক্রবর্তী। জানা যায়, বালুরঘাট পুরসভার চেয়ারম্যান অশোক মিত্রকে সরিয়ে, প্রদীপ্তা চক্রবর্তীকেই চেয়ারম্যান প্রজেক্ট করতেও লেগে পড়েছিল একদল কাউন্সিলর ও নেতারা। প্রদীপ্তা চক্রবর্তীকে কেন্দ্র করে একটি অনুগামী বৃত্তও তৈরি হতে শুরু করেছিল বলেই মত ওয়াকিবহাল মহলের। প্রদীপ্তা চক্রবর্তী দলের প্রায় সব কর্মসূচিতেই, ইনোভেটিভ কর্মসূচির জন্য প্রসিদ্ধ হয়ে উঠেছিলেন। তার এই দ্রুত উত্থানই তাঁকে মুখ থুবড়ে ফেলেছে বলে মনে করেন জেলাবাসীর একাংশ।

দণ্ডিকাণ্ডের জের…

দণ্ডিকাণ্ডে প্রদীপ্তার চক্রবর্তীর নাম যেভাবে তাতে করে মুখ পুড়েছে দলের। আদিবাসী ভোট ব্যাঙ্ক দূরে সরে যেতে পারে। এই আশঙ্কা করেই পুলিশের রিপোর্টকে ভরসা না করে, তৃণমূল একের পর এক পদ থেকে প্রদীপ্তাকে সরাতে শুরু করেছে। সব হারিয়ে এখন কার্যত রাজনৈতিক নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন প্রদীপ্তা চক্রবর্তী। এদিকে পুলিশের তরফেও আইনি নোটিস পাঠানো হয়েছে। যার ফলে প্রদীপ্তা চক্রবর্তীর অবস্থা কার্যত ‘না ঘর কা-না ঘাটকা’।

দণ্ডিকাণ্ড এতটাই আদিবাসী মহলে প্রভাব ফেলেছে যে, খোদ তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। ফলে দণ্ডির ঘটনার প্রায় এক মাস পরেও তাকে ভাইস চেয়ারম্যান পদে রেখে দেওয়া হলেও, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের এক নির্দেশে রাতারাতি তাকে সব পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

আদিবাসীদের বিক্ষোভ আঁচ করে আগামীতে প্রদীপ্তাকে গ্রেফতারও করা হতে পারে বলে পুলিশ সুত্রে জানা গেছে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এর এমন নির্দেশের পরে প্রদীপ্তা চক্রবর্তীর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কার্যত অন্ধকারময় হয়ে গিয়েছে। ওই অন্ধকার থেকে তার ফেরা কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়েছে বলে মনে করছে জেলার রাজনৈতিক মহলের একাংশ। এদিকে আগামী দিনে পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে কি না সেটাই এখন দেখার।

প্রদীপ্তার প্রতিক্রিয়া…

এদিকে দণ্ডি কান্ডের পর থেকে আর সংবাদমাধ্যম মুখোমুখি হননি প্রদীপ্তা চক্রবর্তী। সাংবাদিকরা ফোন করলে কখনো ফোন ধরেননি। আবার কখনো ফোন সুইচ অফ করে রাখেন। বাড়িতে গেলে বলা হয় ‘ম্যাডাম বাড়িতে নেই’।

অন্যদিকে রাজনৈতিক মহলের একাংশের দাবি দণ্ডি কান্ডের বিষয়টি জেলা নেতৃত্ব চাইলেই পুরো বিষয়টি সামাল দিতে পারতেন। তবে দল তা না করে আগেই প্রদীপ্তার পাশ থেকে সরে এসেছে। এভাবে যার উত্থান হচ্ছিল সেটা কি দলের একাংশের কাছে সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছিল, সেই জায়গা থেকেই কি তাকে ছেটে ফেলা হল? প্রশ্ন হাজারো থাকলেও নেই উত্তর।

Next Article