শিলিগুড়ি: টার্গেট আদিবাসী, হতদরিদ্ররাই, ধান বিক্রির কেলেঙ্কারির খোঁজ এবার উত্তরেও, বছরে ভাড়া পাঁচশো, বহু ভুয়ো আকাউন্টের খোঁজ। পুলিশে অভিযোগ দায়ের। মাঝপথেই থমকে তদন্ত। ইডিকে চিঠি দিয়ে আমন্ত্রণ প্রতারিতদের। শিলিগুড়িতে ধান বিক্রিতে দুর্নীতির পর্দাফাঁস। শিলিগুড়ি মহকুমার বিভিন্ন চা বাগানে ভুয়ো রেশন কার্ড দিয়ে কোটি কোটি টাকার রেশন তুলে নিয়ে খোলা বাজারে বিক্রির অভিযোগ আগেই উঠেছিল। এবার ধান কেনার ক্ষেত্রেও কেলেঙ্কারির নানা অভিযোগ সামনে আসছে।
অভিযোগ, গত এক দশকে ধান কেনার ক্ষেত্রে সরাসরি চাষিদের থেকে ধান কেনার বদলে দালাল মারফৎ কম দামে ধান কেনা হলেও, এলাকার বাসিন্দাদের নামে ব্যাঙ্ক আকাউন্ট খুলে ধান চাষি দেখিয়ে প্রকল্পের টাকা তাদের আকাউন্টে পাঠিয়ে ফের তা তুলে নেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে স্থানীয় বাসিন্দা ও চা শ্রমিক আদিবাসীদেরই টার্গেট করে তাঁদের হাতে আকাউন্ট খোলার ভাড়া হিসেবে পাঁচশো টাকা ধরিয়ে কেটে পড়েছেন দালালেরা। এর জেরে সরকারি প্রকল্পের সুবিধাও পাননি প্রকৃত ধানচাষিরা।
ধান চাষি দেখিয়ে যাঁদের কাছ থেকে ধান কেনা হয়েছে দেখানো হয়েছে, তাঁদের কারও চাষের জমি দূর অস্ত, সামান্য বাড়িও নেই অনেকের। ধান চাষের সঙ্গে তারা কোনও কালেই যুক্তই ছিলেন না। গ্রামে গ্রামে দালাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে তাঁদের ব্যাঙ্ক আকাউন্ট খুলিয়ে সামান্য টাকা তাঁদের হাতে ধরিয়ে দেন। এভাবে সরকারি ধান কেনার টাকা নয়ছয়ে চাল কল মালিকদের যুক্ত থাকার অভিযোগ উঠলেও কখনই তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি খাদ্য দফতর। কাদের থেকে ধান কেনা হল, তাঁরা প্রকৃত ধান চাষি কিনা তাও খতিয়ে দেখা হয় নি। যার সুযোগ নিয়ে প্রতি বছর বহাল তবিয়তে চলেছে এই কারবার।
হতিঘিষা, মণিরাম, বুড়াগঞ্জ,নকশালবাড়ি, খড়িবাড়িতে এমন বহু মানুষের খোঁজ মিলেছে যাদের কাছে পৌঁছেছিল দালাল নেটওয়ার্ক। আকাউন্ট খুললেই পাঁচশো টাকা মিলবে বলে লোভ দেখানো হয়। আকাউন্ট খোলা হয় ওই বাসিন্দাদের নথি দিয়ে। কিন্তু আকাউন্ট রিলেটেড পাশবই বা ডেবিট কার্ড সবই থাকত দালালদের কাছেই। মোবাইলে টেক্সট ম্যাসেজে শুধু জানতে পারতেন তাঁদের আকাউন্টে ধান বিক্রির টাকা ঢুকেছে। ফের তা তুলেও নিয়েছেন কেউ। এরপর বাড়িতে এসে পাঁচশো টাকা হাতে গুঁজে দিয়ে যেত দালাল নেটওয়ার্ক।
ইডি সূত্রে খবর, এভাবেই দালাল নেটওয়ার্ক কাজে লাগিয়ে কুইন্টাল পিছু দুশো টাকা লাভ করেছে বিভিন্ন চাল কল। যার ভাগের টাকা পৌছেছে খাস কলকাতাতেও। সব মিলিয়ে রাজ্যে এই দুর্নীতির ক্ষেত্রে টাকার অঙ্ক কয়েকশো কোটি টাকা।চাষিরাই বলছেন, “আমাদের অ্যাকাউন্টে যে টাকা ঢুকেছে, তাতে তো আমরা যে কোনও মুহূর্তে ফেঁসে যেতে পারি। যাতে আমাদের ভবিষ্যতে কোনও অসুবিধা না হয়, সেটা দেখা হোক।”
শুধু এই হাতিঘিষা এলাকাই নয়, নকশালবাড়ির কিলাঘাটা এলাকায় এমন বহু বাসিন্দার দেখা মিলেছে, যাঁদের অ্যাকাউন্টে বছর কয়েক আগে বহু টাকা ঢুকেছিল। ধান বিক্রির সেই টাকা ফের কেউ তুলেও নেয়। এ নিয়ে পুলিশের কাছেও অভিযোগ জানিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু সে তদন্তে শাসক ঘনিষ্ট এক ব্যক্তি গ্রেফতার হলেও মাঝপথেই ধামাচাপা পড়ে যায় তদন্ত। সেই মামলা এখনো বিচারাধীন। এলাকার বাসিন্দাদের দাবি সর্ষের মধ্যেই ভূত থাকায় সেই অভিযোগের তদন্ত আর এগোয় নি।
কাউকে মুরগি, কাউকে ছাগল কেনার টাকা দেওয়া হবে বলেই লোভ দেখিয়ে নথি নিয়ে আকাউন্ট খোলা হয়। এরপর ম্যাসেজ দেখে সব জানতে পারেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সন্দেহ হতেই ব্যাঙ্কে গিয়ে দেখা যায় আকাউন্টগুলিতে হাজার হাজার টাকা জমা পড়েছে, আবার তুলেও নেওয়া হয়েছে। এরপর পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের হয়। গ্র্বপ্তার হন মাধব রায় নামের এক ব্যক্তি। পরে তিনি জামিন পান। সে মামলা এখনও বিচারাধীন। বাসিন্দারা চাইছেন ধান কেলেঙ্কারির তদন্তে এবার ইডি আসুক নকশালবাড়ি এলাকায়। তাই সব জানিয়ে ইডিকে চিঠি দিয়েছেন প্রতারিত বহু মানুষ।