শিলিগুড়ি: সিকিমে বিপর্যয়ে বিধ্বস্ত উত্তরবঙ্গও। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দার্জিলিঙ, শিলিগুড়ি, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি। তিস্তা পাড়ের বাসিন্দারা হারিয়েছেন ভিটেমাটি। দুর্গতদের দেখতে দিল্লি থেকে সরাসরি উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়েছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। উত্তরবঙ্গের বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন তিনি। রংধামালি ক্যাম্পে আশ্রিত দুর্গতদের সঙ্গে কথা বলেন। রাজ্য়পালকে দেখে নিজেদের অবস্থার কথা জানান দুর্গতরা। দুর্গতদের এক হাজার টাকা করে অ্যাকাউন্টে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন রাজ্যপাল। কিন্তু রাজ্যপালের কাছে দুর্গতরা একশো দিনের কাজ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। কেন একশো দিনের কাজ বন্ধ? কেনই বা তাঁরা টাকা পাচ্ছেন না, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। রাজ্যপাল তাঁদের অভাব অভিযোগ শুনেছেন। দুই সরকারের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন রাজ্যপাল।
মুখ্যসচিবের কাছে বন্যা কবলিত এলাকার রিপোর্ট তলব করেছিলেন রাজ্যপাল। বোসের কাছে রিপোর্টও পাঠিয়েছেন মুখ্যসচিব। সিকিমের রাজ্যপালের সঙ্গেও কথা বলেছেন বোস।
রাজ্যপাল এদিন বাগডোগরা বিমানবন্দরে নেমে সরাসির আটমাইল এলাকায় চলে যান। সেখানে ধস বিধ্বস্ত এলাকাগুলি ঘুরে দেখেন। রাজ্যপাল দুর্গতদের জন্য নিয়ে আসেন মিষ্টির প্যাকেট। সকলকে মিষ্টি বিতরণ করেন তিনি। দুর্গতদের একজন বললেন, “রাজ্যপাল আমাদের এক হাজার করে দিয়েছেন বটে, কিন্তু এখন আমাদের ২-৩ হাজার টাকা করে ওষুধেই লাগছে। ঘর নাই, বাড়ি নাই, এখন আমরা কীভাবে থাকি?” আরেক বৃদ্ধা বলেন, “ঘর তো নাই, গরু, ছাগল, হাঁস কিছুই নেই। সব হারিয়েছি আমরা। এই টাকাতে আমাদের কতটা কী হবে!”
ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে রাজ্যপাল তিস্তার বাঁধ পরিদর্শন করেন। সেখানে দাঁড়িয়ে রাজ্যপাল জানিয়ে দেন, দুর্গতদের জন্য তিনি তাঁর এক মাসের বেতন দান করবেন। জল বিধ্বস্ত এলাকা থেকে সরেছে কিছুটা। বাসিন্দারা ব্যস্ত নিজেদের বেঁচে থাকা গৃহস্থালির জিনিস সরাতে।
তিস্তার ঘোলাটে জল গ্রাস করেছে সব কিছু। এখন জলে ভেসে আসতে শুরু করেছে দেহ। সঙ্গে চটি, জামাকাপড়, বাসনপত্র, রান্নার গ্যাসের অর্ধেক সিলিন্ডার। তিস্তা পাড়ের দু’পাড়ের বাসিন্দাদের জীবিকা মূলত নির্বাহ হয় চাষাবাদ আর চা বাগানে কাজ করেন। সঙ্গে বাড়িতে থাকা পোষ্য গরু, ছাগল, হাঁস পালন করে। এখন সবই তিস্তার গ্রাসে। অদূর ভবিষ্যৎ কী, তা এই মুহূর্তে ভাবতেও পারছেন না সর্বহারা। তাঁরা কেবল ভাবছেন, ‘আজ তো গেল, কালকের দিনটা চলবে কীভাবে?’