শিলিগুড়ি: “পাহাড় শান্তি চায়, এই প্রথম পাহাড়ে এত শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হল। পাহাড় আর কোনও অশান্তি, বিশৃঙ্খলা বরদাস্ত করবে না।” জিটিএ বোর্ডের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে বললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “পাহাড় উন্নয়ন চায়, শান্তি চায়। সেই কারণেই পাহাড় জিটিএ চায়। এত শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আগে দেখিনি। গত ১০ বছরে আমরা জিটিএকে ৭ হাজার কোটি টাকা দিয়েছি। পাহাড়ে শান্তি থাকলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে।”
প্রসঙ্গত, দার্জিলিঙে ম্যাল চৌরাস্তায় জিটিএ-র শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান হয়। সেই মঞ্চে দাঁড়িয়েই মুখ্যমন্ত্রীর পাহাড়বাসীর উদ্দেশে বললেন, “আগের কথা বলতে আর চাই না। আপনারা আমাকে একটা প্রতিজ্ঞা করুন, পাহাড়ে আর যেন কোনও নেতা গড়বড় করতে না পারেন।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এটা কি তবে ঘুরপথে বিমল গুরুংকেই বার্তা দিতে চাইলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? মার্চ মাসে পাহাড় সফরে গিয়েই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে এসেছিলেন, যত দ্রুত সম্ভব রাজ্য প্রশাসন জিটিএ নির্বাচন করাতে চায়। এদিকে, সদ্য বিজেপির হাত ছেড়ে ঘাসফুলের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠার চেষ্টায় রত বিমল গুরুং দাবি করেছিলেন, পাহাড়ের ১১টি গোর্খা জনগোষ্ঠীতে যতক্ষণ না তফশিলি জাতির তকমা দেওয়া হচ্ছে, ততক্ষণ সমাধান সম্ভব নয়। স্থায়ী সমাধান বলতে কী বলতে চেয়েছিলেন গুরুং? তবে কি ঘুরপথে পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবি জোরাল করতে চেয়েছিলেন তিনি? তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে ফের জল্পনা তুঙ্গে ওঠে।
উল্লেখ্য, ঠিক দশ বছর আগে পিন্টেল ভিলেজে (কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন পি চিদাম্বরম) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে একটি চুক্তি হয়। পাহাড়বাসীদের কথায়, এই চুক্তিই নাকি ‘স্প্রিং বোর্ড টু গোর্খাল্যান্ড’ অর্থাৎ গোর্খাল্যান্ড চাওয়ার প্রাথমিক ধাপ।
এই পরিস্থিতিতে দশ বছর পর জিটিএ নির্বাচন হল। তা থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিলেন বিমল গুরুং। জিটিএ নির্বাচনে পাহাড়ে নতুন শক্তি হিসাবে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে অনিত থাপার দল ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক পার্টি। গত পুরভোটে আবার শক্তি প্রদর্শন করেছিল হামরো পার্টি। এই পরিস্থিতিতে জিটিএ নির্বাচনে পাহাড়ে এবার খাতা খোলে তৃণমূলও। এদিন শপথ গ্রহণের পরও অনীত থাপা বললেন, তাঁদের মূল লক্ষ্য পাহাড়ের উন্নয়ন।
এদিনের সভা থেকে গোর্খাল্যান্ডের নাম না করেও মুখ্যমন্ত্রী বললেন, “১০ বছরে আমরা জিটিএকে ৭ হাজার কোটি টাকা দিয়েছি।” কিন্তু তাঁর না বলা কথা ব্যক্ত করেছে, পাহাড় রয়ে গিয়েছে সেই তিমিরেই। তিনি বললেন, “এত শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আগে দেখিনি। পাহাড়ে শান্তি থাকলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে।”