নিজের বাড়ির জঞ্জাল অন্যের বাড়ির সামনে ফেলা নিয়ে মাঝেমধ্যেই ঝগড়া বাঁধে পাড়া-পড়শিদের মধ্যে। এমন ঘটনা আকছার আমাদের চারপাশে ঘটেই থাকে। কিন্তু যদি একটা গোটা রাজ্যের জঞ্জাল এসে জড়ো হয় অন্য রাজ্যে, তখন বিষয়টা আর মোটেই সহজ থাকে না। এমন ঘটনাই ঘটে চলেছে উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়িতে। পড়শি রাজ্য সিকিমের সব বর্জ্য এনে জমা করা হচ্ছে শিলিগুড়ির বৈকুন্ঠপুর বনাঞ্চলে। যার ফলে দেদার ক্ষতি হচ্ছে পরিবেশের। সঙ্গে জঞ্জালের জ্বালায় অতিষ্ট গ্রামবাসীরাও। অভিযোগ বৈকুন্ঠপুর বনাঞ্চলে জঞ্জাল জড়ো করার জেরে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে এলাকায়। সামনেই রয়েছে শিশুদের স্কুল। কিন্তু এতই তীব্র গন্ধ যে তাঁদের স্কুলে যেতেও সমস্যা হচ্ছে।
কার অনুমতি নিয়ে এইভাবে বর্জ্য ফেলা হল? প্রশ্ন তুলেছেন পরিবেশ প্রেমীরাও। শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটে গিয়ে শিলিগুড়ির পরিবেশপ্রেমীরা যৌথভাবে নগরপাল সি সুধাকরের কাছে এফআইআর করেছেন। বিষয়টি নিয়ে আমবাড়ি পুলিশ স্টেশনেও একটি এফআইআর করা হয়েছে।
শিলিগুড়ি বৈকুন্ঠপুর জঙ্গলের ফাড়াবাড়ি মোড়েই আছে জনবসতি। সেই জঙ্গল থেকেই মাত্র ১৫ফুট দূরে রয়েছে পাঁচিলে ঘেরা একটি ব্যক্তিগত মালিকানাধীন ফাঁকা জমি। অভিযোগ বেশ কয়ক সপ্তাহ ধরে সেখানে এনেই জমা করা হচ্ছিল বর্জ্য পদার্থ। খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায় ওই বর্জ্য সিকিমের লোয়ার মারতাম ডাম্পিং গ্রাউন্ড থেকে এনেই ফেলা হচ্ছিল সেই সব ময়লা।
ইতিমধ্যেই আবর্জনা ভর্তি চারটি ট্রাক আটক করেছে এলাকাবাসীরা। পুলিশ খবর দেওয়ার পরে পুলিশ এসে সেই সব ট্রাক আটক করেছে। ক্ষোভের মুখে পড়ে চালক সিকিমের ডাম্পিং গ্রাউন্ড থেকে ময়লা নিয়ে আসার ব্যপারটি স্বীকার করে নিয়েছেন।
প্রত্যক্ষ্যদর্শীদের একাংশের দাবি ওই জমির মালিক মুনাফার লোভে টাকার বিনিময়ে নিজের জমিতে ময়লা ফেলার অনুমতি দিয়েছেন। পরিবেশবিদদের মতে এই ভাবে ময়লা জমা করার ফলে জন স্বাস্থ্য এবং স্থানীয় বন্যপ্রাণ দুইয়ের উপরেই খারাপ প্রভাব পড়বে। এমনকি তা মাটি, জল এবং পরিবেশের উপরেও সূদুরপ্রসারী কুপ্রভাব ফেলবে বলে দাবি।
‘শিলিগুড়ি গ্রিন এনভায়রনমেন্ট প্রিজার্ভেশন সোসাইটি’র সম্পাদক দেবব্রত চক্রবর্তীও বলেন, “মাননীয় নগরপাল আমাদের কথা দিয়েছেন অবৈধ ক্রিয়াকলাপের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেওয়া হবে। আমবাড়ি পুলিশ স্টেশনেও এই নিয়ে কেস করা হয়েছে। কী করে একটা জনবসতি ও বনাঞ্চলের মাঝে একটা ডাম্পিং গ্রাউন্ড গড়ে উঠতে পারে?এর জন্য পরিবেশ যেমন দূষিত হচ্ছে, তেমনই সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে সাধারণ মানুষ এবং বন্যপ্রাণীদের।”