শিলিগুড়ি: শীতের রাত্রে ঠান্ডায় বসে ওরা। কারণ আগুন কেড়েছে ওদের সবটুকু। মাথার উপরের ছাদ হারিয়ে একটা গোটা রাত কেটেছে খোলা আকাশের নীচে। শনিবার শিলিগুড়ি ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার বিভীষিকা এখনও কাটেনি রানা বস্তির বাসিন্দাদের মন থেকে।
শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ সুভাষপল্লীর রান্না বস্তিতে আচমকা দাউদাউকে আগুন জ্বলে উঠতে দেখা যায়। ঘিঞ্জি এলাকায় হওয়ায় মুহূর্তেই বস্তির একাধিক বাড়ি চলে যায় আগুনের গ্রাসে। পুড়ে ছাই হয়ে যায় সহায়-সম্বলটুকু। খবর যায় দমকলে। স্থানীয়দের অভিযোগ, খবর দেওয়া হলেও বেশ খানিকটা দেরিতেই এলাকায় আসেন দমকল কর্মীরা।
এরপর আজ সকাল হতেই দেখা যায় খোলা আকাশের তলায় সব হারিয়ে ধ্বংসস্তুপে বসে আছেন এলাকাবাসী। শুধু হয়েছে উদ্ধারকাজ। স্থানীয় বাসিন্দারা চেষ্টা করেছেন ওই ধ্বংস-স্তুপের ভিতর থেকেই যদি কিছু সামগ্রী যা হয়ত ব্যবহারযোগ্য হতে পারে তা বের করে আনা যায়। এলাকায় অবস্থিত একটি টিনের বাড়ির একাংশও পুড়ে গিয়েছে। যেটুকু অবশিষ্ট রয়েছে তার ভিতরেই মানুষ চেষ্টা করছেন আশ্রয় নেওয়ার।
শিখা বিশ্বাস নামে এক মহিলা বলেন, ‘আমি রান্নার কাজ করি। রোজের মতো বের হয়ে যাই। আমার অন্তঃসত্ত্বা ছেলের বৌ বাড়িতে ছিল। ও ভয় পেয়ে যায়। চিৎকার করতে করতে বেরিয়ে পড়েন। অপর আর এক মহিলাকে দেখা গেল সন্তান সহ ধ্বংসস্তুপের ভিতর থেকে খোঁড়াখুঁড়ি করতে। তিনি জানালেন, ‘আমরা এমনই হত দরিদ্র পরিবার। তার মধ্যে সব টুকু শেষ হয়ে গিয়েছে। এখন যদি কেউ আর্থিক সাহায্য করে ভাল হয়।’
উল্লেখ্য, গতকাল একের পর এক সিলিন্ডার ব্লাস্ট করতে থাকে ওই বস্তিতে। আগুনের লেলিহান শিখায় ঢেকে যায় গোটা আকাশ। মোট ৮ থেকে ৯টি সিলিন্ডার ব্লাস্ট করে এদিন। এর জেরে তীব্রতাও আরও বেশ খানিকটা বেড়ে যায়। ঘটনা প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুভাষ সরকার বলেন, “প্রধানমন্ত্রী বাড়ি যদি তৈরি হত এরকমভাবে জতুগৃহের মতো অবস্থা তৈরি হত না। এত ছোট জায়গা, ঘিঞ্জি এলাকা হওয়ার কারণে দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে। দমকলও সহজে ঢুকতে পারেনি। অন্যান্য রাজ্যের সরকার বস্তিগুলি অবস্থা দেখে সেখানকার বাসিন্দাদের অন্যত্র সরিয়ে তাঁদের সুস্থ বাসস্থানের ব্যবস্থা করছে। তাঁদের সরকারিভাবে জমি পাট্টা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের রাজ্যে এ কাজ না হওয়ার কারণে আজ এত বস্তিবাসীদের এত দুর্গতি। আমরা বস্তিবাসীদের পাশে আছি।”