শিলিগুড়ি: অবৈধ নির্মাণ রুখতে পথে নেমেছে তৃণমূল পরিচালিত শিলিগুড়ি পুরনিগম। পুরনিগমের তালিকায় একাধিক অবৈধ নির্মাণ রয়েছে৷ একে একে সেই সব অবৈধ নির্মাণ ভেঙে গুঁড়িয়ে দিতে লাগাতার অভিযানে শুরু হতেই তা ধাক্কা খেল। সেই তালিকায় এবার উঠে এল তৃণমূল কংগ্রেসের ৪৭ নম্বর ওয়ার্ড কমিটির এক সাধারণ সম্পাদকের বাড়িও। আর সেই অবৈধ নির্মাণ ভাঙতে গিয়েই বিপাকে পড়ল শিলিগুড়ি পুরনিগম। রীতিমতো বিক্ষোভের মুখে পড়ে ফিরতে হল খালি হাতেই। অধরা থেকে গেল অবৈধ নির্মাণ। ঘটনাকে কেন্দ্র করে সরগরম শিলিগুড়ির রাজনৈতিক মহল। সরব গেরুয়া শিবির। যদিও শিলিগুড়ি পুরনিগমের মেয়র গৌতম দেব জানিয়েছেন, বিষয়টি পর্যালোচনা করা হবে। তারপর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
শিলিগুড়ি পুরনিগমের অধীন ৪৭ নম্বর ওয়ার্ডের পাতি কলোনির তিন নম্বর রাস্তায় অট্টালিকা সম বাড়ি রয়েছে স্থানীয় ওয়ার্ড তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক সৌমিত্র দেবনাথের। বাড়ির নীচ তলায় গড়ে তোলা হয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেসের নির্বাচনী কার্যালয়। কিন্তু সরকারি জমি দখল করে নির্মাণ কাজ হওয়ায় তা অবৈধ হিসেবে পুরনিগমের খাতায় লিপিবদ্ধ হয়। এরপরই অভিযানে নামে পুরনিগম।
পুর কর্মীরা নির্মাণ ভাঙার উদ্দেশ্যে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হতেই শুরু হয় প্রতিরোধ। দেখা যায় রীতিমতো তৃণমূলের ঝান্ডা লাগানো ওই অবৈধ নির্মাণের চতুর্দিকে। এছাড়াও অবৈধ নির্মাণের সামনে নির্বাচনী কার্যালয় হিসেবে চিহ্নিত একটি গ্যারাজের সামনে ঝুলছে মমতা অভিষেকের ছবি-সহ ব্যানার। এদিকে বিক্ষোভের মুখে পড়ে পিছু হটতে হয় পুর কর্মীদের। পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় বিধাননগর থানার পুলিশ।
এদিকে যে অবৈধ নির্মাণ ভাঙ্গতে গিয়ে বিপাকে পড়তে হল পুর কর্মীদের সেই বাড়ির মালিক স্থানীয় ওয়ার্ড তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদকের স্ত্রী’র দাবি স্থানীয় কাউন্সিলর মোটা টাকা দাবি করেছিলেন তাঁদের কাছে। তৃণমূল নেতার স্ত্রীর বক্তব্য, “অমরানন্দ দাস আমার স্বামীর থেকে ১০ লক্ষ টাকা চেয়েছিলেন। যেহেতু আমি বাড়ি বানাচ্ছি। আমি তো বেআইনি কিছু করছি না। তাহলে কেন এসব হচ্ছে? ” যদিও সমস্ত ঘটনা মিথ্যা বলে দাবি করেছেন স্থানীয় কাউন্সিলর অমরানন্দ দাস। তাঁর বক্তব্য, “৪৭ নম্বর ওয়ার্ডের অধিকাংশ বাড়িরই পাট্টা নেই। পাট্টা না থাকলে তো আর প্ল্যান করা যায় না। রামকৃষ্ণ ১, ২, ৩, প্রমোদনগর, পাতিকলোনির কিছু জায়গা পাট্টা হয়নি। ২৮০০ বাড়ির কোনও প্ল্যানই নেই। কিন্তু এখানে সবাই নিরিবিলি বাস করছে। কিন্তু এতদিনে পুলিশ নিয়ে কর্পোরেশন থেকে লোক আসেনি। ২ বছর ধরে এই ধরনের ঘটনা ঘটছে। বেছে বেছে ২ জনকে নোটিস করা হয়েছে।”
এদিকে সামগ্রিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে সুর চড়িয়েছেন বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। তিনি বলেন, “ইঞ্জিনিয়াররা একটি বাড়ি ভাঙতে গিয়েছিলেন। দেখা যায় সেই বাড়িটি তৃণমূলের পতাকা দিয়ে ঘেরা। ইঞ্জিনিয়ার, কর্পোরেশনের সদস্যরা মেয়রের নির্দেশে ফেরত আসেন। প্রশ্ন হচ্ছে, তৃণমূলের বোর্ড যখন একটি বিল্ডিং অবৈধ করে ভাঙতে যায়, তখন তৃণমূলের কর্মীরা সেটাকে বাঁচাতে দলের পতাকা লাগিয়ে দিচ্ছে!”
পুরনিগম সহ মেয়রের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলে ধরেছেন তিনি। বিদেশে থাকায় কাউন্সিলরের বক্তব্য মেলেনি। আর এ নিয়ে গৌতম দেব বিশদে কিছু বলতে চান নি।