শিলিগুড়িঃ তৃণমূল জমানায় জলপাইগুড়ি জেলার ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি থেকে পরপর দুবার জিতেছিলেন গৌতম দেব। মন্ত্রীও হন তিনি। ওই সময়কালেই এলাকায় শাসক নেতাদের একাংশ জমির কারবারে জড়িয়ে পড়তে শুরু করেন। এদিকে গজল ডোবায় মেগা ট্যুরিজম হাব তৈরি করেছে রাজ্য সরকার। ৬০০ কোটি টাকা বিনিয়োগও করেছে সরকার। ঢেলে সাজানো হয়েছে ভোরের আলো প্রকল্পকে। ভোরের আলোকে কেন্দ্র করে এলাকায় বেআইনি রিসর্ট মাথা চাড়া দিয়েছে বলে অভিযোগ বিরোধীদের। জমি দখলের কারবারে ফুলেফেঁপে শাসককূল। অভিযোগ দিনের শেষে বিপন্ন হয়ে পড়েছে এলাকার বাস্তুতন্ত্র। পাশেই হাতিদের করিডর। হাতি চলাচলের পথ। কিন্তু, যত্রতত্র জমি দখলে বিপন্ন সেই করিডরও। বাধা পেয়ে হাতির পাল ছুটছে লোকালয়ে। কাছেই রয়েছে পক্ষী নিবাস। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী নাম রেখেছিলেন পাখিবিতান। বিপন্ন সে পাখিরাও। বাড়ছে চিন্তা। এদিনই আবার গজল ডোবা হাওয়া মহলে যান রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা শিলিগুড়ির মেয়ার গৌতম দেব।
হিমালয়ান আডভেমটার আন্ড নেচার ফাউন্ডেশনের বা ন্যাফের তরফে অনিমেষ বোসও উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। বলেন, “এলাকায় জমির কারবার বদলে দিচ্ছে বাস্তুতন্ত্রটাই। এর প্রভাব তো পড়বেই। জমির কারবারে নিয়ন্ত্রণ নেই। ফলে হাতিরা বাধা পাচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী পাখিবিতান নাম রেখেছিলেন কাছেই থাকা পক্ষী নিবাসের। সেই পাখিরাও এখন বিপন্ন। ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা রিসর্ট, জমি দখল, জলা দখল বদলে দিচ্ছে এলাকার ভৌগলিক পরিবেশ।”
একই কথা উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের প্রধান রঞ্জন সরকারেরও। তিনি বলছেন, “কেউ কিছুই দেখছে না। এমনটা হওয়ার কথা নয়। ওখানকার এই জমির কারবার এবং নির্মাণ কাজ, প্রতিনিয়ত সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি করছে। বন্যপ্রাণ ও মানুষের সংঘাত বাড়ছে।”
প্রাক্তন মন্ত্রী অশোক ভাট্টাচার্য বলেন, “বাম আমলে ওই এলাকায় রাস্তা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বন্যপ্রান বিপন্ন হবে বলেই বন দপ্তর বাধা দিয়েছিল। এখন ভোরের আলো তৈরি হতেই এলাকায় জমির কারবার চলছে।” একই কথা বলছেন বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষও। তার দাবি, “তৃণমূলের কাছে এসব কথা ছেদো কথা। কেউ বুঝতে চায় না। এরা পরিবেশটাও বিক্রি করে। কিছুই ছাড়ে না।” গজল ডোবা উন্নয়ন পর্ষদের ভাইস চেয়ারম্যান খগেশ্বর রায় বলেন, “হাতিদের চলাচলে বাধা এই নির্মাণ। কাউকে ছাড়া হবে না। সব গুড়িয়ে দেব।” যদিও শিলিগুড়িতে জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র বেদব্রত দত্তের দাবি, “বাম আমলেই এই কারবার ফুলেফেঁপে উঠেছিল। সমস্যার গভীরে গেলেই দেখবেন কবে থেকে এই কারবার শুরু হয়েছিল।”
এরইমধ্যে রবিবার দুপুরে আচমকাই গজল ডোবা হাওয়া মহলে যান গৌতম দেব। জানা গিয়েছে ভোরের আলোয় একটি পানীয় জলের প্রকল্প হবে। সেই ব্যাপারেই এদিন গজল ডোবায় ঝটিকা সফরে যান তিনি। সেখানে কিছুক্ষন থাকার পর ফের শিলিগুড়ি ফেরেন। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি জানান, গজল ডোবায় পাইপ লাইনের কাজ হবে। সেটা দেখতে এসেছিলেন। এরপর তাঁকে ভোরের আলো এলাকায় বেআইনি দখল উচ্ছেদ নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি জানান, এই বিষয়টি রাজ্যের তরফে দেখা হচ্ছে। তাই এখন এসব নিয়ে তিনি কোনও মন্তব্য করবেন না।