শিলিগুড়ি: ফেলের বন্যা উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে (North Bengal University)। বলা ভাল, ফেল করেই নজির গড়েছেন পড়ুয়ারা। করোনাকালে অনলাইন পরীক্ষার পর গত বছরও আন্দোলন করে অনলাইনেই পরীক্ষা দেন বিভিন্ন কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা। এবার যদিও ফিরতে হয়েছে অফলাইনে। শিক্ষকদের সামনেই পরীক্ষা দিতে হয়েছে। এতেই শেষ জারিজুরি।
উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর, এই বছর রেজাল্ট আউট হতেই ফেলের সংখ্যা দেখে রীতিমত অবাক শিক্ষকরা। দেখা যাচ্ছে দুই সেমেস্টার মিলেয়ে ফেলের সংখ্যা ৪৫ হাজার ছুঁইছুঁই। তৃতীয় সেমে পাস কোর্সে ফেল করছেন প্রায় ২৬ হাজার পরীক্ষার্থী। পরীক্ষা দিয়েছিলেন ২৮ হাজার জন। পঞ্চম সেমেস্টারের অবস্থাও এক। সেখানে ২০ হাজার পরীক্ষার্থীর মধ্যে ফেল করেছেন ১৮ হাজার জন। অথচ করোনাকালে রেকর্ড বলছে সেই সময় ১০০ শতাংশ পড়ুয়াই পাশ করেছিলেন।
কতজন ফেল করেছেন?
তৃতীয় ও পঞ্চম এই দু’টি সেমেস্টার মিলিয়ে ৪৯ হাজার ২৬৫ জনে ফেল করেছেন ৪৪ হাজার ৪৮২ জন।
তৃতীয় ও পঞ্চম সেমেস্টারের বিভিন্ন কলেজের যা ফলাফল এতে দেখা যাচ্ছে-
তৃতীয় সেমেস্টারে বি এ পাসকোর্সে ২৮ হাজার ৩৭৪ জনের মধ্যে ফেল করেছেন ২৬ হাজার ৩২৮ জন। পাশ করেছেন মাত্র ২ হাজার ০৪৬ জন।
পঞ্চম সেমেস্টারে বিএ পাসকোর্সে ২০ হাজার ৮৯১ জনে ফেল করেছেন ১৮ হাজার ১৫৪ জন। পাশ করেছে মাত্র ২ হাজার ৭৩৭ জন।
এই ফলাফল বিশ্লেষণ করলে দেখা যাচ্ছে
বি এ তৃতীয় সেমেস্টারে মাত্র ৭৬৩ ছাত্র ও ১ হাজার ২৮৩ ছাত্রী পাশ করেছেন। মোট ফেল করা ছাত্র সংখ্যা ১১ হাজার ৩৩৬ জন, এবং ছাত্রীর সংখ্যা ১৪ হাজার ৯৯২ জন।
বিএ পঞ্চম সেমেস্টারে মাত্র ১ হাজার ০৩৩ ছাত্র ও ১ হাজার ৭০৪ ছাত্রী পাশ করেছে। ফেল করা ছাত্রের সংখ্যা ৭ হাজার ৯৩৪, ফেল করা ছাত্রীর সংখ্যা ১০ হাজার ২২০ জন। এক কথায় ফেলের নজির গড়েছে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়। এই পরিসংখ্যান কার্যত ফেলের রেকর্ডও বটে।
বিশ্ববিদ্যালয় এবং যাঁরা পরীক্ষার খাতা দেখেছেন তাঁদের দাবি, এর মধ্যে বেশ কয়েক হাজার ছেলেমেয়ে পরীক্ষায় শূন্য পেয়েছেন। এর জন্য গত কয়েক বছরে চালু অনলাইন ব্যবস্থাকেই দায়ী করছেন তাঁরা। জানাচ্ছেন বিদেশে অনলাইন পরীক্ষা হলেও তার আদল আলাদা। এখানে কার্যত অনলাইনে টুকে পরীক্ষা দিয়েই পাশ করেছিল এরা। এবার অফলাইন চালু হতেই তাই মুখ থুবড়ে পড়েছেন ছাত্রছাত্রীরা। প্রকাশ্যে এসেছে ভয়াবহ ছবি। ডিগ্রি পেলেও কার্যত আঙ্গুঠা ছাপের মতো অবস্থা হচ্ছে ছাত্রছাত্রীদের।
তবে রেকর্ড সংখ্যক ছেলে-মেয়ে ফেল করলেও তাদের বছর নষ্ট হওয়ার ব্যাপার নেই। আগামী সেমেস্টারে এদের সকলকেই তুলে দেওয়া হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মে। আগামী সেমেস্টারে তাদের নির্দিষ্ট বিষয়গুলির সঙ্গেই ফের পরীক্ষা দিয়ে পাশ করতে হবে ফেল করা সেমিস্টারের বিষয়গুলিতে।
এই বিষয়ে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, “এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেকর্ড। করোনার পরে পড়াশোনার অভ্যাসটাই চলে গিয়েছে। অভ্যাসকে গড়ে তোলার জন্য, পড়ুয়াদের কলেজমুখী করার চেষ্টা শিক্ষকদের করতে হবে।”