শিলিগুড়ি: কোভিডের কারণে একটা বড় সময় ওরা স্কুলে যেতে পারেনি। বন্ধুদের সঙ্গে দেখা নেই, ক্লাসরুমের হইহই নেই, দিদিমণিদের বকাবকি নেই, টিফিন পিরিয়ড, চক-ব্ল্যাকবোর্ড কিচ্ছু নেই। দিনভর ঘরবন্দি, অনলাইন ক্লাস, ঘরে পরার প্যান্ট কিংবা স্কার্টের উপর স্কুলের শার্টটা গলিয়ে বসে পড়া মোবাইল ফোনের সামনে। করোনাকাল সবথেকে বেশি প্রভাব বোধহয় এই শিশুমনগুলোতেই ফেলেছে। চঞ্চল, উচ্ছ্বল কচিকাঁচাগুলোর চোখমুখের অভিব্যক্তিও তখন অচেনা ঠেকেছে অনেকেরই। সেসব কাটিয়ে এখন অবশ্য জীবন স্বাভাবিক ছন্দে ফিরেছে। আবারও স্কুলগুলিতে হইহই। কিন্তু শিশুমন কি সত্যিই করোনার সেই কালো প্রভাব কাটিয়ে উঠতে পেরেছে? শিলিগুড়ির বরদাকান্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকারা বলছেন, পুরোপুরি নয়। আর পুরোপুরি নয় বলেই স্কুল মনোবিদদের সাহায্য নিয়েছে।
বরদাকান্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষিকার কথায়, লকডাউনের পর যখন স্কুল খুলল, বাচ্চাদের আচরণে অদ্ভুত বদল লক্ষ্য করা গিয়েছে। কেউ কেউ স্কুলে ঢুকেই কান্নাকাটি করছে, কেউ আবার কথায় কথায় হিংস্র হয়ে উঠছে। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা নমিতা রায় জানান, পড়ুয়াদের পড়াশোনায় মনোনিবেশে সমস্যা হচ্ছে। এরপরই তাঁরা ভাবেন, ওদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কিছু একটা করতে হবে। যোগাযোগ করেন এক এনজিওর সঙ্গে। শিশুদের স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করে তারা।
তারাই শুক্রবার স্কুলে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সচেতনতা শিবির করে। বড় হলঘরে বসে ছোট ছোট বাচ্চাদের বলা হয়, যা ভয় তা যেন ছবিতে ফুটিয়ে তোলে। অধিকাংশ বাচ্চাকেই দেখা যায় কালো রঙের আঁকিবুকিতে ভরিয়েছে সাদা পাতা। বলতে বলা হয়েছিল নিজেদের গল্প। তাও বলতে সংকোচ বোধ করে কেউ কেউ। ওই এনজিওর সদস্যরা গল্পের ছলে নানা প্রশ্ন জানতে চায় পড়ুয়াদের কাছে। লক্ষ্য, ওদের মনের ভিতর লুকিয়ে থাকা অবসাদটার খোঁজ পাওয়া।
শিক্ষিকা নমিতা রায়ের কথায়, “শারীরিক সুস্থতার সঙ্গে মানসিক সুস্থতা ওতোপ্রোতোভাবে জড়িয়ে। শারীরিক সুস্থতার দিকে আমাদের নজর থাকলেও মানসিক সুস্থতার দিকে সেভাবে নজর দেওয়া হয় না। লকডাউনের পর যখন বাচ্চারা স্কুলে এল, বেশ কয়েকজনের মধ্যে আমরা পরিবর্তন লক্ষ্য করেছি। কেউ কেউ ক্লাসরুমে ঢুকতে ভয় পাচ্ছে, আমার কাছে বা অন্য দিদিমণিদের কাছে গিয়ে সিঁটিয়ে দাঁড়িয়ে থাকছে। ওরা ক্লাসে যাবে না। কেউ কেউ আবার এমন মারামারি করছে কোনওদিন এসব দেখিনি ওদের। খুব হিংস্র হয়ে উঠছে। এরপরই আমরা ভাবনাচিন্তা শুরু করি।”