বালুরঘাট: প্রায় সপ্তাহ খানেক আগে হয়েছে অস্ত্রোপচার। তারপর থেকে প্রসূতিদের দেখতে ওয়ার্ডে আসছেন না কোনও চিকিৎসক। এক-দুদিন নয় গত এক সপ্তাহ ধরে এমনই পরিস্থিতি বালুরঘাট সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। অস্ত্রোপ্রচারের পর চিকিৎসক প্রসূতিদের পর্যবেক্ষণ না করার ফলে রোগীদের ইনফেকশন সহ নানা রকমের সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ। অন্তত ১২ জন রোগীকে এভাবে ফেলে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় প্রসূতিদের পরিবারের তরফ থেকে হাসপাতাল সুপারকে লিখিতভাবে অভিযোগ জানানো হয়েছে। অভিযোগ পাওয়ার পর পুরো ঘটনা খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন বালুরঘাট জেলা হাসপাতালের সুপার কৃষ্ণেন্দু বিকাশ বাগ।
জানা গিয়েছে, স্বাস্থ্য দফতরের নিয়ম অনুযায়ী, হাসপাতালের প্রতিটি ওয়ার্ডে সকালে ও সন্ধ্যায় চিকিৎসকের রাউন্ড দেওয়ার কথা। কিন্তু অভিযোগ, সেই নিয়ম কেউ মানছেন না বালুরঘাট জেলা হাসপাতালে। হাসপাতালের ওয়ার্ডে নাকি হাজির হয়েই চলে যাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। রোগীদের পরিবার বলছে, হাসপাতালের থেকে প্রাইভেট চেম্বারেই বেশি সময় কাটাচ্ছেন চিকিৎসকেরা।
স্থানীয় বাসিন্দাদের কেউ কেউ বলছেন, এই হাসপাতালে চিকিৎসকদের মধ্যেও বোঝাপড়া নেই। এক চিকিৎসকের অধীনে রোগী ভর্তি হলে, অন্য চিকিৎসক নাকি সেই রোগীকে ছুঁয়েও দেখেন না। এর আগেও রোগীর পরিজনদের তরফে একই অভিযোগ সামনে এসেছে। অবহেলার ফলে কোনও রোগীকে অন্য নার্সিংহোমে নিয়ে গিয়ে দ্বিতীয়বার অস্ত্রোপচার করাতে হয়েছে, এমন উদাহরণও আছে।
গত বৃহস্পতিবার বালুরঘাট, বোল্লা, চিঙ্গিসপুর তপন, কুমারগঞ্জ সহ বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা ওই ১২ জন প্রসূতির পরিবার একই অভিযোগে সরব হয়েছে। চিকিৎসা না পেয়ে শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন রোগীর পরিজনেরা।
তবে সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগের পরে নড়েচড়ে বসেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতাল সুপারের নির্দেশে বেশ কয়েকজন রোগীকে ছুটিও দিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
এক প্রসূতির আত্মীয় নিখিল হালদার বলেন, ‘সাতদিন আগে আমার স্ত্রী প্রসব করেছেন। কিন্তু গত সাতদিনে আমার স্ত্রীকে দেখতে আসেননি চিকিৎসকেরা। দায়িত্বপ্রাপ্ত ওই চিকিৎসকের তো দেখা মেলেনি। এমনকী অন্য চিকিৎসকেরও দেখা মেলেনি। সঠিক চিকিৎসার অভাবে আমার স্ত্রীর সেলাইয়ের জায়গায় ইনফেকশন হয়ে যাচ্ছে। তাই আমরা সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি।’ আর এক প্রসূতির আত্মীয় দীপা সিং জানান, তাঁর পুত্রবধূরও একই অবস্থা।
এবিষয়ে বালুরঘাট জেলা হাসপাতালের সুপার কৃষ্ণেন্দু বিকাশ বাগ বলেন, ‘আমার কাছে এই নিয়ে অভিযোগ এসেছে। চিকিৎসকদের দুবেলা রাউন্ড দেওয়ার কথা। কিন্তু রোগীর পরিবারের মুখে শুনলাম, একজন চিকিৎসক নাকি রাউন্ড দেননি। ওই চিকিৎসকদের ডাকা হয়েছে। পুরো ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হবে। প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’