তৃণমূল বনাম বিজেপির তরজায় এ রাজ্যের মানুষ অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে। তবে সার্বিকভাবে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে তাৎপর্যপূর্ণ ‘তৃণমূল বনাম শুভেন্দু অধিকারী’। একসময় ঘাসফুল শিবিরের প্রথম সারির সৈনিক হিসেবে পরিচিত শুভেন্দু অধিকারীর দলবদলের পর থেকেই তাঁর নামের সঙ্গে বিশেষ বিশেষণ ব্যবহার করতে অভ্যস্ত তৃণমূল নেতারা। গত দেড় বছরে বিরোধী দলনেতার সঙ্গে তৃণমূল তথা সরকারের সংঘাত বাংলার রাজনীতিতে এক পরিচিত বিষয় হয়ে উঠেছে। আর পঞ্চায়েত নির্বাচন এগিয়ে আসতেই সেই তরজা আরও চরমে উঠেছে। রবিবার তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের মৌখিক আক্রমণের পর সোমবার শুভেন্দুর বাড়িতেই পৌঁছে গেলেন তৃণমূল কর্মীরা।
সোমবার দিনভর টুইটারে ট্রেন্ডিং ‘গেট ওয়েল সুন শুভেন্দু’ (#Get Well Soon Suvendu)। তৃণমূল নেতাদের টুইটার হ্যান্ডেলে দেখা যাচ্ছে সেই বার্তা। কেউ পোস্ট কার্ডের ছবি দিয়ে লিখেছেন ‘গেট ওয়েল সুন শুভেন্দু’ , আবার কারও পোস্ট করা ছবিতে দেখা যাচ্ছে হলুদ বা সাদা গোলাপের তোড়া। কেউ আবার স্পষ্ট বাংলায় লিখেছেন, ‘আপনার মানসিক সুস্থতা কামনা করি।’
পোস্ট করেছেন তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য, সুদীপ রাহার মতো যুব নেতারা। পোস্ট করা হয়েছে টিএমসিপি বা তৃণমূলের সাইবার সেলের টুইটার হ্যান্ডেলেও।
সোমবার সকাল থেকেই ভিড় বাড়তে থাকে পূর্ব মেদিনীপুরের শুভেন্দুর বাড়ি শান্তিকুঞ্জের কাছে। সকাল সাড়ে ১০ টা নাগাদ প্রথমেই পৌঁছে যায় পূর্ব মেদিনীপুরের তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সদস্যরা। পুলিশ তাঁদের প্রবেশ করতে বাধা দিলে, তাঁরা জানান গোলাপ ও চিঠি নিয়ে শান্তিকুঞ্জে দিয়ে আসতে চান তাঁরা। সেই চিঠিতে শুভেন্দুর দ্রুত আরোগ্য কামনা করা হয়েছে। পুলিশের সঙ্গে ঘণ্টাখানেকের বেশি সময় ধরে বাক-বিতণ্ডা চলতে থাকে।
সেখানেই শেষ নয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড় বাড়তে থাকে আরও। প্রথমে ছাত্র সংগঠন ও পরে দলের যুব সংগঠনের তরফ থেকে চিঠি ও ফুল নিয়ে পৌঁছে যান কর্মীরা। প্রত্যেকেরই হাতে চিঠি আর গোলাপ ফুল। বিকেলের পর থেকে দফায় দফায় সারা রাজ্যের বিভিন্ন জেলার তৃণমূল কর্মীরা কাঁথিতে যান। শান্তিকুঞ্জে প্রবেশের ক্ষেত্রে বাধা পেলেও হাল ছাড়তে নারাজ তাঁরা।
না, শারীরিক কোনও অসুস্থতা নেই নন্দীগ্রামের বিধায়ক। রবিবার কুণাল ঘোষ কটাক্ষ করে বলেছিলেন, ‘শুভেন্দুর পাগলামির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।’ তিনি আরও বলেছিলেন, ‘আমরা অনুভব করছি ওর মাথায় একটু গন্ডগোল হয়েছে। তাই আগামিকাল (সোমবার) থেকে তৃণমূল যুব ও ছাত্র শাখা ওর কাছে একটি করে শুভেচ্ছাবার্তা পাঠাতে শুরু করবে। তাতে থাকবে একটি ফুল, একটি গ্রিটিংস কার্ড যাতে লেখা গেট ওয়েল সুন এবং অভিষেকের একটি ছবি।’ যেমন কথা তেমন কাজ। সোমবার কুণালের সেই বার্তার রেশ রইল দিনভর।
শুভেন্দু অধিকারী একটি টুইটে দাবি করেছিলেন, কলকাতার এক অভিজাত হোটেল রবিবার রাতে নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলা হয়েছিল। তাঁর দাবি, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের ছেলের জন্মদিনের অনুষ্ঠানের জন্যই এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পাঁচশোর বেশি পুলিশকর্মী, বম্ব স্কোয়াড, ডগ স্কোয়াড মোতায়েন করার কথাও জানিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তৃণমূল বলছে, শুভেন্দু অধিকারীর এই দাবি সম্পূর্ণ ভুল। আর এই মন্তব্যের জন্য শুভেন্দুর মানসিক স্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কুণাল ঘোষ। সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও শুভেন্দুর এই দাবি নস্যাৎ করে দিয়েছেন। তাঁর দাবি, ঘরোয়া অনুষ্ঠান হয়েছে, পাঁচতারা হোটেলের কথা বলে অপপ্রচার করছেন বিরোধী দলনেতা।