হুগলি: এক দুটো নয়, পিত্তাশয় থেকে একেবারে ১,৪৪০ টি পাথর বের করা হল মাইক্রোসার্জারি অপারেশনে (Micro Surgery Operation)! রবিবার রাতে তারকেশ্বরেরের চাঁপাডাঙ্গা এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে এক রোগীর অপারেশন করেন বর্ধমান মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক ডাঃ কায়ুম খান। অপারেশনের পর অবশ্য রোগী সুস্থ আছেন বলেই জানিয়েছেন চিকিৎসক।
জানা গিয়েছে, চুঁচুড়ার ১৬/৩৪০ মিয়ার বার পীরতলা এলাকার বাসিন্দা সতেরো বছর বয়সী বিভাসিন্ধু দত্ত মাস তিনেক ধরে অসম্ভব পেটের যন্ত্রণায় ভুগছিলেন। চুঁচুড়া হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। সেখানেই আল্ট্রাসোনোগ্রাফিতে ধরা পড়ে তাঁর পিত্তথলিতে প্রচুর পাথর আছে। কিন্তু রোগীর হাইপারটেনশন ও রক্তক্ষরণের সমস্যা চিকিৎসায় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। সরাসরি তাঁর অস্ত্রোপচার করা যাবে না। তাহলে উপায়?
নানা ভাবে পরীক্ষা নীরিক্ষা করা হয় রোগীর। চিকিৎসকেরা সিদ্ধান্ত নেন যে, মাইক্রো সার্জারি করে পিত্তাশয় থেকে পাথরগুলো বের করা হবে। কিন্তু পিছিয়ে যান বিভাসিন্ধুর পরিবার। কারণ, অপারেশন খুব ব্যয়সাপেক্ষ। আর্থিক ভাবে অস্বচ্ছল বিভাসিন্ধুর পরিবার কোথায় পাবে এত টাকা! তাই চিকিৎসক কায়ুম খান তাদের পরামর্শ দেন স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে চিকিৎসা করাতে।
শেষমেশ চিকিৎসকের পরামর্শে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে তারকেশ্বর চাঁপাডাঙ্গা এলাকায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন বিভাসিন্ধু। রবিবার রাতে চিকিৎসক কায়ুম খান তাঁর চার জন সহযোগীকে নিয়ে মাইক্রোসার্জারি অপারেশন করেন। পিত্তথলি থেকে একের পর এক পাথর বের করেন তাঁরা। তবে দু’ দশটা নয়, এক এক করে ১,৪৪০ টি ছোট বড় পাথর বের করা হয় পিত্তাশয় থেকে।
চিকিৎসক কায়ুম খান বলেন, “১৭ বছরের এক তরুণ, বিভাসিন্ধু দত্ত পেটে ব্যথা নিয়ে চিকিৎসার জন্য আসেন। ৩ মাস আগে থেকে পেটের ব্যথায় কষ্ট পাচ্ছিলেন তিনি। আলট্রাসনোগ্রাফি করে জানা যায় তাঁর পিত্তথলিতে অসংখ্য পাথর আছে। তবে কত গুলি পাথর ছিল তা অল্ট্রাসনোগ্রাফিতে ধরা পড়েনি। অস্ত্রোপচার করার পর স্তম্ভিত হয়ে গেলাম। দেখলাম একটি-দুটি, নয় একেবারে ১,৪৪০টি পাথর! অপারেশন করে গুনে দেখা হয়েছে”।
চিকিৎসক আরও বলেন, “এরকম রোগীকে অপারেশন করাই যুক্তিযুক্ত কাজ। না হলে এগুলি পিত্তথলি থেকে পিত্তনালীতে চলে যেতে পারে। পিত্তনালী থেকে জন্ডিস হয়, তাও কোনও কোনও সময় দেখা যায় প্যানক্রিয়াটাইটিস হয়। এখন রোগী ভাল আছেন। সুস্থ আছেন”।
অপারেশনের পর বিভাসিন্ধুও বলেন, “খুব ভাল লাগছে। তাও আবার নিখরচায় অপারেশন হল। ডাক্তার বাবুকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। উনি ভগবানের মত কাজ করলেন। আমি খুশি”।