হুগলি: হুগলির (Hooghly) দাদপুর চক কৃষ্ণপুর গ্রামের বাসিন্দা সনাতন ও পূর্ণিমা দুর্লভ। দম্পতির এক প্রতিবেশীর নাবালিকা মেয়ের গত সপ্তাহে জ্বর হয়। নাবালিকার বাবা ওঝা ডাকেন মেয়ের জ্বর সারাতে। ঝাড়ফুঁক করা হয়। ওঝা নিদান দেন, ওই ছোট্ট মেয়েকে ডাইনি ধরেছে। আর এরপরই দুর্লভ পরিবারকে ডাইনি অপবাদে গ্রামছাড়া করে দেওয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ করতে গেলে ওই দম্পতিকে মারধর করারও অভিযোগ উঠে। পরে দাদপুর থানার পুলিশ গিয়ে দম্পতিকে উদ্ধার করে। পুলিশকর্মীরা তাঁদের কিছুদিন কোনও আত্মীয়র বাড়ি গিয়ে থাকতে বলেন। কিন্তু সেখানেও ভয় দেখানো হয় বলে অভিযোগ। আর এরপর থেকে দম্পতির ঠাঁই হয়েছিল চুঁচুড়া স্টেশনে। বিগত কয়েকদিন ধরে খোলা আকাশের নীচেই দিন কাটে তাঁদের।
চারদিন ধরে পেয়ে জুটেছে শুধুই চা-বিস্কুট। স্টেশনের ধারে একটি চায়ের দোকানে চা-বিস্কুট খেয়েই শুক্রবার পর্যন্ত দিন চলে তাঁদের। চরম দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে তাঁদের। বাড়িতে না থাকায় চাষের ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন তাঁরা। বাড়ি ফিরতে চেয়ে দাদপুর পঞ্চায়েত ও থানায় আবেদনও জানিয়েছেন দম্পতি। কিন্তু গ্রামে ফিরলে তাঁদের উপর আবার আক্রমন হতে পারে মনে করে ঝুঁকি নিতে চায়নি প্রশাসন। দাদপুর পঞ্চায়েতের প্রধান জয়া মিদ্দা বলেন, ঘটনাটি পোলবা-দাদপুর বিডিওকে জানানো হয়েছে। পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে প্রৌঢ় দম্পতিকে বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করা হবে।
এদিকে এই খবর জানতে পেরে দাদপুরের এক স্কুল শিক্ষক সফিউল ইসলাম তাঁদের নিজের বাড়িতে থাকতে দেন। শুক্রবার থেকে ওই দম্পতি শিক্ষকের বাড়িতেই রয়েছেন। সফিউল ইসলাম বলেন, ‘কুসংস্কার এখনও রয়েছে গ্রামে। তাই দম্পতিকে জোর করে গ্রামে ফিরিয়ে দিলেই হবে না। গ্রামবাসীদের মন থেকে ডাইনির কুসংস্কার দূর করতে হবে। এর জন্য বিজ্ঞান মঞ্চকে নিয়ে প্রশাসনকে কাজ করতে হবে। আর এই ধরনের ওঝা গুণিনদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।’