আমতা: বৃষ্টি কমেছে। কিন্তু জল কমেনি। অতিষ্ট হয়ে যাচ্ছেন এলাকাবাসী। আমতার (Amta) দু’নম্বর ব্লকে এখনও অনেক জল। কোথাও এক কোমর,কোথাও আবার তারও বেশি। এরমধ্যে কীভাবে হবে পুজো? এই প্রশ্নই উঠছে বারবার।
গত দুই মাসে দু’বার বন্যা। তার উপর লকডাউন। সব মিলিয়ে জেরবার হয়ে যাচ্ছে জনজীবন। তারপর সামনেই পুজো। জানা গিয়েছে, আমতা দু’নম্বর ব্লকের বেশির শিশুদের এখনও পুজোর জামা হয়নি। কিছুতেই জল থেকে বেরিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারছেন না তাঁরা।
ভারটিগরী গ্রামের শুভজিৎ পোড়েল। জানিয়েছেন,পুজোর জন্য কারোরই নতুন জামাকাপড় হয়নি। তাদের এলাকায় পুজোও হয়ত হবে না। আর হবেই বা কী করে? এখনও জল নামেনি। তাদের পরিবারের সবাই মামার বাড়ি চলে গিয়েছেন।
এই কাহিনী শুধু শুভজিতদের নয়। আমতা উদয়নারায়ণপুর এলাকার বহু গ্রামে। তাঁদের কেউ বাড়ি ছেড়েছেন, কেউ বা এখনও রয়েছেন আশ্রয় শিবিরে।
এদিকে, কিছুটা হলেও খানাকুলের (Khanakul Flood Situation) বন্যা (Flood) পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। খানাকুল (Khanakul) ১ নম্বর ব্লকের বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। জলস্তর অনেকটাই কমেছে। খানাকুল দু’নম্বর ব্লকের ১১ টি গ্রাম পঞ্চায়েতের শতাধিক গ্রাম এখনও জলে হাবুডুবু খাচ্ছে। রাজ্য সড়কের ওপর দিয়ে এখনও জলের স্রোত বইছে।
তবে নতুন করে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়নি। রূপনারায়ণের বাঁধ দিয়ে এখনও জল ডুকছে হু হু করে। বন্দর,ধান্যঘোরি,কাকনান, ঘোড়াদহ, রামচন্দ্রপুর, বন হিজলি, মাড়োখানা, নন্দনপুর, রাধাকৃষ্ণপুর, পানশিউলি সহ প্রচুর গ্রামের উপর দিয়ে জলের স্রোত এখনও বইছে।
যোগাযোগের একমাত্র ভরসা ছোট ছোট ডিঙি নৌকা। তবে খানাকুলের কোথাও সরকারি নৌকার দেখা নেই। অপেক্ষাকৃত উঁচু এই সমস্ত রাজ্য সড়কের ওপর দিয়ে ৪-৫ ফুট জলের স্রোত বইছে। সমস্ত পঞ্চায়েত অফিসই জলমগ্ন। বাজার-ঘাট, দোকান সবেতেই বন্যার জল ঢুকে গিয়েছে। যাতায়াতের একমাত্র ভরসা ছোট নৌকা বা তাল ডিঙি। পরপর ৩ বার ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির সম্মুখীন হলেন খানাকুলের মানুষ।
তবে কবে জল যন্ত্রণা থেকে মুক্তি হবে, প্রহর গুনছেন গ্রামবাসীরা। গোঘাটের ভাদুরে দারকেশ্বর নদীর বাঁধ ভেঙেছে ইতিমধ্যেই। রাতে হু হু করে জল ঢোকে আরামবাগ শহরে। সরকারি ভবনে বন্যার জল ঢুকেছে। বসতবাড়িতেও জল ঢুকেছে। বন্যায় একপ্রকার এলাকাছাড়া পঞ্চায়েত প্রধান।
পঞ্চায়েত প্রধানেরই আশ্রয় হয়েছে অপেক্ষাকৃত উঁচু রাস্তার ধারের ত্রিপলের নীচে। রাজহাটি ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সমীর প্রামাণিকের এখন পরিবার নিয়ে অস্থায়ী আশ্রয় খোলা আকাশের নীচে।
তবে তাঁর কথায়, ‘এখনে থাকতে কোনও অসুবিধা হচ্ছে না।’
তবে দুর্গাপুর (Durgapur) ব্যারাজ থেকে জল ছাড়ার পরিমাণ আরও কমানো হয়েছে। সোমবার সকালে দুর্গাপুর ব্যারাজ থেকে ছাড়া হয়েছে ৬৮,৪০০ কিউসেক জল । সেচ দফতর সূত্রে জানা গেছে ধীরে ধীরে আরও কমানো হবে জল ছাড়ার পরিমাণ। ৫০,০০০ কিউসেকের নিচে জল ছাড়ার পরিমাণ হলেই রাজ্যে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে।