Hooghly Teacher: তাঁর লড়াই যেন আস্ত এক ‘সিলেবাস’, ২৪ বছর ধরে এভাবেই বিনে পয়সায় পড়ান প্রবীরবাবু

TV9 Bangla Digital | Edited By: শর্মিষ্ঠা চক্রবর্তী

Sep 05, 2022 | 1:29 PM

Hooghly Teacher: গোঘাটের প্রত্যন্ত গ্রাম মির্গার বাসিন্দা প্রবীর পাল। হাঁটতে পারেন না। সেই ছেলেবেলা থেকেই।

Hooghly Teacher: তাঁর লড়াই যেন আস্ত এক সিলেবাস, ২৪ বছর ধরে এভাবেই বিনে পয়সায় পড়ান প্রবীরবাবু
গোঘাটের সেই শিক্ষক (নিজস্ব চিত্র)

Follow Us

তন্ময় বৈরাগী: আজ সমস্ত ‘কানমলা’, ‘বেঞ্চের ওপর দাঁড়া’, ‘খাতা বার কর’-দের দিন। ভোকাল কর্ড লাউডস্পিকার, মুখে নোটসের বার্তা আর বেয়াদপগুলোকে চোখরাঙিয়ে সামলানো- এই তিন কম্বিনেশনের মানুষগুলোর দিন! আজ শিক্ষক দিবস, গুরুদের সম্মান জানানোর দিন। আর এই শিক্ষক দিবসে আমরা শ্রদ্ধা জানাই, এমন এক শিক্ষককে যিনি শরীরের সমস্ত না-পারাকে জয় করেই পড়িয়ে চলেছেন ‘খুদেদের’, বিনা পারিশ্রমিকে। এক আধটা দিন নয়, টানা ২৪ টা বছর। সোজা হয়ে দাঁড়ানোর ক্ষমতা নেই তাঁর। আধুনিক পরিভাষায় তিনি বিশেষ ভাবে সক্ষম। কিন্তু তাঁর সম্পর্কে যতটা জানা গেল, তাতে বলতেই হয় বিশেষ ভাবে তিনি সক্ষমই বটে। তা না হলে দু’পা, দুটো হাতে ভর দিয়ে যিনি চলেন, তিনি কীভাবে এই ভাবে দিনের পর দিন ক্লাস নিয়ে চলছেন। কেবল ক্লাস কেন? স্কুল প্রাঙ্গনে গাছের চারা রোপণ করা থেকে শুরু করে সাফসাফাই-সবেতেই সাহায্য করেন পড়ুয়াদের।

দীর্ঘ ২৪ বছর ধরে একটানা স্কুলে বিনা পারিশ্রমিকে শিক্ষাদান করে আসছেন বিশেষ ভাবে সক্ষম শিক্ষক। শিক্ষক দিবসে কুর্নিশ গোঘাটের বিশেষ ভাবে সক্ষম শিক্ষক প্রবীর পালকে। TV9 বাংলাও তাঁকে কুর্নিশ জানাতে হাজির হয়েছিল গোঘাটের চাতরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।

গোঘাটের প্রত্যন্ত গ্রাম মির্গার বাসিন্দা প্রবীর পাল। হাঁটতে পারেন না। সেই ছেলেবেলা থেকেই। তবে দুই হাতে ভর দিয়ে প্রায় ২৪ বছর ধরে বাড়ি থেকে এক কিমি দূরে বিদ্যালয় যান তিনি। ছাত্র-ছাত্রীরা বাড়ি থেকেই তাঁকে অনেক সময়ে আনতে আসেন।

তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা বাড়ছে তো? কিন্তু না এখানেই শেষ নয়। শ্রদ্ধাটা আরও কয়েকশো গুণ বাড়ল, যখন জানা গেল তিনি স্কুলের কোনও বেতনভুক শিক্ষক নন। অর্থাৎ বিনা পারিশ্রমিকেই স্কুলে ক্লাস নেন তিনি। ছাত্রদের ভালোবাসেন,স্নেহ করেন। নিয়ম শৃঙ্খলার পাঠ দিয়ে ছাত্রদের এক সূত্রে বেঁধেছেন। শুধু তাই নয় বিদ্যালয়ের জায়গায় তিনি নিজেই এই অবস্থায় সবজি চাষ করছেন। কারণ তিনি চান শিশুদের ভেজাল খাওয়াবেন না। সসম্পূর্ণ জৈব সার দিয়ে তৈরি করেছেন বিভিন ধরনের সবজি। যা সবটাই দিয়ে দেন স্কুলের মিড ডে মিলে।

স্কুল চত্বর পরিষ্কার রাখা ও নিয়মানুবর্তিতা শেখান। স্কুলে সময় কাটাচ্ছিলাম আমরা। একটা সময়ে দেখা গেল, ছাত্রদের জুতোটাও নিজের হাতে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখছেন। বিদ্যালয়ের বাথরুমটা পর্যন্ত নিজের হাতে পরিষ্কার করেন তিনি। শরীর কখনও এসবে বাধা হতে পারেনি তাঁর।

সব কাজে প্রিয় ‘স্যার’কে সঙ্গ দেন স্নেহের ছাত্রছাত্রীরাও। তাঁর বাড়ির পরতে পরতে দারিদ্রতার ছাপ। বাড়িতে বৃদ্ধা মা আছেন। আছেন দাদা ও বৌদি। নুন আনতে পানতা ফুরানোর সংসারে সবটা শেষ হয় গার্হস্থ্য অনুশাসনেই। তবুও স্কুলে নিজের হাতে ফলানো সবজি বাড়ি নিয়ে যান না তিনি।

প্রবীর পালকে নিয়ে তাই স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা, ছাত্রছাত্রী তো বটেই, এলাকাবাসীদের গর্ব মারাত্মক। তাই তাঁরাও তাঁকে শিক্ষারত্ন দেওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন। কারণ তিনি শারীরিকভাবে ৮০ শতাংশই বিশেষ ভাবে সক্ষম। এক খুদে পড়ুয়ার কথায়, “স্যরের থেকে সাহস জোগাই মনে। স্যরের থেকে অনেক কিছুই শেখার রয়েছে।” একই কথা স্কুলের অন্যান্য শিক্ষকদেরও। আর অভিভাবকরা বলছেন, “স্যর রয়েছে বলেই আমরা নিশ্চিন্ত। ছেলেমেয়েগুলো আমাদের পরিপূর্ণ।”

Next Article