হুগলি: আরামবাগ মহকুমার সবথেকে অর্থকারী ফসল হল আলু। পরপর তিনবার বন্যার পর বেশির ভাগ জমিতে ধানের ফলন হয়নি। আলু চাষ করে চাষিরা ভেবেছিলেন তাদের মুখে হয়তো এবার একটু হাসি ফুটবে। কিন্তু তাও কেড়ে নিয়েছে অসময়ে বৃষ্টিপাত। কপালে হাত তাঁদের। বাড়ছে হতাশা!
আলু চাষিদের বেশিরভাগই ধারদেনা করে, সমবায় সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে আলুর বীজ বপণ করেছিলেন। এদিকে এবার ডিসেম্বরেও যেভাবে বৃষ্টি হল তাতে ক্ষেতের পর ক্ষেতের ফসল ভাসিয়েছে। মাঠ থেকে জল নামতেই এবার দেখা যাচ্ছে বপণ করা সেই আলু বীজ সবই পচে গিয়েছে। একেবারে মাঠে মারা যাওয়া!
এখনও আলুর জমিতে কাদা মাটি। আলু চাষিদের কপালে চিন্তার ভাঁজ। কী করবেন তাঁরা? কী ভাবে অন্ন তুলে দেবেন পরিবারের মুখে। এলাকার আলু চাষিদের দাবি, সরকার তাঁদের আলু বীজ ও রাসায়নিক সার দিয়ে সহযোগিতা করুক। তাহলে তাঁরা নতুন করে আলু চাষ করতে পারবেন।
তেমনটা না হলে চাপ বাড়বে তাঁদের। কোনওরকমে দু’ কাঠা থেকে পাঁচ কাঠা জমিতে বীজ বুনে বসে থাকতে হবে। তাতে কোনওমতে নুন ভাতটুকু জুটলেও জুটতে পারে। কারণ, তাঁদের পক্ষে এর থেকে বেশী আর চাষ করার ক্ষমতা নেই। একেই চড়া দামে আলু বীজের। সারের দামও একেবারে চড়া।
কৃষকদের অভিযোগ, সারের বস্তায় যে দাম লেখা রয়েছে, তার থেকে অনেক বেশি দামে সেই সার কিনতে হয়েছে তাঁদের। ভেবেছিলেন আলুর ফলন ভাল হবে, সে চাপে নিস্তার মিলবে। কিন্তু অকাল বৃষ্টি সবকিছুই কেড়ে নিল। মাঠে শুধু আলু জমিতে কাদা ও পচা বীজ আলুর দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।
কৃষি দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এ বছর প্রায় ১৫,৬৬৬ হেক্টর জমিতে আলু বীজ বসানো হয়ে গিয়েছিল। সমস্তটাই নষ্ট হয়ে গিয়েছে অকাল বৃষ্টি পাতে ও জমা জলে। আর এই আলু জমিতে এখনই চাষাবাদ সম্ভব নয়। ১০৭৫ হেক্টর সবজি জমি, ২৩৬ হেক্টর মুসুর ডাল, ১২৯২ হেক্টর সর্ষে ক্ষেত ও ২৮৩৮ হেক্টর ধান সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গিয়েছে।
নতুন করে জমি তৈরি করে আলু বসাতে এখনও দিন ২০ অপেক্ষা করতে হবে আলুচাষিদের। আলু চাষ পিছিয়ে গেলে ফলনও কমবে। শীত যদি তাড়াতাড়ি বঙ্গ থেকে বিদায় নেয় তাহলে গরম পড়লে আলু গাছ নষ্ট হয়ে যাবে। অর্থাৎ সেখানেও ফলনে ধাক্কা। আবার নতুন করে খরচ দিয়ে আলু চাষের প্রতি অনীহাও রয়েছেন অনেক আলু চাষিরই। ফলে অনেক জমি পড়ে থাকবে।
প্রশ্ন উঠছে, চাষিরা যদি আলু চাষ কমিয়ে দেয় তাহলে ফলন হবে কীভাবে? আর তা যদি না হয় তা হলে ফের আলুর বাজার অগ্নিমূল্য হবে। আলুটুকুও যদি মধ্যবিত্তের পাতে তুলতে ছ্যাঁকা খেতে হয়, তা হলে হেঁশেল চলবে কী করে! চাষিদের সাহায্যে এগিয়ে আসার দাবিতে মঙ্গলবার থেকে সিঙ্গুরে তিনদিনের ধরনায় বসছে বিজেপি। বিরোধীদের আন্দোলন নতুন কোনও পথ খুলে দেয় কি না সেদিকেই নজর ওয়াকিবহাল মহলের।
আরও পড়ুন: নির্দল-সচ্চিদানন্দের সমর্থককে থানায় তুলে নিয়ে গিয়ে হেনস্থার অভিযোগ