আরামবাগ: শুরু হয়েছিল পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেফতারি দিয়ে। তারপর থেকে নিয়োগ দুর্নীতির (Recruitment Scam) তদন্ত অনেক দূর গড়িয়েছে। গ্রেফতার হয়েছেন একাধিক শিক্ষাকর্তা। বেশ কয়েকজন মিডলম্যানও গ্রেফতার হয়েছেন। শুক্রবার তাতে নতুন সংযোজন, চন্দন মণ্ডল সহ ছয় জন। সেই তালিকায় রয়েছে আরামবাগের শাহিদ ইমামও। পেশায় প্রাথমিক স্কুল শিক্ষক। কিন্তু এখন নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার তিনি। জানা যাচ্ছে, চাকরি বিক্রির এজেন্ট হিসেবে কাজ করত এই শাহিদ। শুধু তাই নয়, আরও কীর্তি রয়েছে শাহিদের। বর্ধমান শহরের একটি ডান্স বারে বসে নাকি চাকরির ডিল হত, সূত্র মারফত এমনই জানা যাচ্ছে। এককালে ওষুধের দোকান চালাতেন। তারপর প্রাথমিকের চাকরি বাগিয়ে নেন। কিন্তু স্কুলে তাঁর দেখা পাওয়া দুষ্কর। আর এদিকে গত পাঁচ ছয় বছর ধরে তিনি যে সম্পত্তি তৈরি করেছেন, তা কি প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি করে তৈরি করা সম্ভব? এমন প্রশ্ন কিন্তু ইতিমধ্যেই ঘুরতে শুরু করেছে।
এককালে আরামবাগের মুথাডাঙা এলাকায় একটি ওষুধের দোকান চালাতেন শাহিদ। কিন্তু রাজ্যে পালাবদলের পরবর্তী সময় থেকেই ভাগ্যের শিকে ঘুরতে শুরু করে তাঁর। শাহিদের বাবাও পেশায় শিক্ষক। বাবার পরিচয়কে কাজে লাগিয়ে এলাকায় তৃণমূল নেতা হিসেবে প্রভাবশালী হতে থাকেন তিনি। ২০১৭ সালে হুগলি জেলা যুব তৃণমূল কংগ্রেসের সম্পাদকও হন। যদিও তার আগেই ২০১৪ সালে হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরে প্রাথমিক স্কুলে চাকরি পান শাহিদ। শোনা যাচ্ছে স্কুল খুব একটা যেতেন না তিনি। কিন্তু যখনই যেতেন, তখনই সঙ্গে থাকত বিলাসবহুল গাড়ি। হয় বিএমডাব্লু, নাহলে ফরচুনারে চেপে নাকি স্কুলে যেতেন তিনি। কখনও আবার বুলেটে চেপেও যেতেন।
আরামবাগে তাঁর দুটি প্রাসাদোপম বাড়িও রয়েছে। আরামবাগের সম্প্রীতিপল্লির দুই নম্বর ওয়ার্ডে রয়েছে একটি পেল্লায় দোতলা বাড়ি। বাড়ির সামনে খোদাই করে লেখা আছে স্বপ্ন মঞ্জিল। তার তলায় চার নম্বরে নাম রয়েছে প্রাথমিক শিক্ষক শাহিদ ইমামের। কীভাবে এল এত সম্পত্তি? চাকরি পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে টাকা নিয়েই কি এই রাজকীয় সম্পত্তি তৈরি করেছিলেন তিনি? শুধু তো আরামবাগেই নয়। কলকাতা-মুম্বইতেও নাকি একাধিক ফ্ল্যাট রয়েছে তাঁর। তবে শাহিদ গ্রেফতারির পর থেকেই আরামবাগের বাড়িতে তালা পড়েছে।
এদিকে টলিউড থেকে বলিউডেও যাতায়াত ছিল শাহিদের। এমনকী নাম ভাড়িয়ে বাংলা ও হিন্দি দুই ভাষাতেই মিউজিক ভিডিও বানিয়ে ফেলেছিলেন তিনি। রাখি সাওয়ান্তের সঙ্গে পর্যন্ত মিউজিক ভিডিয়ো রয়েছে শাহিদের। সিবিআই সূত্রে খবর, তিনটি বাংলা সিনেমার প্রযোজনা করেছে ও অভিনয় করেছে শাহিদ ইমাম। করোনাকালেও মুক্তি পায় তাঁর সিনেমা। তদন্তকারীদের অনুমান, চাকরি চুরির সেই কালো টাকাই সাদা করতে সিনেমা তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে।