রুজিরাকাণ্ডে মুখ খুললেন মমতা: ‘ঘরের বউকে কয়লা চোর বলছে…বিজেপিতে মেয়েদের সুরক্ষা নেই’

শর্মিষ্ঠা চক্রবর্তী | Edited By: সোমনাথ মিত্র

Feb 24, 2021 | 5:52 PM

ডানলপের মাঠে প্রকাশ্য সভায় দাঁড়িয়েই প্রত্যাশা মতো এবিষয়ে সুর চড়ালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)

রুজিরাকাণ্ডে মুখ খুললেন মমতা: ঘরের বউকে কয়লা চোর বলছে...বিজেপিতে মেয়েদের সুরক্ষা নেই
ছবি-ফেসবুক

Follow Us

হুগলি: সিবিআই ঢুকে পড়েছে তাঁর পরিবারের অন্দরে। দুর্নীতিকাণ্ডে সিবিআই জিজ্ঞাসাবাদের মুখে খোদ অভিষেক-পত্নী। তবে এই অস্বস্তির মোকাবিলাতেও চিরাচরিত ‘আবেগের রাজনীতি’র পথেই হাঁটলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, এমনটাই মনে করছেন একাংশের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।

অভিষেক-পত্নি রুজিরাকে সিবিআই (CBI On Coal Smuggling Case)-এর নোটিস, তারপর জিজ্ঞাসাবাদ এবং সেই জিজ্ঞাসাবাদ পর্বে পাওয়া উত্তরে সন্তুষ্ট না হয়ে সিবিআই-এর ফের নোটিস পাঠানোর সম্ভাবনা- এই ঘটনা পরম্পরাতেই এখন নজর আটকে গোটা বাংলার। ১৮৮ এ, হরিশ মুখার্জি রোডে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাসভবনে মঙ্গলবার সিবিআই আধিকারিকরা প্রবেশের মিনিট বারো আগে প্রবেশ করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অনেকেই মনে করেছেন, ‘ছোট্ট মেয়ে’ রুজিরাকে মনের জোর অটুট রাখার শক্তি জোগাতেই সেখানে গিয়েছিলেন পরিবারের প্রধান মমতা। সেই জিজ্ঞাসাবাদের পর এখনও মুখ খোলেননি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে হুগলির ডানলপের সাহাগঞ্জের মাঠ থেকে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) এ নিয়ে প্রথম প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেন। রুজিরা কাণ্ডে ‘ঘরের মা-বোন-বউ’ আবেগ এবং নারী নিরাপত্তার সঙ্গে মিলিয়ে দিয়ে বিজেপি-কে কাঠগড়ায় তুলে সুর চড়ালেন পোড় খাওয়া রাজনীতিক মমতা। তিনি এ দিন বলেন, “বাড়ির বউকে কয়লা চোর বলছে। আরে, আপনার গায়েই তো কয়লার কালি।”

নরেন্দ্র মোদী (PM Narendra Modi) সাহাগঞ্জের মাঠে সভা করেছিলেন ২২ ফেব্রুয়ারি। ঠিক তার আগের দিন অর্থাৎ ২১ তারিখ কয়লাকাণ্ডে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে নোটিস দিতে হাজির হয়েছিলেন সিবিআই আধিকারিকরা। লক্ষ্যণীয়ভাবে মোদী অবশ্য সে দিন ডানলপের মাঠ থেকে এ প্রসঙ্গ একটিও শব্দ ব্যয় করেননি। মাঝে অতিবাহিত হয়েছে আরও একটি দিন। ‘শান্তিনিকেতনে’ গিয়ে মঙ্গলবার রুজিরাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন সিবিআই আধিকারিকরা। এর রাজনৈতিক তাৎপর্যকে আরও কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছিল সিবিআই ঢোকার ঠিক আগেই অভিষেকের বাড়িতে মমতার প্রবেশ। মঙ্গলবার সিবিআই আসার ঠিক আগেই বেলা ১১.২২ মিনিটে মমতা ঢোকেন অভিষেকের বাড়িতে। প্রায় মিনিট দশেক থেকে বেরিয়ে যান তিনি। ততক্ষণে রাজনৈতিক জগতে উল্কার গতিতে ছড়িয়েছে গুঞ্জন। বেলা ১১.৩৫ মিনিটে সিবিআই ঢোকে শান্তিনিকেতনে। এরপর প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে চলে জিজ্ঞাসাবাদ পর্ব।

‘ম্যাডাম নারুলা’র দুর্নীতি যোগ নিয়ে বহু দিন যাবৎ বিশেষভাবে সরব শুভেন্দু অধিকারী-সহ বিজেপি নেতৃত্ব। এই আবহে রুজিরা নারুলা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সিবিআই জেরা করায় তৃণমূলের অস্বস্তি যে বেড়েছে তা অনুমেয়। কেন্দ্রীয় সরকার এজেন্সি-র মাধ্যমে তৃণমূলকে বিপাকে ফেলছে, এই অভিযোগ বারবার করেছেন মমতা। তারপরও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রীকে সিবিআই জিজ্ঞাসাবাদ করায় বিশেষ অস্বস্তি তৈরি হয়েছে তৃণমূলের। এবার সেই প্রসঙ্গে সরব হয়ে ভারতীয় সামাজ জীবনে অন্দরমহলবাসিনীদের সম্ভ্রমকেই হাতিয়ার করলেন পোড় খাওয়া রাজনীতিক মমতা, এমনটাই বিশ্লেষণ ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের।

স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে এদিন প্রারম্ভিক ভাষণে মোদীকে বিঁধেই সিবিআই প্রসঙ্গে চলে আসেন মমতা। সাহাগঞ্জের মাঠ থেকে তিনি বলেন, “ঘরের মা-বোনেদের বলছে, কয়লা চোর। বাড়ির বউকে কয়লা চোর বলছে।” তারপরই নরেন্দ্র মোদীর উদ্দেশে তাঁর বাক্যবাণ, “তোমার সারা গায়ে ময়লা লেগে আছে। নোটবন্দির টাকা কোথায় গেল, নরেন্দ্র মোদী জবাব দাও। বিএসএনএল বিক্রি হচ্ছে কেন, নরেন্দ্র মোদী জবাব দাও, কোল ইন্ডিয়া বিক্রি হচ্ছে কেন জবাব দাও।” উল্লেখযোগ্যভাবে, তিনি এদিন আরও বলেন, বিজেপি-তে মেয়েদের সম্মান নেই। তিনি বলেন, “বিজেপি-তে মেয়েরা সুরক্ষিত নয়। আমাদের দলে দেখবেন মেয়েদের সম্মান, মায়ের সম্মান। পশ্চিমবঙ্গ নদীমাতৃক দেশ। মায়ের দেশ।” অর্থাৎ সব মিলিয়ে রুজিরাকে সিবিআই জিজ্ঞাসাবাদ সাধারণ মা-বোন-কুলবধূদের উপর আক্রমণ হিসাবেই তুলে ধরতে চেয়েছেন মমতা, এমনই মনে করা হচ্ছে।

সম্প্রতি তৃণমূলের প্রচারমূলক লাইন- ‘বাংলা নিজের মেয়েকেই চাইছে’। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে, নারদ-ধ্বস্ত সময়েও মমতাকে বলতে শোনা যেত, তিনি পাশের বাড়ির মেয়ে। ভুল করলে, জনতা যেন একটা চড় মারে। কিন্তু, কাজ করার সুযোগ থেকে যেন বঞ্চিত না করে। একুশের নির্বাচনের সময়েও একই ধরনের শব্দ ব্যবহার করতে শোনা যাচ্ছে নেত্রীকে। তৃণমূলের রাজনীতির সঙ্গে পরিচিত যে কেউ জানেন, মমতার অতি সাধারণ পরিবার থেকে উঠে আসা, সততা, রাস্তায় থেকে লড়াই করার ভাবমূর্তি এবং আবেগেই তৃণমূলের প্রধান হাতিয়ার। একের পর এক নির্বাচনী লড়াইয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ভাবমূর্তি এবং আবেগে ভর করেই ময়দানে নেমছেন এবং একাধিকবার সফল হয়েছেন। এবার, রুজিরাকাণ্ডেও সেই ‘বাড়ির মা-মেয়ে-বউ’ আবেগই উস্কে দিয়ে জনসাধারণের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে চেয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো।

Next Article