আরামবাগ: মুড়ি! শহুরে মানুষের কাছে যত না জনপ্রিয় গ্রামবাংলার মানুষ মুড়ির সঙ্গে নিজেদের অবস্থান মেলাতে পারেন। সেই মুড়ির দাম আকাশ ছোঁয়া। মূল্যবৃদ্ধির জেরে যখন জেরবার সাধারণ-মধ্যবিত্ত মানুষ ঠিক তখন মুড়ির দাম বাড়ায় কপালে ভাঁজ পড়েছে তাঁদের। তবে উত্তোরত্তর কেন বাড়ছে দাম? তাহলে কি জিএসটি-র প্রভাব পড়ল মুড়িতে? নাকি পিছনে রয়েছে অন্য কোনও কারণ? খোঁজ-খবর নিল টিভি৯ বাংলা।
কয়েকদিন আগে একুশে জুলাইয়ের মঞ্চে মুড়ির দাম বৃদ্ধি নিয়ে সরব হতে দেখা গিয়েছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। মুড়ির উপর জিএসটি বসানো নিয়ে কেন্দ্রের উপর ক্ষোভ উগরে দিয়ে দিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘এক থালা মুড়ি খাব, তাতেও জিএসটি’! মুড়ির থালা হাতে নিয়ে লাখো-লাখো মানুষের সামনে মমতা বর্তা দিয়েছিলেন, ‘আমাদের মুড়ি ফিরিয়ে দাও, নইলে বিজেপি বিদায় নাও।’ তাই ‘মুড়ি’ নিয়ে যে রাজনৈতিক জলঘোলা হয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
জানা গিয়েছে, এক সপ্তাহের মধ্যে মুড়ির দাম বেড়েছে কেজি প্রতি ১০ থেকে ১২ টাকা। ফলত, গ্রামগঞ্জ থেকে শহরাঞ্চলের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু এখন, তাহলে কি মুড়ির দাম বেড়েছে শুধুই জিএসটি-র জন্যই?
দাম বাড়ার অন্যতম কারণ
চাল থেকে তৈরি হয় মুড়ি। আর সেই গোড়াতেই লুকিয়ে সমস্যা। কারণ মোটা চাল থেকে সরুচালের দাম এখন আকাশ ছোঁয়া। এক কথায় ঊর্ধ্বমুখী। হঠাৎ করেই এক সপ্তাহে কেজি প্রতি ১০ টাকা থেকে ১৬ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে চালের দাম। তাই মুড়ি বিক্রেতাদের মত, চালের দাম হঠাৎ করেই বেড়ে যাওয়ার কারণেই তাঁরা মুড়ির দাম বাড়াতেও বাধ্য হয়েছেন।
চাল ও মুড়ির দাম দেখুন এক নজরে
চাল ব্যবসায়ীরা কী বলছেন?
ব্যবসায়ীদের কথায়, এইভাবে হঠাৎ করে দাম বেড়ে দেওয়া তাঁরা আগে কখনও দেখেননি।তাঁদের বক্তব্য কালোবাজারি ও মজুতদারদের জন্যই এইসব হচ্ছে। অপরদিকে, রাইসমিলের ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, ধানের আমদানি কম। উৎপাদনও কম হচ্ছে।
জানা গিয়েছে, আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনায় বর্ষাতে প্রায় ৪০ শতাংশ জমিতে ধান রোপন করা যায়নি। কৃষকদের আশঙ্কাই ছিল যে এর জেরে খাদ্যের অভাব দেখা দেবে। তাই বেশিরভাগ কৃষকই বাড়িতে ধান মজুত করেছেন। কিছু ব্যবসায়ীও ধান মজুত করায় রাইস মিলেও ধানের আমদানি কম হচ্ছে। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কিছু মজুতদার ধানের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। বেশি দামি রাইস মিলকে ধান কিনতে হচ্ছেপ্রোডাকশনের জন্য। ফলে ধানের দাম বেশি হওয়ায় চালের দামও সাধারণভাবেই বেশি হবে। আর চালের দাম বাড়লে মুড়ির দাম যে বাড়বে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
এক মুড়ি বিক্রেতাও মেনে নিলেন সেই একই কথা। তিনি বলেন, ‘চালের দাম বাড়ার জন্য বাড়ছে মুড়ির দাম। চালের দাম যদি এত বাড়ে আমরা কোথা থেকে জোগান দেব? আগে যে চালের দাম ছিল ২৫ টাকা সেই চাল এখন ৩৮ টাকা। তাহলে কী রেটে আমরা বিক্রি করব? তবে চালের জিএসটি-র জন্য বাড়ল নাকি অন্য কিছুর জন্য তা আমরা বলব কী করে?