সিঙ্গুর: “কেউ কেউ বাজে কথা বলে বেড়াচ্ছে। আমি টাটাকে তাড়িয়ে দিয়েছি, টাটা চাকরি দিচ্ছে। টাটাকে আমি তাড়াইনি, সিপিএম তাড়িয়েছে।” সিঙ্গুর (Singur) প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (CM Mamata Banerjee) এই বক্তব্যের পরেই তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে সিঙ্গুর সহ গোটা রাজ্যে। মমতার বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছে বাম-বিজেপি। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য প্রসঙ্গে আড়াআড়ি বিভক্ত সিঙ্গুরের মানুষ। তবে সিঙ্গুরে টাটাদের ( Singur Tata Factory) কারখানা না হওয়ার আক্ষেপ রয়েছে সকলেরই। সেই সময়ের জমি দিতে ইচ্ছুক কৃষকরা মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের সমর্থন করছেন না। অন্যদিকে জমি আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত কৃষকরা আবার সমর্থন করেছেন মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য।
কী বলছেন রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য?
তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যকে সমর্থন বা প্রত্যাখ্যান কিছুই করলেন না সিঙ্গুরের প্রাক্তন বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। সিঙ্গুরে কৃষক আন্দোলনের সময় শুরু থেকেই নেতৃত্ব দিতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। এবার মমতার মন্তব্যের পর তিনি বলেন, “মমতার মন্তব্যকে আমি সমর্থন বা প্রত্যাখ্যান কিছুই করছি না। জমি আন্দোলন যখন তুঙ্গে তখন তদানন্তীন রাজ্যপাল গোপাল কৃষ্ণ গান্ধীর নেতৃত্বে কৃষক এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মধ্যে একটা বোঝাপড়া হয়। তখন মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ঠিক হয় অনিচ্ছুকদের বাদ দিয়ে স্বেচ্ছায় যত জমি কৃষকরা দিয়েছেন তাদের জমি নিয়ে শিল্প হোক। তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গ সরকার এই প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য পলিটব্যুরোতে পাঠিয়েছিল। পলিটব্যুরো সেই প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করে। পরবর্তীতে একটা সংশোধিত প্রস্তাব কৃষকদের দেয়।”
কী বলছেন বেচারাম মান্না?
বর্তমান মন্ত্রী তথা সিঙ্গুরের বিধায়ক বেচারাম মান্না বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী যেটা বলেছেন সেটা ঠিক বলেছেন। কারণ বাংলার মানুষ জানে সিপিএম সিঙ্গুরে রাজনীতি করতে এসেছিল। কারখানা করার মানসিকতা থাকলে রাজভবনে রাজ্যপালের ও মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে যে চুক্তি হয়েছিল তা মানলে সিঙ্গুরে শিল্পও থাকত। কৃষিও থাকত।”
স্থানীয় বাসিন্দা কৃষ্ণপদ সানা বলেন, “এই সব ভাষাগুলি উচ্চারণ করেন কী করে? উনি মুখ্যমন্ত্রী। ওনার গলায় এই সুর মানায় না। টাটাকে তাড়িয়েছে সিপিএম। এত বড় মিথ্যা কথা উনি বললেন কী করে?” জমি আন্দোলনকারী ভুবন বাগুই বলেন, “দিদি যেটা বলেছেন ঠিকই বলেছেন। কারণ টাটাদের চলে যাওয়ার পিছনে বামেদের হাতই রয়েছে। রাজভবনে সরকারি যে চুক্তি করেছিল তা তারা নিজেরাই মানেনি। সে কারণেই টাটাদের চলে যেতে হয়েছিল।”
কী বলছেন ইচ্ছুক জমিদাতারা?
ইচ্ছুক জমিদাতা শক্তিপদ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আজ ১০-১২ বছর পর ওনার এটা মনে হল! কারখানা যাতে না হয় তার জন্য তো ওখানে উনি মঞ্চ করে বসেছিলেন। গোটা সিঙ্গুরবাসী, ভারতবাসী জানে সিঙ্গুর থেকে টাটাদের কারা তাড়িয়েছিল।” সিঙ্গুরের বাম নেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় বলেন, “মমতার এই কথা প্রত্যাশিত। উনি যখন থেকে সংসদীয় রাজনীতিতে প্রবেশ করেছেন তখন নিজের মিথ্যা ডিগ্রির কথা বলতেন। আজকে ওনার যে রাজনৈতিক জীবন মিথ্যার উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে। সকলেই জানেন উনি কী বলেন, উনি কী করেন।”