HS Result 2022 : চন্দ্রের ছটায় আলোকিত হরিপালের ঝুপড়ি, স্বপ্ন পূরণে সরকারি সাহায্যের আশায় পরিবার

HS Result 2022 : চন্দ্রের সাফল্যে গর্বিত তাঁর বাবা-মা। কথা বলতে গিয়ে দু'জনেরই চোখ ছলছল করে উঠল। জানালেন, অনেক কষ্ট করে ছেলেকে মানুষ করেছেন। ছেলের স্বপ্ন পূরণ হোক। এটাই চান তাঁরা।

HS Result 2022 : চন্দ্রের ছটায় আলোকিত হরিপালের ঝুপড়ি, স্বপ্ন পূরণে সরকারি সাহায্যের আশায় পরিবার
ছেলেকে 'বাতাসা মুখ' করাচ্ছেন কনক মণ্ডল
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jun 10, 2022 | 7:54 PM

হরিপাল : মুখে একগাল হাসি। টিভিতে নিজের নাম শুনে কী করবেন বুঝতে পারছিলেন না। তাঁর সাফল্যের খবর ছড়িয়ে পড়তে সময় লাগল না। বাড়িতে ভিড় করতে শুরু করলেন প্রতিবেশীরা। কিন্তু, এক চিলতে ঘরে কাকে কোথায় বসাবেন? তাতে কী, উচ্চ মাধ্যমিকে পঞ্চম হয়ে হরিপালের ঝুপড়িকে আলোকিত করেছেন চন্দ্র মণ্ডল।

হরিপালের খামারগাছি এলাকার রেললাইনের পাশে ঝুপড়ি। সেখানেই বাবা, মা, ঠাকুমা, দাদা ও বৌদির সঙ্গে থাকেন চন্দ্র। প্ল্যাস্টার না-করা ইটের দেওয়াল। টালির চাল। ছোট্ট পড়ার ঘর। টেবিলের পাশে রাখা নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের টেনিদা। ওই ছোট্ট পড়ার ঘরে বসেই ভবিষ্যতের স্বপ্ন বুনেন চন্দ্র।

হরিপালের গুরুদয়াল ইনস্টিটিউশনের ছাত্র চন্দ্র। এই স্কুল থেকেই মাধ্যমিক পাশ করেছিলেন। মাধ্যমিকে পেয়েছিলেন ৫৪৮। চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকে বাণিজ্য শাখায় ভর্তি হন চন্দ্র।

৪৯৪ পেয়ে উচ্চ মাধ্যমিকে পঞ্চম হয়ে খুশি চন্দ্র। পঞ্চম হবেন, তা ভাবেননি বলে জানালেন। কিন্তু, ভাল ফলের আশা করেছিলেন। পঞ্চম হয়ে মুখে হাসি ফুটলেও ভবিষ্যতের স্বপ্ন নিয়ে কিছুটা শঙ্কায় রয়েছেন।

নিজের সাফল্যের পিছনে অবদান নিয়ে চন্দ্র বলেন, গৃহশিক্ষকরা খুব সাহায্য করেছেন। করোনার জেরে এই দু’বছরে স্কুল অনেকদিন বন্ধ ছিল। পড়াশোনার সেই খামতি মিটিয়েছেন গৃহশিক্ষকরা। বাবা-মা সবসময় তাঁকে উৎসাহ দিতেন। সাফল্যের জন্য সারাদিন বই নিয়ে বসে থাকতেন না চন্দ্র। ক্রিকেট খেলতে ভালবাসেন। বন্ধুদের সঙ্গে চুটিয়ে ক্রিকেট খেলেন। দিনে চার-পাঁচ ঘণ্টা পড়তেন। চন্দ্রের কথায়, যতটুকু সময় পড়বে, সেইসময় মন দিয়ে পড়লেই সাফল্য আসবে।

চন্দ্রের বাবা দীনেশ মণ্ডল পেশায় রাজমিস্ত্রি। মা কনক মণ্ডল অন্যের বাড়িতে রাঁধুনির কাজ করেন। চন্দ্র বললেন, এরপর বি.কম পড়বেন। তারপর চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্সি নিয়ে পড়তে চান। কিন্তু, চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্সিতে পড়ার খরচ কোথা থেকে পাবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় চন্দ্র। এই খুশির দিনেও তাঁর চোখে-মুখে সেই আশঙ্কা ধরা পড়ল। চাইছেন, সরকার সাহায্য করলে স্বপ্ন পূরণ করতে পারবেন।

HS result

এই পড়ার টেবিলে ভবিষ্যতের স্বপ্ন বুনেন চন্দ্র মণ্ডল

ছেলের সাফল্যে গর্বিত দীনেশ ও কনক। কথা বলতে গিয়ে দু’জনেরই চোখ ছলছল করে উঠল। জানালেন, অনেক কষ্ট করে ছেলেকে মানুষ করেছেন। ছেলের স্বপ্ন পূরণ হোক। এটাই চান তাঁরা। কিন্তু, চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্সি পড়ার খরচ কোথা থেকে আসবে, সেই ভেবে অকূল পাথারে পড়েছেন তাঁরা। চাইছেন, সরকার তাঁদের ছেলেকে পড়াশোনায় সাহায্য করুক।

ছেলে আজ উচ্চ মাধ্যমিকে পঞ্চম হয়েছে। মিষ্টি মুখ করানো দরকার। কিন্তু, তার জন্যও তো টাকা দরকার। তাই, ঘরে থাকা বাতাসা দিয়েই ছেলেকে মিষ্টিমুখ করালেন কনক। মায়ের হাত থেকে বাতাসা সানন্দে খেলেন চন্দ্র। মায়ের আশীর্বাদের হাত পড়ল তাঁর মাথায়। এই আশীর্বাদ নিয়েই স্বপ্নের পিছনে দৌড়ে যেতে চান চন্দ্র।