চুঁচুড়া: শনিবার দেশব্যাপী জাতীয় লোক আদালত (National Lok Adalat) বসেছে বিভিন্ন জেলা আদালতগুলির অধীনে। এই নিয়ে চলতি বছরের চতুর্থ লোক আদালত হল এটি। সেই মতো এ রাজ্যেও বসেছে লোক আদালত। আর সেই লোক আদালতে এবার বিচারকের ভূমিকায় রূপান্তরিত সমাজকর্মী। শনিবার চুঁচুড়ায় হুগলি জেলা আদালতের লোক আদালতে বিচারকের ভূমিকায় অত্রি কর। রূপান্তরিতদের প্রতিনিধি অত্রি। জীবনের প্রতিটি চড়াই-উতরাইয়ে বহু লড়াই-সংগ্রাম চালাতে হয়েছে তাঁকে। অনেক উপেক্ষার জবাব দিতে হয়েছে। এবার সেই অত্রি লোক আদালতের বিচারকের আসনে।
অত্রির বাড়ি ত্রিবেণীতে। কুন্তিঘাটের রামনগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষিকা হিসেবে কর্মরত তিনি। পাশাপাশি তৃতীয় লিঙ্গের অধিকার নিয়েও লড়াই করেন। ছোটদের পড়ানোর পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক কাজের সঙ্গেও যুক্ত তিনি। সু্প্রিম কোর্ট তৃতীয় লিঙ্গকে স্বীকৃতি দিয়েছে বটে, কিন্তু এখনও সমাজে তাঁদের অধিকারের লড়াই থামেনি। সেই লড়াই এবং সামাজিক কাজের জন্য অত্রি করকে লোক আদালতের বিচারকের সম্মান দেওয়া হয়। আজ চুঁচুড়ায় হুগলি জেলা আদালতে লোক আদালত বসে। সব মিলিয়ে পাঁচটি বেঞ্চে সাড়ে ছয় হাজার মামলার নিস্পত্তি হবে। ফৌজদারী থেকে শুরু করে চেক বাউন্স, গাড়ি দূর্ঘটনা, শ্রম বিবাদ, বিদ্যুৎ বিল, বৈবাহিক মামলা, ভূমি অধিগ্রহন,রাজস্ব আদায় থেকে শুরু করে অন্যান্য নাগরিক বিষয়ক মামলার নিষ্পত্তি হবে এই লোক আদালতে। বেঞ্চে বিচারক হিসাবে ছিলেন হাইকোর্টের বিচারপতি,আইনজীবী ও সমাজকর্মীরা। উপস্থিত ছিলেন রাজ্য লিগ্যাল সার্ভিস অথরিটির এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান তথা কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি টি এস সিভাগনামান, হুগলি জেলা জজ অভিজিৎ সোম সহ প্রমূখ।
অত্রি কর এই বিষয়ে বলেন,”২০১৪ সালে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরেও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের সামনে আনার প্রচেষ্টা করা হয়নি। সেই জায়গা থেকে স্টেট ও ডিস্ট্রিক্ট লিগাল সার্ভিস অথরিটি যেটা করছেন, সেটা অবশ্যই সাধুবাদ যোগ্য। এর আগেও বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত আমাকে সম্মান পুরস্কার দিয়েছেন। আমার কাজ সাধারনত সমাজসেবা করা। কিন্তু এরকম হয়নি। জাজমেন্ট তো আমরা সারাজীবনই করি। আর লোকজন হয়ত আমাদের সম্বন্ধে বেশি ‘জাজমেন্টাল’। আজ ‘মেন্টাল’টা বাদ দিয়ে শুধু ‘জাজ’ করব। আমি নিজে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন চালাই। সেই কাজে ডিস্ট্রিক্ট ও স্টেট লিগ্যাল সার্ভিস অথরিটি আমাকে প্রচুর সাহায্য করে।”