হুগলি: ‘দলের নীতি আদর্শ শুধু বইয়ের পাতাতেই শোভা পাচ্ছে। বাস্তবে নেই।’ বিজেপি (BJP)-র তৃতীয় এবং চতুর্থ দফার প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর এই মন্তব্য করেই দলের সঙ্গে একুশ বছরের সম্পর্ক ছিন্ন করেছিলেন ভাস্কর ভট্টাচার্য (Bhaskar Bhattacharya)। বিজেপির সেই প্রাক্তন হুগলি সভাপতির মান ভাঙাতে তাঁর বাড়িতে হাজির হলেন বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। উত্তরপ্রদেশর উপ-মুখ্যমন্ত্রী কেশবপ্রসাদ মৌর্য, জেলা সভাপতি শ্যামল বোস তাঁর বাড়িতে উপস্থিত হওয়ায় সুর নরম হল ভাস্করবাবুর। আবার শুরু করলেন দলের কাজ।
দল প্রার্থী না করায় ক্ষোভে, অভিমানে বিজেপি ছাড়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন বিজেপি রাজ্য কমিটির সদস্য উত্তর শহরতলীর পর্যবেক্ষেক ভাস্কর ভট্টাচার্য।গত ১৬ মার্চ দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকে চিঠি লিখে পদত্যাগের কথা জানিয়েছিলেন তিনি। লেখেন, চাঁপদানী বা শ্রীরামপুরে তাকে এবার দল টিকিট দেবে এমনটা ভেবেছিলেন। দল তাঁকে টিকিট না দিয়ে শ্রীরামপুরে প্রার্থী করে কবির শঙ্কর বোসকে চাঁপদানীতে প্রার্থী করে দিলীপ সিংকে। যেটা কোনওভাবেই মেনে নিতে পারবেন না। তিনি এও জানান যে, ২১ বছর ধরে বিজেপি করে এবার বিধানসভায় প্রার্থী না হতে পারা খুব দুর্ভাগ্যের। যাঁদের প্রার্থী করা হল তাদের থেকে যোগ্যতায় অনেক এগিয়ে থাকলেও দল তাকে বিমুখ করেছে। তাই তিনি দল ছাড়লেন।
এদিকে সদ্য তৃনমূল ছেড়ে বিজেপি যোগ দিয়ে টিকিট পেয়েছেন উত্তরপাড়ার প্রবীর ঘোষাল, সিঙ্গুরের রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য, সপ্তগ্রামের দেবব্রত বিশ্বাসরা। এই সব জায়গায় কর্মীদের ক্ষোভ-বিক্ষোভ মারাত্মক আকার নেয়। কেউ কেউ নির্দল হয়ে ভোটে দাঁড়াবার সিদ্ধান্ত নেন। নেতা ও কর্মীদের এই ক্ষোভ ভোটের আগে বিজেপির পক্ষের হাওয়া বিপরীত দিকে ঘুরতে পারে। এটা বুঝতে পেরেই ড্যামেজ কন্ট্রোলে নামে বিজেপি নেতৃত্ব। প্রথমে কৃষ্ণা ভট্টাচার্যকে তাঁর বাড়িতে গিয়ে মান ভাঙাতে হয় রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে। আর এদিন বিকালে শ্রীরামপুরে ভাস্কর ভট্টাচার্যের ফ্ল্যাটে যান উত্তরপ্রদেশর উপ-মুখ্যমন্ত্রী কেশব প্রসাদ মৌর্য, জেলা সভাপতি শ্যামল বোস। এক ঘন্টা আলোচনার পর কেশব মৌর্য্য জানান, ভাস্করবাবু তাঁদের পুরনো নেতা। তাঁর কথায়, “অনেক সময় এমন হয় যা চাওয়া হয় তা সময়ে মেলে না। বিজেপিতে বিধায়ক না হতে পারলেও অন্য কিছু হওয়ার রাস্তা বন্ধ হয় না। মান অভিমান থাকতে পারে পুরনো কার্যকর্তাদের। অনেক সময় আমরা লোকসভা বিধানসভায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অপেক্ষা করি। সব সময় হয় না। কিন্তু দলের নেতৃত্বের সিদ্ধান্তের উপর ভরসা করি, তারা যেটা করবে সেটা ভালোর জন্যই।”
আরও পড়ুন: ভোটারের মন পেতে এবার ‘কীর্তনিয়া’র ভূমিকায় সৌরভ
অন্যদিকে ভাস্কর ভট্টাচার্য বলেন, “কেশবজির মতো নেতা আমার বাড়িতে এসে যখন বললেন আমি তাঁদের সঙ্গেই আছি, তখন আর কি বলার থাকতে পারে।” তিনি আরও বলেন, দল প্রার্থী না করায় ক্ষোভ যে স্বাভাবিক তা মেনে নিয়েছেন নেতৃত্ব। কেশব মৌর্য তাঁর বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার পর সভাপতি শ্যামল বোসের সঙ্গে দলের কাজে বেরিয়ে যান ভাস্কর ভট্টাচার্য।