হাওড়া: আনিস মৃত্যুতে তোলপাড় রাজ্য। এবার হস্তক্ষেপ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আনিসের পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে চান মুখ্যমন্ত্রী। সোমবার সকালেই মন্ত্রী পুলক রায় আনিসের আমতার বাড়িতে যান দেখা করতে। আনিসের বাবা ও দাদার সঙ্গে কথা বলেন তিনি। একটি ঘরে একান্তে কথা বলেন তাঁরা। মন্ত্রী পুলক রায় জানিয়েছেন, ঘটনার পুলিশি তদন্ত হবে। মুখ্যমন্ত্রী আনিসের পরিবারের কাছ থেকে দেখা করার জন্য সময় চেয়েছেন বলেও জানান মন্ত্রী। তারপরই আনিসের বাবা সেলিম খান বলেন, “মন্ত্রী জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী সময় চেয়েছেন কথা বলার জন্য।” নবান্নে গিয়ে আনিসের বাবা ও দাদা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করবেন।
সোমবার সকালে আনিসের বাবার সামনে নতুন করে বিক্ষোভ শুরু হয়। মন্ত্রী যখন আনিসের বাড়ির ভিতর, তখন বাইরে বিক্ষোভ দেখান আনিসের বন্ধু, যুবক ও প্রতিবেশীরা। মন্ত্রী পুলক রায় বলেন, “তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি দেওয়া হবে।”
আনিস মৃত্যুতে ইতিমধ্যেই বঙ্গ রাজনীতি তোলপাড়। সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, “একটা কম বয়সের ছেলে, প্রতিবাদী ছেলে, ছাত্রনেতা খুন হয়েছে। এটা রাষ্ট্রীয় খুন। এনকাউন্টার নাকি পুলিশের পোশাকে তৃণমূলের গুণ্ডারা খুন? এটা পরে ঠিক করুক। কিন্তু বিচার চাই। এইসময় হঠাৎ তিন চার দিন পর, তথ্য প্রমাণ লোপাট করে দেওয়ার পর এখন মুখ্যমন্ত্রী খবর পাঠিয়েছেন, যদি ওঁরা আগ্রহী থাকেন, তাহলে দেখা করতে পারেন। ওঁরা যেন নবান্নে এসে দেখা করেন। রিজায়ানুরের সময়ে মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধবাবুও বাড়ি গিয়েছিলেন। এই ঘটনার সঙ্গে কোনও মিল নেই। তবুও ওই ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী বাড়িতে গিয়েছিলেন। আর এখানে মুখ্যমন্ত্রী নবান্নে ডেকে পাঠিয়েছেন।”
বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা বলেন, “এই ঘটনার সিবিআই তদন্তের দাবি উঠেছে। তো সেই তদন্ত হলে ঘটনার সঙ্গে যে পুলিশ জড়িত, তা প্রমাণ হয়ে যাবে। আর যত ধীরে ধীরে পুলিশ এই মামলায় খুনী রূপে যুক্ত হয়ে যাচ্ছে, তখন মুখ্য়মন্ত্রীর যে নীতি রয়েছে, ঘুষ নীতি, চাকরি দেব, টাকা দেব, তা কায়েম করতে চাইছেন।”
রবিবার রাতে আনিস খানের বাড়িতে এসেছিল একটি প্রতিনিধি দল। সেই প্রতিনিধি দলের এক সদস্য আনিসের বাবাকে জানিয়েছিলেন, তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী পাঠিয়েছেন। আনিসের পরিবারকে মুখ্য়মন্ত্রী চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বলে জানান। আনিসের দাদা কিংবা পরিবারের কোনও এক সদস্যকে চাকরি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। রাতেই আনিসের বাবা জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর সেই চাকরির কথা মাথায় রাখছেন। কিন্তু আগে দোষীদের শাস্তি দেওয়ার বিষয়টি সুনিশ্চিত করতে হবে।
সোমবার সকালেই হাওড়ার আমতায় নিহত ছাত্রনেতা আনিস খানের বাড়িতে গিয়েছিলেন পুলিশের উচ্চ পদস্থ কর্তারা। ছাত্রনেতার বাড়িতে যান ডিএসপি সুব্রত ভৌমিক। ছাত্রনেতা আনিসের বাড়িতে ডিএসপি-র নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল যায়। ডিএসপি আনিসের পরিবারকে আশ্বস্ত করেন, সিভিক ভলেন্টিয়ারের বেশে আদৌ কারা এসেছিল, তা খুঁজে বার করা হবে দ্রুত। তবে আনিসের পরিবার এখনও সিবিআই তদন্তের দাবিতে অনড়। ওই চার জন কারা ছিল, তাদের নাম সামনে আনার দাবি তুলেছে পরিবার। আনিসের বাবা বলেন, “আমরা পুলিশের সঙ্গে রয়েছি। পুলিশকে সাহায্যও করব। কিন্তু আমরা এখনও চাই সিবিআই তদন্ত হোক। আমরা পুলিশকে হেয় করছি না, তবে সঠিক তদন্তের জন্য সিবিআই তদন্ত প্রয়োজন।”