হাওড়া: কাকভোরে বাগনানে জাতীয় সড়কে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু রাঁচির অভিনেত্রী ইশা আলিয়ার। রাঁচি থেকে আসার পথে ১৬ নম্বর জাতীয় সড়কে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। নায়িকার স্বামীর প্রকাশকুমার ঝাঁ-এর বক্তব্য অনুযায়ী, ছিনতাইয়ে বাধা দেওয়ায় আড়াই বছরের মেয়ের সামনেই পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি করা হয়েছে তাঁর স্ত্রীকে। কিন্তু এই ঘটনায় বেশ কয়েকটি জায়গায় রহস্য় থেকেই যাচ্ছে। পরিচালক প্রকাশকুমার ঝাঁ-এর বক্তব্য অনুযায়ী, ১৬ নম্বর জাতীয় সড়কের মহিষরেখা ব্রিজের কাছেই গাড়ি দাঁড় করিয়ে প্রাতঃকৃত করতে গিয়েছিলেন তিনি। তাঁর স্ত্রী ও কন্যা গাড়িতেই ছিল। সেখানেই তিন দুষ্কৃতী হামলা চালায়। টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। ছিনতাইয়ে বাধা দেওয়ায় পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি করে দেয় দুষ্কৃতীরা। এরপর রক্তাক্ত স্ত্রীকে গাড়ির ডিকিতে তুলে তিনি একটি কারখানার সামনে আসেন। এখান থেকেই ধন্দ। ওই কারখানার সামনে বেশ কয়েকজন দাঁড়িয়েছিলেন। তাঁদের বয়ানে বেশ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য অনুযায়ী, প্রকাশ যখন গাড়ি এসে দাঁড় করিয়ে চিৎকার করেন, তখন তাঁরা ছুটে যান। তাঁরা ওই ওই অভিনেত্রীকে এমন অবস্থায় দেখেছিলেন, যেন মনে হচ্ছিল একটি দেহ শুইয়ে রাখা হয়েছে। গাড়িতে কোনও রক্তের ছাপ নেই। এমনকি গাড়ির ভিতরেও কোনও রক্তের ছাপ নেই। এমনকি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটলে, যে পরিমাণ ধস্তাধস্তি হয়, সেরকমও কোনও ছাপ তাঁরা গাড়ির ভিতরে লক্ষ্য করেননি। বরং গাড়ির ভিতরের সব জিনিস সাজিয়েই রাখা ছিল।
স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, যে এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে, অর্থাৎ জাতীয় সড়কের ওই এলাকা এমনিতে ফাঁকা থাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে, কিন্তু এতদিনে গুলিচালনার ঘটনা তাঁরা দেখেননি। অভিনেত্রীর স্বামী পেশায় পরিচালক প্রকাশকুমার ঝাঁ নিজেই দাবি করেছেন, ‘পার্স’ ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল দুষ্কৃতীরা। প্রশ্ন উঠছে, একটা পার্সে আর কত টাকাই থাকতে পারে, তার জন্য গুলি? কিংবা কেনই বা সেই পার্স আগ্নেয়াস্ত্র দেখে দিয়ে দিলেন না অভিনেত্রী?
প্রশ্ন আরও একটা জায়গায়, যে জায়গায় গাড়ি দাঁড় করানো হল, সেখানে কি আগে থেকেই দুষ্কৃতীরা ছিল? নাকি আগে থেকেই তাঁদের গাড়ি কেউ অনুসরণ করছিল? প্রশ্ন থাকছেই। উল্লেখ্য, যেখানে ঘটনাটি ঘটেছে, তার এক কিলোমিটারেরও কম দূরে ট্রাফিক গার্ড রয়েছে। সেটা জানতেন না ইশার স্বামী। তিনি ইশার রক্তাক্ত শরীর গাড়ির ডিকিতে তুলে প্রায় আড়াই কিলোমিটার ‘ড্রাইভ’ করেন।
এদিকে, যদি ছিনতাই হয়েই থাকে, তাহলে প্রশ্ন পুলিশ কী করছিল? কোথায় নজরদারি? এত নাকা সত্ত্বেও কীভাবে হাতে হাতে পিস্তল? হামলা চালিয়ে কীভাবে অবাধে চম্পট দিল দুষ্কৃতী,হাফ কিলোমিটার দূরে ট্রাফিক গার্ড থাকলেও গুলির শব্দও কীভাবে শুনতে পেল না পুলিশ? বাগনানকাণ্ডে উঠছে একাধিক প্রশ্ন।