‘হোমওয়ার্ক হয়নি কেন?’, একরত্তি ছাত্রের গায়ে জ্বলন্ত মোম, গরম খুন্তির ছ্যাঁকা!

TV9 Bangla Digital | Edited By: tista roychowdhury

Aug 26, 2021 | 9:32 PM

Crime News: অভিযোগ, দুই ভাইবোন পড়তে বসার কিছু সময় পরেই অভিযুক্ত শিক্ষক পীযুসের মা-বাবার থেকে একটি মোমবাতি ও একটি খুন্তি চেয়ে নেন। পড়া না পারলে ভয় দেখাবেন বলে জানান দীপক।

হোমওয়ার্ক হয়নি কেন?, একরত্তি ছাত্রের গায়ে জ্বলন্ত মোম, গরম খুন্তির ছ্যাঁকা!
আক্রান্ত ছাত্র পীযুুষ, নিজস্ব চিত্র

Follow Us

হাওড়া: ‘লঘু পাপে গুরুদণ্ড!’ হোমওয়ার্ক না করার ‘অপরাধে’ দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রের গায়ে গরম মোম, খুন্তির ছ্য়াঁকা দেওয়ার অভিযোগ উঠল গৃহশিক্ষকের (Home Tutor) বিরুদ্ধে। পুলিশ কমিশনারের হস্তক্ষেপে সক্রিয় থানা। আক্রান্ত ছাত্রের নাম পীযুষ মালি। হাওড়ার গোলাবাড়ির ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়।

আক্রান্ত ছাত্রের পরিবারের অভিযোগ, দীপক প্রজাপতি নামে এক গৃহশিক্ষক রোজই পড়াতে আসতেন পীযুষকে। গত ১৪ অগস্ট তাঁদের সালকিয়ার ফকিরবাগানের বাড়িতে পীযুষকে পড়াতে আসেন দীপক। সেদিন, ছোট্ট পীযুষের সঙ্গে ছিল তার দিদিও।  অভিযোগ, দুই ভাইবোন পড়তে বসার কিছু সময় পরেই অভিযুক্ত শিক্ষক পীযুসের মা-বাবার থেকে একটি মোমবাতি ও একটি খুন্তি চেয়ে নেন। পড়া না পারলে ভয় দেখাবেন বলে জানান দীপক। মোমবাতি ও খুন্তি নিয়ে দীপক ঘরের দরজা বন্ধ করে দেন বলে অভিযোগ। কিন্তু তারপর থেকে মাঝেমধ্যেই বন্ধ ঘরের মধ্যে থেকে পীযুষের চিত্‍কারের আওয়াজ পান তার মা সঙ্গীতা মালি। রোজকার মতো পড়া না পাওয়ার জন্যই হয়ত বকা খাচ্ছে ছেলে এই ভেবে আর অত চিন্তা করেননি তিনি। কিন্তু, কিছু সময় পরেই ঘর থেকে ছেলেকে ছুটে আসতে দেখে থতমত খেয়ে যান সঙ্গীতা। পীযুষ তখন ভয়ে আতঙ্কে কাঁপছে। ঘাম ঝরছে দরদর করে। কিন্তু, ছেলের ‘স্যর’ ততক্ষণে বেপাত্তা। পীযুষের দিদি জানায়, হোমওয়ার্ক না করায় তাদের ‘স্যর’ ভাইয়ের গায়ে গরম মোম ঢেলে দিয়েছে। এমনকী খুন্তি গরম করে তা দিয়ে ছ্য়াঁকা পর্যন্ত দিয়েছে।

ছ্য়াঁকা দেওয়া হয়েছে পীযুষের গায়ে, নিজস্ব চিত্র

পীযুষের বাবা রঞ্জিত মালি দেখেন ছেলের সারা গায়ে-হাতে-পায়ে বড় বড় ফোস্কা। সঙ্গে সঙ্গে তাকে নিয়ে ছোটেন স্থানীয় চিকিত্‍সালয়ে। পরের দিন সকালেই পীযুষকে নিয়ে যাওয়া হয় হাওড়া জেলা হাসপাতালে। পীযুষের বাবা রঞ্জিত মালির ফুলের দোকান রয়েছে। মা সঙ্গীতা মালি গৃহবধূ। পীযুষের মায়ের কথায়, “রোজকার মতোই ছেলেটা পড়তে বসেছিল। ওর দিদিও সঙ্গে ছিল। ওদের স্যর যেমন রোজ আসেন তেমন এসছিলেন। কিন্তু সেদিন, দীপকস্যর আমার থেকে একটা খুন্তি চান। বলেন, ওরা পড়া না পারলে ভয় দেখাবেন। ওদের বাবার থেকেও একাট মোমবাতি চেয়ে নেন। এরপর, আমার স্বামী দোকানে চলে যান। আমি ঘরের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। স্যর ঘরের দরজা বন্ধ করে পড়াচ্ছিলেন। মাঝে মধ্যেই ছেলের গলার চিত্‍কার পাচ্ছিলাম। ভেবেছিলাম পড়া পারছে না বলে স্যর হয়ত দুই আঙুলের মাঝে পেনসিল দিয়ে চাপ দিচ্ছে। তাই ওতটা গা করেনি। পরে আমি ঘরের দিকে যাব যাব করছি, তখনই ছেলে কাঁদতে কাঁদতে ছুটে  বেরিয়ে আসে। দেখি, দরদর করে ঘামছে। ততক্ষণে স্যর চলে গিয়েছেন। ওর দিদি বলে, ছেলেকে নাকি স্যর খুন্তি দিয়ে ছ্য়াঁকা দিয়েছেন। গায়ে গরম মোম ঢেলে দিয়েছেন।”

পীযুষের বাবা রঞ্জিত বলেন, “আমি খবর পেয়ে তড়িঘড়ি বাড়ি আসি। দেখি ছেলের সারা গায়ে ফোস্কা পড়ে গিয়েছে। দেখে হতভম্ব হয়ে যাই। আমার ছেলে কী এমন করল যে এত বড় শাস্তি দিতে হল! দীপকবাবুকে খুব বিশ্বাস করতাম। কখনও ভাবতেও পারিনি ওঁ আমার ছেলের সঙ্গে এমন করবেন। কতই বা বয়স আমার ছেলের। শুধু হোমওয়ার্ক করা নিয়ে এত বড় ঘটনা ঘটবে ভাবিনি। আমরা দীপকবাবুর সঙ্গে দেখা করব বলে জানাই। কিন্তু ওঁ ফোনই ধরেননি।”

এরপর গত ১৯ অগস্ট গোলাবাড়ি থানায় লিখিত অভিযোগ করেন তাঁরা। কিন্তু, পুলিশ কোনও পদক্ষেপ করেনি বলে অভিযোগ। এরপর, স্থানীয় একটি  স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা তাঁদের সাহায্য় করতে এগিয়ে আসে।  ওই সংস্থার মাধ্যমে সরাসরি হাওড়ার পুলিশ কমিশনারের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন রঞ্জিত ও  সঙ্গীতা মালি। অভিযোগ পেয়েই কমিশনার সরাসরি থানাকে নির্দেশ দেন। নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। বৃহস্পতিবার কমিশনারের নির্দেশে পদক্ষেপ করে গোলাবাড়ি থানা। যদিও অভিযুক্ত শিক্ষক পলাতক। তাঁর খোঁজ চলছে বলছে জানিয়েছে গোলাবাড়ি থানার পুলিশ। আরও পড়ুন: নিহত বিজেপি কর্মী জয়প্রকাশের মৃত্যু-মামলায় ‘অর্জুন গড়ে’ সিবিআই

 

 

 

 

 

 

Next Article