হাওড়া: পরনে ময়লা কাপড়। ব্লাউজের পিঠ ছিঁড়েছে। চুল আলুথালু। চোখেমুখে নোংরা কালো ছোপ। কোলে একটা বছর তিনেকের বাচ্চা। টাক মাথা, একটা জামা গায়ে, প্যান্ট নেই। রাস্তায় ইতঃস্তত ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন মহিলা। পাড়ার অনেকেই দেখেছেন। কেউ দু-এক পয়সা সাহায্যও করে দিচ্ছিলেন। বেলা বাড়তে দেখা যায়, ওই মহিলাই তারপর বাচ্চা কোলে বাড়ি বাড়ি ঘুরে ভিক্ষা করছেন। ছোট্ট বাচ্চাটাকে দেখে অনেকেই সহানুভূতি দেখিয়েছিলেন। কিন্তু পরে ফাঁস হল আসল রহস্য। যখন এক দোতলা বাড়ির লোক বাইরে এসে চিৎকার চেঁচামেচি করতে শুরু করেছিলেন, জানা গেল ওই মহিলার পরিচয়। ততক্ষণে অবশ্য বাচ্চা কোলে সেই মহিলা হাওয়া। সাতসকালে শিশু কোলে ভিখারি সেজে মহিলা ও তরুণী বাড়িতে ঢুকে সর্বস্ব লুঠ করে চম্পট দিল। চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে হাওড়ার দাসনগরে। অবসরপ্রাপ্ত এক কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীর বাড়িতে চুরির ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। পরিবারের দাবি, নগদ ৩০ হাজার টাকা,৩৫ থেকে ৪০ লক্ষ টাকার সোনার গয়না-সহ মোবাইল, ল্যাপটপ চুরি গিয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দাসনগরের অনাদি দাস সরণিতে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মী অনাদি হাজরার চার তলা বাড়ি রয়েছে। তাঁর বাড়িতে থাকেন স্ত্রী। দুজনেই অসুস্থ। পরিবার সূত্রে জানা যাচ্ছে, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ বাড়িতেই ছিলেন অমিত হাজরা। তাঁর স্ত্রী সরস্বতী। বার্ধক্যজনিত কারণে দু’জনেই শারীরিকভাবে দুর্বল। সেই সুযোগে চার তলা বাড়ির দোতলায় ভিখারি সেজে ঢোকেন তাঁরা।
কেন্দ্রীয় সরকারের ভাবা পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্রের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী অমিত ঘটনার পরই দাসনগর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত শুরু করেছে। অনাদি বলেন, “তিন তলার ঘর সাফাই করছিলাম। স্ত্রীও তিন তলাতেই স্নানে গিয়েছিলেন। বাড়ির সদর দরজা ভেজানো ছিল। কোলাপসিবল গেটটা ছিল টানা।” অভিযোগ, সেই সুযোগেই শিশু কোলে ওই মহিলা ও তরুণী দোতলায় শোওয়ার ঘরে ঢুকে আলনার নীচে থাকা ছোট আলমারি থেকে নগদ টাকা ও সোনার গয়না চুরি করে। বৃদ্ধ দম্পতির ছেলের বিয়ের জন্য রাখা ৪টে সোনার হার ও ২টি বালা খোয়া গিয়েছে। ওই আলমারিতে চাবি দেওয়া থাকলেও সেটি লাগানো অবস্থায় ছিল। সঙ্গে খোয়া যায় একটি মোবাইল ফোন ও অমিতের ছেলে সায়নের ল্যাপটপটিও। ঘটনার সময় অন্যান্য দিনের মতোই ছেলে সায়ন তাঁদের পারিবারিক ওষুধের দোকানে ব্যবসার কাজে গিয়েছিলেন।
অনাদি হঠাৎই দেখেন ওই মহিলা ও তরুণী তাঁদের বাড়ির ভিতর থেকে জিনিসপত্র নিয়ে ছুটে পালাচ্ছে। কিন্তু তাদের ধরতে পারেননি তাঁরা। অসুস্থ বৃদ্ধ তিন তলা থেকে তাঁদের দোতলার ঘরে ছুটে এসে দেখেন শোওয়ার ঘরের আলনা- আলমারি থেকে সব চুরি গিয়েছে। পরে জানা যায়, শুধু এই বাড়ি নয়, পাড়াতেই আরও একটি বাড়িতেও ওই দু’জন হানা দিয়েছিল। কিন্তু সেই বাড়ির কর্তারা সতর্ক হয়ে তাদের সরিয়ে দেন। এরা এক চক্রের সঙ্গেই জড়িত বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ।
এই প্রসঙ্গে হাওড়া সিটি পুলিশের এক পদস্থ আধিকারিক জানালেন, শিশু কোলে এরকম এক মহিলাকে এর আগেও চুরির অভিযোগে ধরেছিল দাশনগর থানা। পুলিশও বলছে, একটি চক্র রয়েছে। যারা ভিখারির বেসে বিভিন্ন বাড়িতে ঢুকে লুঠপাট চালায় বা ডাকাতি করে। মহিলাদের এই চক্রটি হাওড়া স্টেশন চত্বর, আন্দুল, ব্যাঁটরা বা দাশনগরের মতো এলাকায় ঘুরে বেড়ায়। এভাবে বেশ কয়েক জায়গায় চুরিও হয়েছে। চক্রটির খোঁজ পেতে তৎপর পুলিশ।