হাওড়া: নির্দেশ ছিল, যত্রতত্র অবৈধভাবে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা গঙ্গার পাড়ের হোটেল বা রেস্তোরাঁ তৈরিতে রাশ টানতে হবে। এভাবে কোনও হোটেল তৈরিতে অনুমতি দেওয়া যাবে না। বরং অনুমোদনহীন হোটেলগুলি ভেঙে ফেলতে হবে। হাওড়া স্টেশনের ঠিক বিপরীত দিকে এই হোটেলগুলি নিয়ে রাজ্য পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কড়া নিষেধাজ্ঞাও ছিল। অভিযোগ, সেই নির্দেশকে তোয়াক্কা না করে একের পর এক হোটেল বা গুমটি তৈরি করা হয়েছে।
হাওড়া স্টেশন সংলগ্ন এলাকার হোটেল ও খাবারের দোকানগুলি থেকে নির্গত অপরিশোধিত তরল বর্জ্যের জেরে ক্রমাগত দূষিত হয়ে চলেছে গঙ্গা। এমনই বিষয়ে অভিযোগ জানিয়ে মামলা দায়ের হল জাতীয় পরিবেশ আদালতে। এমনকী অভিযোগ আনা হয়েছে, নিকটবর্তী তরল বর্জ্য পরিশোধন প্লান্টের সঙ্গে সেগুলির নিকাশি ব্যবস্থারও কোনও সংযোগ নেই। অর্থাৎ, হোটেল তৈরিতে ন্যূনতম পরিবেশবিধি সেখানে মানা হচ্ছে না। স্বাভাবিকভাবেই গঙ্গা দূষণ রোধে যেখানে বারবার করে সতর্ক করা হচ্ছে, সেখানে হাওড়া স্টেশনে ঠিক সামনেই এই অবস্থায় রীতিমত ক্ষুব্ধ জাতীয় পরিবেশ আদালত।
এ ব্যাপারে রাজ্যে পৌর ও নগরোন্নয়ন দফতর এবং রাজ্য পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে রিপোর্ট আকারে গোটা বিষয়টি জানাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পর্ষদ সূত্রে খবর, করোনার থাবার আগে ওই অংশে ১০ থেকে ১২ টি ভাত খাবার হোটেল ছিল। কিন্তু পরবর্তী সময় তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩০টির কাছাকাছি। প্রতিটি হোটেলের নিকাশের পাইপ লাইন সরাসরি গঙ্গার সঙ্গে সংযুক্ত। ফলে শুধু নিত্যদিনের আবর্জনা তা নয়, তেল বা অন্যান্য যে নির্গত তরল রয়েছে সেগুলি গঙ্গায় গিয়ে মিশছে। ফলে গঙ্গার জল মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে বলে অভিযোগ পরিবেশবিদদের। যে কারণে গঙ্গায় জলজ উদ্ভিদ এবং মাছেদের ক্ষতি হচ্ছে। গঙ্গা দূষণ রোধে ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় সরকার নমামি গঙ্গে প্রকল্প চালু করে একাধিক পদক্ষেপ করেছে। সেখানে কলকাতার ঠিক বিপরীত দিকে এই বেহাল অবস্থা কেন তা নিয়ে রীতিমত ক্ষোভ প্রকাশ করেছে জাতীয় পরিবেশ আদালতের বিচারপতিদের বেঞ্চ।
এই মামলায় রাজ্য সরকার, পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর, পরিবেশ দফতর, রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ, হাওড়া পুরসভা, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বন্দর, ন্যাশনাল মিশন ফর ক্লিন গঙ্গা-সহ একাধিক পক্ষকে যুক্ত করা হয়েছে। সব পক্ষকেই আদালত আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে এ বিষয়ে নিজেদের অবস্থান জানাতে বলেছে। মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ১০ অক্টোবর।
পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত যে মামলা করেছেন, তাতে স্পষ্ট ভাষায় অভিযোগ আনা হয়েছে, ওই এলাকায় বহু হোটেল ও খাবারের দোকানের দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের অনুমোদন নেই। অনুমোদন ছাড়াই তারা অবাধে ব্যবসা করে যাচ্ছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে আদালত জানিয়েছে, কত সংখ্যক হোটেল ও দোকান পরিবেশবিধি মানছে, পর্ষদের বৈধ অনুমোদনপত্রই বা কাদের রয়েছে সে সবও রিপোর্টে উল্লেখ করতে হবে।
এই বিষয়ে কাজলকৃষ্ণ বণিক, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বলেন, “গঙ্গার আশপাশ থেকে সমস্ত ধরনের কলকারখানা-হোটেল অবস্থান করছে সেই সব হোটেলের নোংরা জল যাঁরা গঙ্গায় ফেলছেন তাদের আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের।” পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “গঙ্গাদূষণ মোটেই বরদাস্থ করা হবে না। ওই দল আমরা পান করি। ওই জল দিয়ে নগর জীবন চলে।” বিজেপি কাউন্সিলর সজল ঘোষ বলেছেন, “বেআইনি হোটেল-ভবন হয়েছে আর এই সরকার তার আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়ে একটা দেখান।”