হাওড়া: কোনও রকম সুরক্ষা ছাড়াই পরিষ্কার করতে নেমেছিলেন তেলের ট্যাঙ্ক। আর তারপরই মর্মান্তিক পরিণতি। তরতাজা যুবকের প্রাণ চলে গেল মুহূর্তেই। তেলের ট্যাঙ্কারের বিষাক্ত গ্যাস সহ্য করতে না পারার ফলেই মৃত্যু হয়েছে ওই যুবকের। হাওড়ার আন্দুলের মৌড়িগ্রামের ঘটনা। সেখানে ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন বা আইওসির পাশে তেলের ট্যাঙ্কার পরিষ্কার করতে গিয়ে বিষাক্ত গ্যাসে মৃত্যু হয়েছে ওই যুবকের। অসুস্থ আরও এক। এই দুই যুবকের মধ্যে ছিলেন একজন খালাসি ও একজন চালক। ট্যাঙ্কের মধ্যেই মারা যান খালাসি। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় চালককে কলকাতার পিজি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
মৃতের নাম সুমিত সাউ (১৯)। পরিবার সূত্রে খবর, তিন ভাইয়ের মধ্যে সুমিতই ছিলেন ছোট। তাঁর দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে পুলিশ। পাশাপাশি মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে সাঁকরাইল থানার নাজিরগঞ্জ ফাঁড়ি। পুলিশ সূত্রে খবর, রবিবার সকাল নাগাদ কোনও রকম সুরক্ষা ছাড়াই তেলের ট্যাঙ্কার পরিষ্কার করতে ঢুকেছিল সুমিত সাউ ও ট্যাঙ্কারের চালক বুবাই সাউ (৩২)। তখনই বিষাক্ত গ্যাসে দম আটকে মারা যান সুমিত। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় বুবাইকে হাসপাতালে পাঠানো হয়।
হাওড়া সিটি পুলিশের এক পদস্থ আধিকারিক জানান, পেট্রোল বা ডিজেলের মতো তেলের ট্যাঙ্কারে তেলকে ঠিক রাখার জন্য এক ধরনের গ্যাস ট্যাঙ্কারের ভালভের ভিতর রাখতে হয়। ট্যাঙ্কার পরিষ্কার করার সময় ভালভের ভিতর থেকে ওই গ্যাস বের করে দিয়ে তারপর ট্যাঙ্কের ভিতর প্রবেশ করতে হয়। কিন্তু এদিন এই দুই যুবক তা করেননি। যার কারণেই বিষাক্ত গ্যাসে দম আটকে মৃত্যু হয় এক জনের।
তদন্তে নেমে ট্যাঙ্কারের মালিককে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। এই ঘটনা প্রসঙ্গে হাওড়া সিটি পুলিশের এসিপি সাউথ (১) মাজিদ খান বললেন, “গাফিলতি নিয়ে কেউ কোনও অভিযোগ দায়ের করলে নিশ্চই তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এ দিকে মৃত যুবকের এক বন্ধু সৈকত নস্কর বললেন, “প্রথমে ট্যাঙ্কের ভিতরে পরিষ্কার করতে ঢুকেছিলেন চালক বুবাই সাউ। ভিতরে বুবাই অসুস্থ হয়ে পড়ছে দেখে বুবাইকে বাইরে বার করতে ট্যাঙ্কের ভিতরে ঢোকে সুমিত। বুবাই কোনওরকমে বাইরে বেরিয়ে এলেও সুমিতের বিষাক্ত গ্যাসে দম আটকে যায়। তাঁকে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।” শোকার্ত মৃতের বাবা দশরথ সাউ বললেন, “দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে আমার ছোট ছেলে সুমিত খালাসির কাজে নেমেছিল। ও আইওসিতে ট্রাকে মাল ওঠানো-নামানোর কাজ করতে। আজ কী যে হয়ে গেল কিছুই বুঝতে পারছি না।”