হাওড়া: রাজমিস্ত্রির কাজ করতে গিয়েছিল। কিন্তু সেই কাজ থেকে ফিরে ৬০০ টাকা চেয়েছিল রাজকুমার রব্বানি। কিন্তু, দাবি মতো টাকা মেলেনি। পেয়েছিল ৪০০ টাকা। আর এই ২০০ টাকার জন্যই হাতুড়ি দিয়ে মেরে অপর রাজমিস্ত্রিকে খুন করার অভিযোগ রাজকুমারের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছিল গত ২১ মে হাওড়ার পঞ্চাননতলার বেলিলিয়াস লেনে। মৃত রাজমিস্ত্রির নাম বাবলু সিং (৩৩)। খুনের ঘটনায় তদন্তে নেমে রাজুকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতেই হাওড়া থানার পুলিশ শিবপুরের অতীন্দ্র মুখোপাধ্যায় লেনের বাড়ি থেকে রাজকুমারকে গ্রেফতার করে। শুক্রবার তাকে হাওড়া আদালতে তোলা হলে ধৃতের ৭ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।
পুলিশ সূত্রে খবর, বাবলু সিংকে খুনের কথা কবুল করেছে রাজকুমার। তাকে জেরা করে পুলিশ জানতে পেরেছে, ২১ জুন রাজকুমারকে রাজমিস্ত্রির কাজের জন্য নিয়ে যায় বাবলু। কাজের পর রাজু টাকা চাইলে বাবলু তাকে ৪০০ টাকা দেয়। কিন্তু ৬০০ টাকা দাবি করে রাজু। বাবলু তা দিতে না চাওয়াতে দুই জনের মধ্যে বচসা শুরু হয়। বচসার মধ্যেই রাগের মাথায় রাজকুমার তার থলে থেকে হাতুড়ি বার করে বাবলুকে আঘাত করে। প্রথমে বাবলু আহত অবস্থায় লুটিয়ে পড়ে। তারপর বাবলুর চোখে মুখে জল দিয়ে জ্ঞান ফেরায় রাজু নিজেই। জ্ঞান ফিরতেই আবার বচসা। বাবলু রাজুর গলা টিপে ধরতে যায়। তখন ফের রাজু হাতুড়ি দিয়ে বার বার বাবলুর মাথায় আঘাত করে। রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ে বাবলু।
রাজুর গায়ে, জামাকাপড়ে রক্ত লেগে যায়। পুলিশ যাতে ধরতে না পারে, তাই সে পোশাক বদলে মৃত বাবলুর গা থেকে সোনার আংটি ও লকেট খুলে নিয়ে চম্পট দেয়। এরপর ঘর থেকে কিছু টাকাপয়সা নিয়ে পালিয়ে যায় সে। কিন্তু তাড়াহুড়োর মধ্যে ঘরের ভিতরেই ওই বদলানো পোশাক ও জুতো ফেলে রেখে যায় সে। আর সেই সূত্র ধরেই তদন্তে এগোয় পুলিশ।
এদিকে পুলিশের হাতে একটি সিসিটিভি ফুটেজও এসেছে। তাতে দেখা গিয়েছে, ৮৯, নম্বর আই আর বেলিলিয়াস লেনের দোতলা বাড়িটির একতলায় যে ঘরে বাবলু থাকতেন, সেই ঘরে গত ২১ মে র রাতে একাধিকবার ঢুকেছে ও বেরিয়েছে রাজকুমার। সিসিটিভি ফুটেজে এই দৃশ্য ধরা পড়তেই পুলিশ রাজকুমারকে চিহ্নিত করে। পুলিশ জানতে পারে, রাজুর বাড়ি শিবপুরের অতীন্দ্র মুখোপাধ্যায় লেনে।
এদিকে পোশাক বদলে পালানোর সময় রাজকুমার বাবলু সিংয়ের মোবাইল ফোনটিও নিয়ে যায়। সেই মোবাইলটি শিবপুরের পিএম বস্তি এলাকায় নিয়ে গিয়ে সেই রাতেই ৩টে নাগাদ সুইচড অফ করে দেওয়া হয়। মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন ট্র্যাক করে এই বিষয়টি জানতে পারে পুলিশ। এর পর আসানসোলের নিয়ামতপুরে পালিয়ে যায় রাজু। অবশেষে পুলিশের বিশেষ দল সিসিটিভি ফুটেজ দেখে, মোবাইল লোকেশন ট্র্যাক করে ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে রাজকুমারকে গ্রেফতার করে।